প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা আপনাদের জন্য শেয়ার করবো Bengali Love Poem in Bengali Font। আশাকরছি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। আর ভালো লাগলে আপনার শেয়ার করুন আপনার কাছের মানুষের সাথে। আমাদের সাথে থাকার জন্য আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ আপনাকে। চলুন শুরু করি।
Sad Love Story in Bengali – প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা আপনাদের জন্য শেয়ার করবো Sad Love Story in Bengali ও বানী। আশাকরছি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। আর ভালো লাগলে আপনার শেয়ার করুন আপনার কাছের মানুষের সাথে। আমাদের সাথে থাকার জন্য আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ আপনাকে। চলুন শুরু করি।
,
প্রতিশোধ এর বিষাক্ত ছোবল কেমন তা পড়তে যাচ্ছি ।
বধূর সাজে বিছানায় প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছি। সামান্য টুকু নড়াচড়াও করতে পারছি না। প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে হিমু আমার শরীর টা নিয়ে ওর তৃষ্ণা মিটিয়েছে। অনেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
কি নিষ্ঠুর ভাবে নিজের তৃষ্ণা মিটিয়ে বেলকনী তে গিয়ে সিগারেট খাচ্ছে। এদিকে আমার শরীর টা যে যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাচ্ছে
সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নাই।
একটুপর ও রুমে এসে আমার গালে আলতো করে হাত রেখে রাগি গলায় বললো-
-‘কি ভেবেছিলি তুই মায়া? এতো সহজেই আমি তোকে অন্য কারো বউ হতে দিবো? আজ থেকে তোর শরীর মন সব কিছু আমার। আর রায়ান? ও তো তোর ছায়াটাও খুঁজে পাবেনা। আর যখন পাবে তখন তোর মধ্যে প্রেম ভালবাসা সুখ বলতে কিছু থাকবেনা!বলেই একটা বিজয়ের হাসি দিলো।
ওর কথা শুনে আমার ভেতরটা কষ্টে ফেটে যেতে লাগলো। আমি জোরে কথা বলতেও পারছিলাম না।
তাই ফিসফিস করে ওকে বললাম-
-‘প্লিজ হিমু! তুই আমার ভালোবাসাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে দিসনা!’
-‘ভালোবাসা?’
কথাটা বলেই ও একটা ভিলেনী হাসি দিলো। তারপর শক্ত করে এক হাত দিয়ে আমার চিবুক ধরে বলল-
-‘আর একবার তোর মুখে ঐ শব্দ টা শুনলে তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো!’
ওর হিংস্র রুপ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। মুখ ফুটে আর একটা কথাও বলতে পারলাম না। ও আমার পার্শে শুয়ে ওর বুকের উপরে আমায় তুলে নিলো।
তারপর ঠোঁটে গভীরভাবে একটা কিস করে বলল-
-‘এতোদিন তুই আমায় যে কষ্ট দিয়েছিস আমি আজ থেকে তোকে তা সুদে আসলে ফেরত দিবো। মানসিক শারীরিক দুই ভাবেই।বলেই ও আমার ঘারে ওর মুখ ছোঁয়াতে লাগলো।
আমি ওর কথা শুনে কান্না করতে লাগলাম। কারন এই মুহূর্তে ওর সাথে কিছু শেয়ার করার মতো অবস্থা আমার নেই। ও আমার চোখে পানি দেখে ওর বুকের উপর থেকে আমায় নামিয়ে দিলো।তারপর চেয়ারে গিয়ে বসে আবার একটা সিগারেট ধরালো।
একটু পর আমার দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত হয়ে বলল-
-‘রায়ান কে কি কি করতে দিয়েছিলি বল? যে কারনে ওকে ভুলতে পারিসনা?’
রায়ানের সাথে আমার তিন বছরের রিলেশন। এর মধ্যে মাত্র কয়েকবার ওর সাথে দেখা করেছিলাম। কারন আমরা দুজনে দুই শহরে পড়াশোনা করতাম। আর হিমু আমার ক্লাসমেট। ওকে আমি সব সময় ফ্রেন্ডের চোখেই দেখতাম।
………… প্রতিশোধ – Sad Love Story Bangla …………
হঠাৎ হিমুর চিৎকার শুনে আমি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলাম। ও চেচিয়ে উঠে বলল-
-‘প্রেমিকের কথা শোনা মাত্রই কি তাকে নিয়ে প্রেমের সাগরে ডুবে গেলি? আমার প্রশ্নের জবাব দে। বল কি কি ওকে করতে দিয়েছিলি?’
রাগের মাথায় ও কি করতে কি করে বসে, তাই কোন কিছু না ভেবেই বলে ফেললাম-
-‘কিছুই করতে দেইনি!’
-‘তাহলে ওকে ছাড়তে পারিসনা কেনো? আমি ওর থেকে কিসে কম আছি বল? ওর থেকেও হাজার গুন বেশি তোকে ভালোবাসি। তবু তুই আমার ভালোবাসা ক্যান একসেপ্ট করিস না। বল??’
-‘আমি তোকে সবসময় ফ্রেন্ডের চোখেই দেখেছি। কখনো লাভার হিসেবে দেখিনি!’
-‘কেনো? ওর মাঝে লাভার হিসেবে কি এমন আছে যেটা আমার মাঝে নেই?’
এই উত্তর আমি ওকে কিভাবে দিবো। রায়ানের সাথে যখন আমার ছয় মাসের রিলেশন চলে তখন হিমু আমায় প্রোপোজ করে। কয়েকদিন পর ও বলে যে ও নাকি বহুদিন আগে থেকেই আমায় লাভ করতো কিন্তু বলতে পারেনি। শেষে আমি যদি ওর প্রোপোজ একসেপ্ট না করে ফ্রেন্ডশীপ টা নষ্ট করে ফেলি সেই ভয়ে।
আমি তবু কাঁপা কাঁপা গলায় ওকে বললাম-
-‘তুই যদি রায়ানের সাথে রিলেশন হওয়ার আগে আমায় প্রোপোজ করতিস তাহলে অবশ্যই আমি একসেপ্ট করতাম। কিন্তু….
ও আমায় থামিয়ে দিয়ে বলল-
-‘থাক এতো ভালো সাজতে হবেনা তোকে। যখন রায়ান অন্য মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছিলো তখন কি তুই আমায় একসেপ্ট করতে পারতিস না? তখন কেনো একসেপ্ট করিসনি?
জ্বলন্ত সিগারেট হাতের মধ্যে গুড়ো করে নিতে নিতে বলল-
-‘ কি নেই আমার মাঝে? তোকে পাওয়ার জন্য কি করিনি আমি? তবু ঐ চরিত্রহীন লম্পটের প্রতিই তোর এতো টান কেনো?’
আমি কোন উত্তর দিতে পারলাম না। ওর রাগান্বিত মুখের দিকে ভয়ে তাকাতে পারছিনা। ও চেয়ার থেকে উঠে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে আমার উপর শুয়ে বলল-
-‘নাকি ভেবেছিলি আমি তোকে সুখ দিতে পারবোনা সেইজন্য?’
ওর এতো বাজে মন্তব্যে আমার ভেতরে জ্বলে পুড়ে ছাই হতে লাগলো। আমি ওর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললাম-
-‘ছি! লজ্জা করেনা তোর এতো বাজে কথা বলতে?’
-‘ওহ আচ্ছা! এইসব কথা তোর কাছে এখন বাজে লাগছে! যখন চরিত্রহীন ছেলের সাথে রিলেশন করিস তখন তোর বাজে লাগে না?’
………… প্রতিশোধ – Sad Love Story Bangla …………
Same Age এ relation এ কিছু ঝামেলা হতে পারে। কিন্তু আত্মহত্যা কখনও সমীচীন নয়। সবাই পড়ুন।
একটি মেয়ে বাসর ঘরে থেকে তার প্রেমিকের নিকট চিঠি লিখলো …..
ভালো আছো???
আমি অনেক্ষন ধরে ফুল সাজানো একটি ঘরে বসে আছি!!
পুরো খাটটা গোলাপ ফুল
দিয়ে সাজানো, ওরা হয়তো জানেনা আমার গোলাপ ভালো লাগেনা …
ঘরটাতে নিঃশব্দে এসি চলছে ..
পুরো দমবন্ধ একটা পরিবেশ,
আজ আমার বিয়ের ১ম রাত
যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে আমার চেয়ে গুনে গুনে ১৭বছর বড়।
খুব বড়লোক বোধহয়
বাসার অবস্হা দেখে তাই মনে হচ্ছে।
আমাকে ওরা প্রচন্ডভাবে সাজিয়েছে! পুরো শরীর জুড়ে আমার ভারী ভারী অলংকার।
তুমি ঠিক এই মুহূর্তে কোথায়? নিশ্চয় তোমাদের বাসার ঐ মোড়ে বসে আছো ..??
আচ্ছা তুমি কি খুব কষ্ট আছো?
মনে আছে,???
আমরা কতদিন ধরে
এই রাতটা নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম? কত পরিকল্পনা করতাম এই রাতটা নিয়ে .
মনে আছে?
আমি কিন্তুু বারবার বলতাম বেশি স্বপ্ন দেখোনা .
দেখবে পূরন হবে না।
আর ঠিক তখনি তুমি আমার ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে.
বলতে “তুমি আমাকে নিশ্চয় ভালোবাসোনা নাহয় স্বপ্ন ভাঙ্গার কথা বলতেনা ..”
সবই ঠিকঠাক ভাবে আছে
ওরা কিন্তুু আমাকে তোমার মনের মতোই সাজিয়েছে ..
তুমি চেয়েছিলে এইদিন আমার চেয়েও সুন্দর আর কাউকে লাগবেনা ….
সত্যি আমাকে আজ অনেক বেশি সুন্দর লাগছে ..
তুমি চেয়েছিলে আমার মুখ দেখে আজকের রাত কাটিয়ে দিতে … আমিও চেয়েছিলাম ..
তবে চাইলেই সব হয়না বাস্তব বড় কঠিন!
আমি বালিশের নীচে কুৎসিত একটা প্যাকেট পেয়েছি ..
আর হয়তো কোনোদিন কোনো স্বপ্ন
হাতছানি দিবেনা
তুমি কিন্তুু একদম ভেঙ্গে পড়বানা ..সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে!!
তুমি কিন্তু খুব ফুটফুটে একটা মেয়েকে বিয়ে করবে ..তাকে নিয়ে সুখে থাকবে আমায় যত টুকু ভালোবাসতে তাকে কিন্তু আমার থেকে বেশি ভালোবাসতে হবে,,,,,,
আর বিয়ের দিন একদমি আমার কথা ভাববেনা ..
তাকে নিয়ে জোছনা দেখবে … রোজ ঘুরতে যাবে,,,,,
আচ্ছা ঘুম থেকে সকালে তাড়াতাড়ি উঠবে..
এলার্ম ঘড়ির দায়িত্ব তো অনেকদিন আমি নিলাম .. আর কতো বলো ..
আর সবসময় চুল আচড়াবে ..আমি হাত দিয়ে ঠিক করে দিবো এই আশায় আবার বসে থেকো না ..!,,,তুমি খুব ভালো দেখো তোমার কপালে আমার থেকেও অনেক ভালো মেয়ে জুটবে,সে তোমায় খুব খুব বেশি ভালোবাসবে কারণ তুমি খুব ভালো
আর হ্যা লাস্ট একটা কথা তুমি আমায় বলেছিলে আমি তোমায় ভালোবাসি কি না?
ভালোবাসি কি না সেটা জানি না,,
তোমায় ছারা আমি বাঁচবোনা,,
তোমায় একদিন না দেখলে কথা না বললে ভালো লাগে না,
একে যদি ভালোবাসা বলে তাহলে তোমায় খুব বেশি ভালো বাসি,,,,
তোমার সাথে বেশি রাগ করি কেনো জানো?
আমি রাগ করলে তোমার ভালোবাসা বেশি পাই তাই এমনি তেই রাগ করি,
একটু রাগ করলে তুমি কত কিছু করো তাই প্রতিদিন রাগ করি,
তোমায় খুব ভালোবাসি তাই তোমার সাথে রাগ করি.
আর দেখি তুমি আমায় কত টুকু ভালোবাসো।
একই বয়সের ভালোবাসা সফল হতে ভাগ্য লাগে তোমার বা আমার সে ভাগ্য নেই আমার জন্য চিন্তা করোনা নিজের খেয়াল রেখো সব সব সব কাজ ঠিক মত করো হয়তো এই কথা আমার তোমার সাথে শেষ বলা ( আমি তোমায় ছারা আর কাউকে নিয়ে বাচঁতে পারবো না এই জনমে না পেলে অন্য জনমে পাবো )খোদা হাফেজ এই বলে মেয়েটি আত্যোহত্যা করলো কিন্তু আফসোস চিঠিটা ছেলেটির কাছে পৌছালো না কারণ মেয়েটির বিয়ে হওয়ার খবর শুনে ছেলেটি আগেই মারা গেছে, ,
তবে আত্ম হত্যা কোন সমস্যার সমাধান নয়। নিজের ভাললাগা/ভালবাসাকে পাবার জন্য আরও অনেক বিকল্প আছে।
বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প টি লিখেছেন শুভাশিস রায় । গল্পটি খুবই চমৎকার । আমি এই রকম অনেক গল্প পরেছি । কিন্তু এই গল্প টা সত্যি অন্যান্ন গল্পের চেয়ে একটু বেশী ভালো লেগেছে । তাই আপনাদের সাথেও শেয়ার করলাম ।
তৃণার ঘুম মনে হয় এতোক্ষণে আরো গভীর হয়ে গেছে। আমি ঘরে ঢুকে দেখেছিলাম খাটের কোনায় মাথা এলিয়ে দিয়ে ঘুমোচ্ছে। গা ভর্তি ভারী গহনা, বেনারশী শাড়িটার ভারও কম না। মাথায় একটা বিশাল ওড়নার ঘোমটা। আমি আর ঘরে ঢুকিনি। দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে চিলেকোঠার ঘরটাতে এসে বসলাম। তৃণা ঘুমাক৷ আমি চাঁদ দেখি। বাতাস খাই আশ্বিন, কার্তিক কিংবা অগ্রহায়ণ মাসের।
দুহাতে বাতাসটা আড়াল করে একটা সিগারেট ধরিয়ে কয়েকটা ধোঁয়ার রিং ছাড়লাম। ঠিক তখনই নুপুরের আওয়াজ টা কানে এলো। তৃণা ছাদে উঠে এসেছে। এভাবে চারটা শব্দে যত সহজে বললাম, একজন নতুন বউ এর বাসর রাতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে ছাদে চলে আসাটা ঠিক ততটাই কঠিন। যদিও বাড়ির সবাই এখন ঘুমে। তাও যদি কেউ দেখে ফেলে তা খুব একটা শোভনীয় ব্যাপার হবে না।
আমি বিষ্ময় যথাসম্ভব লুকিয়ে বললাম, ” আপনি এখানে! ঘুম ভেঙে গেলো? ”
” হুম, ঘরটা বড্ড গুমোট, এতো গরম লাগছিলো, তাই একটু… ” তৃণা অযুহাত দেয়ার চেষ্টা করে। অথচ সে যে ঘরের কথা বলছে সে ঘরে আমি আমার জীবনের প্রায় ২৫ বছর কাটিয়েছি। যথেষ্ট খোলামেলা আমার ঘর। জানালা খুলে দিলে প্রচুর বাতাস আসে। ফ্যানের কোনো সমস্যা নেই। বিয়ের কিছুদিন আগে মায়ের জোরাজুরিতে এসিও লাগিয়েছি। তাই তৃণার এ কথায় আমি কিছু বললাম না, শুধু মুচকি হাসলাম।
” আরে না। অসুবিধা কি! এমনি একটু এসেছিলাম। এসে দেখি বিশাল এক চাঁদ উঠেছে আকাশে। সুকান্তর ঝলসানো রুটির মতো। হা হা হা। আসুন, ওখানে বসি৷”
ছাদের একটা জায়গায় একটা বেঞ্চের মতো করা। আমি সেখানে গিয়ে বসলাম। তৃণাও আমার পাশে গিয়ে বসলো। আমাদের পারিবারিক বিয়ে, চেনা পরিচয় খুব বেশি হয় নি। আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পর মা খুব জোরাজোরি শুরু করলেন বিয়ের জন্য। নানাভাবে নানা উপায়ে বিয়ের কথা বলতে লাগলেন। শেষমেশ বাধ্য হয়েই রাজি হতে হলো। অনুরোধে ঢেঁকি গেলা বলতে যাকে বোঝায় ঠিক তাই। তৃণার সাথে একদিন রেস্টুরেন্টে দেখা করেছিলাম, সেও মায়ের চাপাচাপি তেই।
তৃণা আমার পাশে বসে চুপ করে রইলো৷ আমিও আর নিজে থেকে কিছু বললাম না৷ আকাশের দিকে মুখ ফেরালাম। হাজার হাজার তারার মধ্যে একটা তারাকে খুব বেশি উজ্জ্বল বলে মনে হয়। আমেরিকাতে থাকতে রাতের বেলাতে ওটার দিকেই তাকিয়ে থাকিয়ে ভাবতাম ওটাই নীরা। নীরার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো চার বছরের। আমেরিকাতে ডক্টরেট করতে যাওয়ার আগেই আমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। আমি দেশে ফিরলেই বিয়ে। কিন্তু নীরাকে বোধহয় আমার চেয়ে সৃষ্টিকর্তার বেশি প্রয়োজন ছিলো। হঠাৎ এক রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেলো। আমি চৌদ্দ হাজার মাইল দূর থেকে শুধু চোখের পানি ফেললাম। এছাড়া আর কি ই বা করার ছিলো আমার!
বাতাসে আরো জোরে বইছে। এখন একটু শীতের মতো লাগছে। তৃণার আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে। অচেতনে কিংবা হয়তো সচেতনেই মাথা রেখেছে আমার কাঁধে। আমি একটু ক্ষীণ স্বরে বললাম, ” তৃণা, এটা বাংলা কি মাস জানেন? ”
তৃণা বোধ হয় একবারেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো না। আমার প্রশ্ন শুনতে পেলো। বললো, ” না তো। ”
” তাহলে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আপনার বিয়ে বাংলা কোন মাসে হয়েছিলো, কি বলবেন? ”
এক রাজার দুই রানী, দুও আর সুও। রাজবাড়িতে সুওরানীর বড়ো আদর, বড়ো যত্ন। সুওরানী সাতমহল বাড়িতে থাকেন। সাতশো দাসী তাঁর সেবা করে, পা ধোয়ায়, আলতা পরায়, চুল বাঁধে। সাত মালঞ্চের সাত সাজি ফুল, সেই ফুলে সুওরানী মালা গাঁথেন। সাত সিন্দুক-ভরা সাত-রাজার-ধন মানিকের গহনা, সেই গহনা অঙ্গে পরেন। সুওরানী রাজার প্রাণ।
আর দুওরানী— বড়োরানী, তাঁর বড়ো অনাদর, বড়ো অযত্ন। রাজা বিষ নয়নে দেখেন। একখানি ঘর দিয়েছেন— ভাঙাচোরা, এক দাসী দিয়েছেন— বোবা-কালা। পরতে দিয়েছেন জীর্ণ শাড়ি, শুতে দিয়েছেন— ছেঁড়া কাঁথা। দুওরানীর ঘরে রাজা একটি দিন আসেন, একবার বসেন, একটি কথা কয়ে উঠে যান।
সুওরানী— ছোটোরানী, তারই ঘরে রাজা বারোমাস থাকেন।
একদিন রাজা রাজমন্ত্রীকে ডেকে বললেন— মন্ত্রী, দেশবিদেশ বেড়াতে যাব, তুমি জাহাজ সাজাও।
রাজার আজ্ঞায় রাজমন্ত্রী জাহাজ সাজাতে গেলেন। সাতখানা জাহাজ সাজাতে সাত মাস গেল। ছ’খানা জাহাজে রাজার চাকরবাকর যাবে, আর সোনার চাঁদোয়া-ঢাকা সোনার জাহাজে রাজা নিজে যাবেন।
মন্ত্রী এসে খবর দিলেন— মহারাজ, জাহাজ প্রস্তুত।
রাজা বললেন— কাল যাব।
মন্ত্রী ঘরে গেলেন।
ছোটোরানী— সুওরানী রাজ-অন্তঃপুরে সোনার পালঙ্কে শুয়েছিলেন, সাত সখী সেবা করছিল, রাজা সেখানে গেলেন। সোনার পালঙ্কে মাথার শিয়রে বসে আদরের ছোটোরানীকে বললেন— রানী, দেশ-বিদেশ বেড়াতে যাব, তোমার জন্য কী আনব?
রানী ননীর হাতে হীরের চুড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললেন— হীরের রঙ বড়ো শাদা, হাত যেন শুধু দেখায়। রক্তের মতে রাঙা আট-আট গাছ মানিকের চুড়ি পাই তো পরি।
রাজা বললেন— আচ্ছা রানী, মানিকের দেশ থেকে মানিকের চুড়ি আনব।
রানী রাঙা পা নাচিয়ে নাচিয়ে, পায়ের নূপুর বাজিয়ে বাজিয়ে বললেন— এ নূপুর ভালো বাজে না। আগুনের বরন নিরেট সোনার দশ গাছা মল পাই তো পরি।
রাজা বললেন— সোনার দেশ থেকে তোমার পায়ের সোনার মল আনব।
রানী গলার গজমতি হার দেখিয়ে বললেন— দেখ রাজা, এ মুক্তো বড়ো ছোটো, শুনেছি কোন দেশে পায়রার ডিমের মতো মুক্তো আছে, তারি একছড়া হার এনো।
রাজা বললেন— সাগরের মাঝে মুক্তোর রাজ্য, সেখান থেকে গলার হার আনব। আর কী আনব রানী?
তখন আদরিনী সুওরানী সোনার অঙ্গে সোনার আঁচল টেনে বললেন— মা গো, শাড়ি নয় তো বোঝা! আকাশের মতো নীল, বাতাসের মতো ফুরফুরে, জলের মতো চিকন শাড়ি পাই তো পরে বাঁচি।
রাজা বললেন— আহা, আহা, তাই তো রানী, সোনার আঁচলে সোনার অঙ্গে ছড় লেগেছে, ননীর দেহে ব্যথা বেজেছে। রানী, হাসিমুখে বিদায় দাও, আকাশের মতো নীল, বাতাসের মতো ফুরফুরে, জলের মতো চিকন শাড়ি আনিগে।
ছোটোরানী হাসিমুখে রাজাকে বিদায় করলেন।
রাজা বিদায় হয়ে জাহাজে চড়বেন— মনে পড়ল দুখিনী বড়োরানীকে।
দুওরানী— বড়োরানী, ভাঙা ঘরে ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে কাঁদছেন, রাজা সেখানে এলেন।
ভাঙা ঘরের ভাঙা দুয়ারে দাঁড়িয়ে বললেন— বড়োরানী, আমি বিদেশ যাব। ছোটোরানীর জন্যে হাতের বালা, গলার মালা, পায়ের মল, পরনের শাড়ি আনব। তোমার জন্যে কী আনব? বলে দাও যদি কিছু সাধ থাকে।
রানী বললেন— মহারাজ, ভালোয় ভালোয় তুমি ঘরে এলেই আমার সকল সাধ পূর্ণ হয়। তুমি যখন আমার ছিলে তখন আমার সোহাগও অনেক ছিল, সাধও অনেক ছিল। সোনার শাড়ি অঙ্গে পরে সাতমহল বাড়িতে হাজার হাজার আলো জ্বালিয়ে সাতশো সখীর মাঝে রানী হয়ে বসবার সাধ ছিল, সোনার পিঞ্জরে শুক-শারীর পায়ে সোনার নূপুর পরিয়ে দেবার সাধ ছিল। মহারাজ, অনেক সাধ ছিল, অনেক সাধ মিটেছে। এখন আর সোনার গহনায় সোনার শাড়িতে কী কাজ? মহারাজ, আমি কার সোহাগে হীরের বালা হাতে পরব? মোতির মালা গলায় দেব? মানিকের সিঁথি মাথায় বাঁধব? মহাবাজ, সেদিন কি আর আছে! তুমি সোনার গহনা দেবে, সে সোহাগ তো ফিরে দেবে না! আমার সে সাতশো দাসী সাতমহল বাড়ি তো ফিরে দেবে না! বনের পাখি এনে দেবে, কিন্তু, মহারাজ, সোনার খাঁচা তো দেবে না! ভাঙা ঘরে সোনার গহনা চোর-ডাকাতে লুটে নেবে, ভাঙা খাঁচায় বনের পাখি কেন ধরা দেবে? মহারাজ, তুমি যাও, যাকে সোহাগ দিয়েছ তার সাধ মেটাও গে, ছাই সাধে আমার কাজ নেই।
রাজা বললেন— না রানী, তা হবে না, লোকে শুনলে নিন্দে করবে। বল তোমার কী সাধ?
রানী বললেন— কোন লাজে গহনার কথা মুখে আনব? মহারাজ, আমার জন্যে পোড়ারমুখ একটা বাঁদর এনো।
রাজা বললেন— আচ্ছা রানী, বিদায় দাও।
তখন বড়োরানী— দুওরানী ছেঁড়া কাঁথায় লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে রাজাকে বিদায় দিলেন। রাজা গিয়ে জাহাজে চড়লেন।
সন্ধ্যাবেলা সোনার জাহাজ সোনার পাল মেলে অগাধ সাগরের নীল জল কেটে সোনার মেঘের মতো পশ্চিম মুখে ভেসে গেল।
ভাঙা ঘরে দুওরানী নীল সাগরের পারে চেয়ে, ছেঁড়া কাঁথায় পড়ে রইলেন। আর আদরিনী সুওরানী সাতমহল অন্তঃপুরে, সাতশো সখীর মাঝে, গহনার কথা ভাবতে ভাবতে, সোনার পিঞ্জরে সোনার পাখির গান শুনতে শুনতে, সোনার পালঙ্কে ঘুমিয়ে পড়লেন।
রাজাও জাহাজে চড়ে দুঃখিনী বড়োরানীকে ভুলে গেলেন। বিদায়ের দিনে ছোটোরানীর সেই হাসিহাসি মুখ মনে পড়ে আর ভাবেন— এখন রানী কী করছেন? বোধ হয় চুল বাঁধছেন। এবার রানী কী করছেন? বুঝি রাঙা পায়ে আলতা পরছেন। এবার রানী সাত মালঞ্চে ফুল তুলছেন, এবার বুঝি সাত মালঞ্চের সাত সাজি ফুলে রানী মালা গাঁথছেন আর আমার কথা ভাবছেন। ভাবতে ভাবতে বুঝি দুই চক্ষে জল এল, মালা আর গাঁথা হল না। সোনার সুতো, ফুলের সাজি পায়ের কাছে পড়ে রইল; বসে বসে সারা রাত কেটে গেল, রানীর চোখে ঘুম এল না।
সুওরানী— ছোটোরানী রাজার আদরিনী, রাজা তারই কথা ভাবেন। আর বড়োরানী রাজার জন্যে পাগল, তার কথা একবার মনেও পড়ে না।
এমনি করে জাহাজে দেশ-বিদেশে রাজার বারো-মাস কেটে গেল।
তেরো মাসে রাজার জাহাজ মানিকের দেশে এল।
মানিকের দেশে সকলই মানিক। ঘরের দেওয়াল মানিক, ঘাটের শান মানিক, পথের কাঁকর মানিক। রাজ সেই মানিকের দেশে সুয়োরানীর চুড়ি গড়ালেন। আট হাজার মানিকের আটগাছি চুড়ি, পরলে মনে হয় গায়ের রক্ত ফুটে পড়ছে।
রাজা সেই মানিকের চুড়ি নিয়ে, সোনার দেশে এলেন। সেই সোনার দেশে স্যাক্রার দোকানে নিরেট সোনার দশগাছা মল গড়ালেন। মল জ্বলতে লাগল যেন আগুনের ফিন্কি, বাজতে লাগল যেন বীণার ঝংকার— মন্দিরার রিনি-রিনি।
রাজা মানিকের দেশে মানিকের চুড়ি নিয়ে, সোনার দেশে সোনার মল গড়িয়ে, মুক্তোর রাজ্যে এলেন।
সে দেশে রাজার বাগানে দুটি পায়রা। তাদের মুক্তোর পা, মানিকের ঠোঁট, পান্নার গাছে মুক্তোর ফল খেয়ে মুক্তোর ডিম পাড়ে। দেশের রানী সন্ধ্যাবেলা সেই মুক্তোর মালা গাঁথেন, রাতের বেলায় খোঁপায় পরেন, সকাল বেলায় ফেলে দেন।
ছেলে শ্বশুরবাড়ী যাবে।
বুদ্ধিশুদ্ধি একটু কম তাই মা তাকে ভাল করে শিখিয়ে দিল।
বলল, তোর শ্বশুরের অসুখ তাই আগে তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবি কেমন আছেন।
উনি হয়তো বলবেন ভাল। তখন বলবি এইটাই তো আমাদের কাম্য।
তারপর তিনি কি পথ্য করছেন জানতে চাইবি।
তিনি কিছু একটা বলবেন, তুই তখন বলবি অতি উপাদেয় পখ্য, রোজ খেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন আসা করি।
তারপর জিজ্ঞেস করবি কোন ডাক্তার তার চিকিৎসা করছেন।
ডাক্তারের নাম শুনে বলতে পারবি তো, “দারুন ডাক্তার, খুব তারাতাড়ি ভাল হয়ে যাবেন !”
আর সব সময় হাসি, হাসি মুখ করে থাকবি কেমন।
মা নেওটা ছেলে ঘাড় নেড়ে বেরিয়ে পড়ল।
শ্বশুর মশাই রোগের জ্বালায় বিছানায় শুয়ে ছটফট করছেন।
জামাই ঘরে ঢূকে, হাসতে,হাসতে জিজ্ঞেস করল,কেমন আছেন বাবা ?
শ্বশুরঃ- আর বাঁচার ইচ্ছা নেই, এবার মরলেই বাঁচি।
জামাইঃ- এটাই তো আমাদের কাম্য। তা কি পথ্য করছেন এখন আপনি ?
শ্বশুরঃ- (চটে গিয়ে) ঘোড়ার ডিম।
জামাইঃ- বাঃ,বাঃ,অতি উপাদেয় পথ্য,রোজ খেয়ে যান ভাল হয়ে যাবেন আসা করি। আবার হাঁসতে-হাঁসতে তা ইয়ে কোন ডাক্তারকে দেখাচ্ছেন?
শ্বশুরঃ- (আরও চটে) যম।
জামাইঃ- খুব ভাল ডাক্তার, বেশ নাম করা ডাক্তার, আপনি কিছুদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে উঠবেন।
হাসির গল্প বন্ধু কে নিয়ে
একটি চা-এর দোকানে বসে কিছু অলস লোক আড্ডা মারতেছে। এক জন অন্য জনকে গুল মারে (অর্থাৎ মিথ্যা বলে) , বসে থাকা বাকি লোক জন শুনে। দোকান দারের কোন সমস্যা নাই বরং লাভ, দুই একটা চা বিক্রি করতে পারবে। এতো প্যাঁচাল করে সময় নষ্ট করে লাভ কি আসল কথাই আসি। প্রথম জন বলেঃ আমার দাদার একটা কুত্তা (কুকুর) ছিল। মানুষের মত কথা বলতো আর গরুর মত ঘাস খেত!!!!!
দ্বিতীয় জনে বলেঃ আরে রাখ। তোর দাদার কুত্তার ছেয়ে আমার নানার বিড়াল ছিল বড় ডিয়ারিং। পাড়ার যত কুত্তা ছিল, সব কুত্তার গায়ে একবার হলেও ওঠেছে!!!!! ওদের গুল মারা দেখে তৃতীয় জন মনে মনে বলে তোরা যদি গুলবাজ তো আমিও গুলের রাজা। তৃতীয় জনে বলেঃ তুদের কথা শেষ হলে আমার কথা শুন। আমি বাজারে গিয়ে শুনলাম। একটি বড় বিমানকে বাসে ধাক্কা মেরে নিছে পেলে দিছে। মানুষ জন মরে নাই কিন্তু পাশে একটি কুত্তা ও বিড়াল মরা পাওয়া গেছে???
মজার কিছু হাসির গল্প
এক কৃষকের ছিল একটি গাধা ও একটি গরু। কৃষক বোঝা আনা-নেওয়া ও চলাচলের বাহন হিসেবে গাধাকে ব্যবহার করতো আর গরু দিয়ে হালচাষ করতো। গম ও ধান মাড়াইয়ের কাজেও গরুকে ব্যবহার করা হতো।
একদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একনাগাড়ে কাজ করে গরু যখন ঘরে ফিরলো তখন অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে ক্লান্ত হয়ে একা একাই বিড়বিড় করে কী যেন বলছিল। গরুকে বিড়বিড় করতে দেখে গাধা বললো :
গাধা : আরে বাবা, হয়েছে কী? বিড়বিড় করে কি বলছো?
গরু : তোরা গাধার দল আমাদের দুঃখ-কষ্টের কি বুঝবি ? আমাদের দুঃখ-কষ্ট কেউ বুঝেনারে, কেউ বুঝে না।
গাধা : বুঝবো না কেন, অবশ্যই বুঝবো। তাছাড়া তুই যেমন বোঝা টানিস আমরাও তেমনি বোঝা টানি। আমাদের মধ্যে তফাৎটা কোথায় দেখলি!
গরু : তফাৎ অবশ্যই আছে। গাধাকে বোঝা টানা ছাড়া আর কোনো কাছে ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু জমি চাষ করা, ফসল মাড়াই করা, কলুর ঘানি টানা এসব কষ্টের কাজ আমাদের করতে হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর ব্যথা-বেদনায় সারারাত চোখে ঘুম আসে না। তোদের কি এত কষ্ট করতে হয়?
গরুর কষ্টের কথা শুনে গাধার মনটা খারাপ হয়ে গেল। গরুকে কষ্ট থেকে রেহাই দেয়ার জন্য সে একটা বুদ্ধি বের করলো। এরপর গরুকে উদ্দেশ্য করে বললো :
গাধা : তুই যদি চাস তাহলে আমি এমন একটা বুদ্ধি দিতে পারি যাতে তোকে আর মাঠে যেতে হবে না।
গরু : গাধার মাথায় আবার বুদ্ধি আছে নাকি ? না না তোর বুদ্ধি অনুযায়ী চলতে গেলে আমার বিপদ আরো বাড়বে।
গাধা :শোন্ ! মানুষ আমাদেরকে যত গাধা মনে করে আমরা কিন্তু আসলে তত গাধা নই। আর এ জন্যইতো আমাদেরকে হালচাষ ও ঘানি টানার কাছে কেউ লাগাতে পারে না। তুই একবার আমার কথা অনুযায়ী কাজ কর,তাহলে দেখবি তুইও আমার মতো সুখে আছিস।
গরু : ঠিকাছে বল দেখি, তোর বুদ্ধিটা কি ?
এরপর গাধা গরুকে অসুস্থ হবার ভান করতে পরামর্শ দিলো। গরু নিজেকে বাঁচানোর জন্য গাধার পরামর্শ অনুযায়ী হাত-পা সোজা করে ঘরে শুয়ে রইল এবং হাম্বা হাম্বা রবে ‘উহ্ আহ্’ করতে লাগলো। কৃষক এসে উঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। তখন বাধ্য হয়ে গোয়াল থেকে বের এলো এবং অন্য কোন উপায় বের করার জন্য চিন্তা করতে লাগলো।
কৃষক চলে যাওয়ার পর গরু গাধাকে ধন্যবাদ দিল। ধন্যবাদ পেয়ে গাধাও খুশীতে নেচে উঠলো। কিন্তু গাধার খুশী বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। কিছুক্ষণ পরই কৃষক গোয়াল ঘরে ফিরে এলো এবং গরুর বদলে গাধাকেই মাঠে নিয়ে গেল। গাধার কাঁধে লাঙ্গল-জোয়াল বেঁধে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা জমি চাষ করার পর কৃষক কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেয়ার জন্য একটি গাছের ছায়ায় বসলো। এ সময় গাধা মনে মনে ভাবতে লাগলো :
গাধা : গরুকে বাঁচাতে গিয়ে আমি নিজেই বিপদে পড়ে গেলাম! সত্যি সত্যিই আমি একটা গাধা। তা না হলে এমন বোকামী কেউ করে?
এসব ভাবার পর নিজেকে বাঁচানোর জন্য গাধা চিন্তা করতে লাগলো। হঠাৎ সে গরুকে দেয়া বুদ্ধিটিই কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিল। সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী গাধা জমিতে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো এবং কান ফাটা চিৎকার দিয়ে আকাশ-বাতাস ভারী করে তুললো।
চিৎকার শুনে কৃষক গাধার কাছে এলো। এরপর তাকে মাটি থেকে উঠানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুতেই উঠাতে পারলো না। এরপর কৃষক তার লাঠি দিয়ে গাধাকে বেদম পেটাতে শুরু করলো। পেটাতে পেটাতে কৃষক বললো :
কৃষক : মুর্খ কোথাকার! দেখতেই পাচ্ছিস, গরুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এরপরও সব জেনে শুনে তুই কুড়েমি শুরু করেছিস!তোর দুধ কোন কাজে আসে না, গোশতেও কোন ফায়দা নেই। তারপরও ভেবেছিস তোকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো? আজ যদি কাজ না করিস তাহলে তোকে মেরেই ফেলব।
গাধা দেখল অবস্থা বিপজ্জনক। তাই সোজা হয়ে দাঁড়ালো। প্রথম দিকে বিরক্তির সাথে এবং ধীরে ধীরে মনোযোগ দিয়ে কাজে লেগে গেল। কাজ করার সময় গাধা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো- যেভাবেই হোক আজ রাতে গরুকে কৌশলে পটাতে হবে যাতে কাল সকালে মাঠে যায়।
যাই হোক, সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে বাড়ীতে ফিরল গাধা। বাড়ী ফিরেই সোজা গিয়ে ঢুকলো গোয়াল ঘরে। গাধাকে দেখেই গরু নড়েচড়ে বসল। এরপর বললো:
গরু: মাঠ থেকে এলি নাকি? এবার নিশ্চয়ই দেখেছিস, কি কঠিন কাজইনা আমাদের করতে হয়!
গাধা : না না, মোটেই কঠিন নয়। আমার তো মনে হয়, খুবই আরামদায়ক এবং সোজা কাজ এটি। কিন্তু অন্য একটি বিষয়ে আমার মনটা ভীষণ খারাপ। তোকে বললে তুইও কষ্ট পাবি।
গরু : হাল চাষের চেয়েও কষ্টের কিছু আছে নাকি? ঠিকাছে খুলেই বল, কষ্ট পাবো না।
গাধা : ব্যাপারটা তেমন কিছু না। আজ দুপুরে যখন মাঠে কাজ করছিলাম, তখন মালিক তার এক বন্ধুকে বলছিল, আমার গরুটা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে । মনে হয় বাঁচবে না। তাই ঠিক করলাম, কাল যদি ভাল না হয় তাহলে জবাই করে ফেলবো।
এ কথা শুনে গরু ভয়ে কাঁপতে লাগলো। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল :
গরু : তুই সত্যি বলছিস তো! যদি তাই হয় তাহলে কাল থেকেই কাজে লেগে পরতে হবে। মরার চেয়ে কাজ করে খাওয়া অনেক ভাল। তোর মত গাধার বুদ্ধিতে চলতে গিয়েই তো আমার সামনে বিপদ এসে হাজির হয়েছে। আর কোনদিন আমি তোর কথা শুনবো না।
গাধা: তোরে বুদ্ধি দিয়ে তো আমিও কম শাস্তি পেলাম না। আমি তোর উপকার করতে গেলাম আর তুই কিনা আমাকে দোষ দিচ্ছিস! গরুর দল বড়ই অকৃতজ্ঞ।
এভাবে কথা কাটাকাটির মধ্যদিয়ে রাত পোহালো। পরদিন সকালে কৃষক এসে গরুকে ধাক্কা দিতেই সে লাফিয়ে উঠলো। তখন গরু আর গাধাকে নিয়ে সে মাঠের দিকে রওনা হলো। যাওয়ার সময় কৃষক তার ছেলেকে ডেকে বললো :
কৃষক : তুই আরেকটি লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে আয়। গাধাকেও আজ থেকে গরুর পিছু পিছু হাল চাষে কাজে লাগাবি! আর শোন, আরেকটা মোটা লাঠিও নিয়ে আসিস। গাধা আবার ছংবং করতে পারে।
★★ বল্টুর বাপ বেহুস ★★
বাবাঃ আমার জন্য একটা ড্রিঙ্কস নিয়ে আসো তো দোকান থেকে ।
.
বল্টুঃ বাবা ঠাণ্ডা নাকি গরম ?
.
বাবাঃ ঠাণ্ডা অফকোর্স !
.
বল্টুঃ বাবা পেপ্সি নাকি কোক ?
.
বাবাঃ পেপ্সি
.
বল্টুঃ বাবা বোতলের নাকি টিনের ?
.
বাবাঃ বোতলের ,
.
বল্টুঃ বড় বোতল নাকি ছোট বোতল ?
.
বাবাঃ ছোট বোতল ,
.
বল্টুঃ আচ্ছা বাবা নরমাল নাকি ডায়েট ?
.
বাবাঃ ধুরু , লাগবে না যা পানি নিয়ে আস একটা ,
.
বল্টুঃ বাবা ঠাণ্ডা নাকি গরম ?
.
বাবাঃ অফকোর্স ঠাণ্ডা ,
.
বল্টুঃ বাবা খাওয়ার পানি নাকি ইয়ুজ করার জন্য ?
.
বাবাঃ মাইর খাবি এখন !!
.
বল্টুঃ বাবা হাত দিয়ে নাকি লাঠি দিয়ে ?
.
বাবাঃ বেশি কথা বলস, যা ভাগ সামনে থেকে ,
.
বল্টুঃ বাবা দৌড় দিয়ে ভাগব না হেটে হেটে ?
.
বাবাঃ বেয়াদব , দিন দিন জানোয়ার হইতাসস !
.
বল্টুঃ কোন জানোয়ার ? কুত্তা নাকি বিলাই ?
.
বাবাঃ আমি এখন তোরে জবাই করবো ,যা বলসি !!
.
বল্টুঃ বাবা চাকু দিয়ে নাকি বটি দিয়ে ?
.
বাবাঃ বটি দিয়ে !!
.
বল্টুঃ টুকরা টুকরা নাকি বড় বড় পিস ?
.
বাবাঃ হারামি তুই যাবি ??
.
বল্টুঃ বাবা একলা যাব নাকি তোমার সাথে যাব ?
.
বাবাঃ তোর উপর থাডা পরুক !
.
বল্টুঃ বাবা ভুমিকম্প নাকি বজ্রপাত ?
.
বাবাঃ ওহ খোদা আমার হার্ট এ পেইন হচ্ছে !.
.
বল্টুঃ বাবা হসপিটাল এ নিয়ে যাব নাকি ডক্টর ডাকব ??
.
বাবাঃ পানি দে আমাকে
.
বল্টুঃ বাবা ঠাণ্ডা নাকি গরম ?
.
বাবাঃ নরমাল
.
বল্টুঃ বাবা খাবে নাকি ইয়ুজ করবে ??
😆 বল্টুর বাপ বেহুস
★*খুব ধীরে ধীরে পড়*★
*নিশ্চয় হাসি পাবে*
*1*
*2*
*3*
*4*
*5 টা কথা আপনার* *ব্যপারে বলছি* *You you you you you*
*1 আপনি এত অলস যে সব you গুলি পড়েননি*
*2 আপনি এটাও দেখেননি যে ওখানের you গুলোর
মধ্যে একটা yoo লেখা আছে*
*3 আমি বললাম তাই আপনি yoo দেখতে গেলেন*
*4এখন আপনি হাসছেন কারণ আপনি yoo দেখতে
পেলেননা এবং আপনি কেমন পাগলামি করলেন*
*5আমি আপনার ব্যপারে আরও 13 টা কথা জানি*
*1 আপনি এই সময় আপনার মোবাইল হাতে ধরে
আছেন*
*2আর আপনি Facebook ব্যাবহার করছেন* *3আপনি একটু আগেই আমার massage টা open
করেছেন*
*4এখন আপনি পড়া শুরু করে দিয়েছেন* *5আপনি মনুষ্য*
*7আপনি আপনার 2 টা ঠোঁট না ঠেকিয়ে P বলতে
পারবেননা*
*8আপনি নিশ্চই ওটা করার চেষ্টা করলেন*
*9এখন আপনি নিজের উপরেই হাসছেন* *10এই সময় আপনার মুখে খুবই হাসি ফুটছে* *11আপনি 6 no. Point ছেড়েই দিলেন* *12এখন আপনি 6 no. Point টা চেক করলেন আর
খুঁজেই পেলেননা*
*13এখন আপনি খুবই হাসছেন কারণ আমি আপনাকে
boka বানালাম*
আর বোকা বানানোর জন্য sorry\\\\? একটা ছোট্ট #পেজ নিয়ে হাজির হয়েছি
এতো মজার #পেজ আর পাবেন না ..আপনার একটা #লাইক
আমাদের পেজকে অনেক #শক্তিশালী করবে .
ভালো লাগলে #লাইক দিতে ভুলবেন না যেন ★
★★★ বাবা: বলটু তুমি কাকে বেশি ভালবাসো???
,,,,,মা, না, বাবাকে???
:
:
বলটু : দুই জনকেই!!!
:
:
বাবা: না যেকোন এক জনের নাম বলতে হবে??
:
বলটু: না আমি দুই জনকেই ভাল বাসি!!!
:
:
বাবা: আচ্ছা ধরো আমি যুক্তরাষ্ট্রে গেলাম আর তোমার “মা’”প্যারিসে!!!!
:
:
তুমি কার সাথে যাবে???
:
বলটু: মা?
:
:
বাবা: তার মানে তুমি মা কে বেশি ভালবাস!!!
:
বলটু: নাহ??
:
:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্যারিস সুন্দর??
:
:
বাবা: আচ্ছা ধরো তোমার “মা “যুক্তরাষ্ট্রে আর আমি প্যারিসে
:
তা হলে কার সাথে যাবে?
:
:
বলটু: “মা”??
:
বাবা: এখন প্যারিসে যাবেনা কেন???
:
:
:
:
;
বলটু: প্যারিসে তো একবার মায়ের সাথে গেলাম 😜 😜 😜
★★★বল্টুর প্রেমিকা নতুন আইডি খুলছে
ফেসবুকে
ঢুকেই বল্টু
নক করলো।
.
প্রেমিকা: এই তুমি কি কর জানু?
.
বল্টু: কিছু না।
.
প্রেমিকা: এই শোনো ১টা স্টাটাস
দিবো?
.
বল্টু : দিয়ে ফেলো।
.
প্রেমিকা: আচ্ছা ফেসবুকে
স্টাটাস দেওয়ার সময় দেখি সবাই
ফিলিংস দেয়…..!!!
ওটা কিভাবে দেয়????
.
বল্টু : মরে যাও।
.
প্রেমিকা: মানে?
.
বল্টু: আরে মরে যাও।
.
প্রেমিকা: কি বলতে চাচ্ছ
তুমি ????
.
: আরে বাবা মরে যাও।
মরে গেলে সব পাবা।
.
__প্রেমিকা: তুই যে ১টা গাদা
এটা
আমি আগে যানতাম না।
.
__প্রেমিক:অবাক হয়ে সেকিগো
জানু, আমি আবার কি করলাম __???
.
প্রেমিকা: তুই এতোক্ষন
কি বলছিলি আমাকে?
.
বল্টু: কেনো মরে যেতে
বলেছি। মরে গেলে সব পাবা।
.
প্রেমিকা: তুই ১টা গাদা বলদ
তোর সাথে রিলেসন করায় আমার ভুল
হয়েছে,
আমারে মরতে বলিস কেন আমি
বুঝিনা?
আমি মরলে নতুন প্রেমিকা পাবি
তাইনা?
.
বল্টু: আরে বোকা তোমারে
মরতে কইনাই তো
more অপশনে যাইতে কইছি।।।
ওই অপশনে গেলেই ফিলিংস
দিয়ে
স্টাটাস দিতে পারবা।
.
প্রেমিকা: সরি জান, আমি মনে
করছি তুমি আমাকে মরতে কইছো…….
হা হা হা…
★★★ দুই মাতাল এমন মদ খেয়েছে, ঠিকমতো হাঁটতেই পারছে না। তো এক বিল্ডিং দেখে এক মাতাল আরেক মাতালকে বলে কি, দেখ, কতো সুন্দর ওই বিল্ডিংটা! চল, ওটাকে ঠেলে আমাদের বাসায় নিয়ে যাই। তো দুই মাতাল মিলে সমানে বিল্ডিংটাকে ঠেলতে লাগলো। একটু পরেই পরিশ্রমে ওদের শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরতে লাগলো। তখন ওরা ওদের জামা খুলে আবার সমানে বিল্ডিংটাকে ঠেলতে লাগলো।
একটু পর এক চোর ব্যাপার-স্যাপার দেখে পিছন থেকে ওদের জামা নিয়ে চুপচাপ সরে পড়লো। একটু পর প্রথম মাতাল ওদের জামাগুলো নাই দেখে আরেক মাতালকে বললো-
: কিরে, আমাদের জামা গেলো কৈ?
: আরে, আমরা তো বিল্ডিংটাকে ঠেলতে ঠেলতে অনেক দূরে নিয়ে এসেছি না!
: তাহলে চল, জামা দুটো নিয়ে আসি। নইলে আবার চোরে চুরি করে নেবে।
: কিন্তু বিল্ডিংটা যতো সুন্দর! চোর যদি বিল্ডিংটাই চুরি করে নিয়ে যায়?
: আচ্ছা, তাহলে এক কাজ করা যাক। বিল্ডিংটা নিয়েই চল!
এবার দুই মাতাল মিলে বিল্ডিংটাকে উল্টো দিকে ঠেলতে লাগলো!
★★★ মফিজ’ বেকার লোক। অনেকদিন ধরে চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছে, কিন্ত হচ্ছেনা।
এক অফিসে ইন্টারভিউ দিতে এসে পরিচিত ‘কুদ্দুস’ এর দেখা পেল।
ঘটনাক্রমে তারা দুজনেই ওয়েটিং রুমে অপেক্ষারত। প্রথমে ইন্টারভিউ রুমে কুদ্দুস………
প্রশ্ন ১: মিস্টার কুদ্দুস, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল কখন বলতে পারেন ?
কুদ্দুস: স্যার, হওয়ার কথা ছিল ১৯৫২ সালে, কিন্তূ হয়েছে ১৯৭১ সালে। ‘
প্রশ্ন ২: বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবির নাম বলুন ?
কুদ্দুস: অনেকেই তো আছেন, নিদ্রিষ্ট করে কার নাম বলবো স্যার ?
প্রশ্ন ৩: ঢাকা শহরে যানজটের কারণ কি বলে আপনি মনে করেন ?
কুদ্দুস: এটাতো স্যার গবেষণার বিষয়।
কুদ্দুস ইন্টারভিউ শেষে চলে যাবার সময় মফিজ জানতে চাইলো কি কি প্রশ্ন করা হয়েছে।
কুদ্দুস অন্য কোথাও যাবে তাই তিনটা প্রশ্নের উওর মফিজকে বলে তাড়াতাড়ি চলে গেল। প্রশ্ন গুলো বলা হলো না।
এবার ইন্টারভিউ রুমে মফিজ………
প্রশ্ন ১: মিষ্টার মফিজ, আপনার জন্ম কত সালে ?
মফিজ: হওয়ার কথা ছিল ১৯৫২ সালে, কিন্তূ হয়েছি ১৯৭১ সালে।
প্রশ্ন ২: প্রশ্নকর্তা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো আপনার পিতার নাম কি ?
মফিজ: অনেকেই তো আছেন, নিদ্রিষ্ট করে কার নাম বলবো স্যার ?
প্রশ্ন ৩: প্রশ্নকর্তা রেগে আপনার মাথা ঠিক আছে ?
মফিজ: এটাতো স্যার গবেষণার বিষয়।
★★★ বল্টু শহরে থাকে। তার
বউ সখিনা থাকে গ্রামে। বল্টুরই বন্ধু আবুল।
.
.
বল্টু একদিন সখিনার জন্য “শাড়ি” কিনে পাঠালো আবুলের মাধ্যমে। :
:
প্যাকেট খোলা দেখে সখিনা বুঝতে পারলো আবুল
শাড়ির প্যাকেট
খুলে দেখেছে।
.
.
.
কিছুদিন পর আবার
বল্টু সখিনার জন্য “ব্লাউজ” কিনে পাঠালো আবুলের মাধ্যমেই। আবারো প্যাকেট খোলা দেখে সখিনা বুঝতে পারলো আবুল প্যাকেট খুলে
দেখেছে।
.
.
বেশ কিছুদিন পর আবার
বল্টু সখিনার জন্য প্যাকেট “দুধ” কিনে পাঠালো ঐ আবুলের মাধ্যমেই। :
:
এবার সখিনা প্যাকেট হাতে নিয়ে দেখে প্যাকেট তো খোলা এর উপর আবার প্যাকেটে অর্ধেক দুধ নাই।
.
.
তাই সখিনা রাগে- দুঃখে বল্টুকে চিঠি লিখলো। চিঠিতে যা লিখলো
.
.
.
. .
.
শোন তোমার বন্ধু ঐ
আবুইল্যা একটা জানোয়ার !! সে প্রথমে আমার শাড়ি খুলছে, আমি কিছু বলি নাই। আবার ব্লাউজ খুলছে তারপরেও
তোমারে কিছু কই নাই !!.
.
এখন সে আমার অর্ধেক দু* খাইয়া ফালাইছে! কিছু একটা কর…. .
.
.
চিঠি পড়ার পর বল্টু তো পুরাই বেহুঁশ…
বালকদিগের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় চট করিয়া একটা নূতন ভাবােদয় হইল; নদীর ধারে একটা প্রকাণ্ড শালকাষ্ঠ মাস্তুলে রূপান্তরিত হইবার প্রতীক্ষায় পড়িয়া ছিল; স্থির হইল, সেটা সকলে মিলিয়া গড়াইয়া লইয়া যাইবে।
যে ব্যক্তির কাঠ আবশ্যক-কালে তাহার যে কতখানি বিস্ময় বিরক্তি এবং অসুবিধা বােধ হইবে, তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমােদন করিল।
কোমর বাঁধিয়া সকলেই যখন মনােযােগের সহিত কার্যে প্রবৃত্ত হইবার উপক্রম করিতেছে এমন সময়ে ফটিকের কনিষ্ঠ মাখনলাল গম্ভীরভাবে সেই গুঁড়ির উপরে গিয়া বসিল; ছেলেরা তাহার এইরূপ উদার ঔদাসীন্য দেখিয়া কিছু বিমর্ষ হইয়া গেল।
একজন আসিয়া ভয়ে ভয়ে তাহাকে একটু-আধটু ঠেলিল, কিন্তু সে তাহাতে কিছুমাত্র বিচলিত হইল না; এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী মানব সকল প্রকার ক্রীড়ার অসারতা সম্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল।
ফটিক আসিয়া আস্ফালন করিয়া কহিল, “দেখ, মার খাবি। এইবেলা ওঠ্।”
সে তাহাতে আরও একটু নড়িয়াচড়িয়া আসনটি বেশ স্থায়ীরূপে দখল করিয়া লইল।
এরূপ স্থলে সাধারণের নিকট রাজসম্মান রক্ষা করিতে হইলে অবাধ্য ভ্রাতার গণ্ডদেশে অনতিবিলম্বে এক চড় কষাইয়া দেওয়া ফটিকের কর্তব্য ছিল— সাহস হইল না। কিন্তু, এমন একটা ভাব ধারণ করিল, যেন ইচ্ছা করিলেই এখনি উহাকে রীতিমতো শাসন করিয়া দিতে পারে, কিন্তু করিল না; কারণ, পূর্বাপেক্ষা আর-একটা ভালাে খেলা মাথায় উদয় হইয়াছে, তাহাতে আর-একটু বেশি মজা আছে। প্রস্তাব করিল, মাখনকে সুদ্ধ ওই কাঠ গড়াইতে আরম্ভ করা যাক।
মাখন মনে করিল, ইহাতে তাহার গৌরব আছে; কিন্তু, অন্যান্য পার্থিব গৌরবের ন্যায় ইহার আনুষঙ্গিক যে বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাহা তাহার কিম্বা আর-কাহারও মনে উদয় হয় নাই।
ছেলেরা কোমর বাঁধিয়া ঠেলিতে আরম্ভ করিল— ‘মারে ঠেলা হেঁইয়াে, সাবাস জোয়ান হেঁইয়াে।’ গুড়ি এক পাক ঘুরিতে না-ঘুরিতেই মাখন তাহার গাম্ভীর্য গৌরব এবং তত্ত্বজ্ঞান -সমেত ভূমিসাৎ হইয়া গেল।
খেলার আরম্ভেই এইরূপ আশাতীত ফললাভ করিয়া অন্যান্য বালকেরা বিশেষ হৃষ্ট হইয়া উঠিল, কিন্তু ফটিক কিছু শশব্যস্ত হইল। মাখন তৎক্ষণাৎ ভূমিশয্যা ছাড়িয়া ফটিকের উপরে গিয়া পড়িল, একেবারে অন্ধভাবে মারিতে লাগিল। তাহার নাকে মুখে আঁচড় কাটিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে গৃহাভিমুখে গমন করিল। খেলা ভাঙিয়া গেল।
ফটিক গােটাকতক কাশ উৎপাটন করিয়া লইয়া একটা অর্ধনিমগ্ন নৌকার গলুইয়ের উপরে চড়িয়া বসিয়া চুপচাপ করিয়া কাশের গােড়া চিবাইতে লাগিল।
এমন সময় একটা বিদেশী নৌকা ঘাটে আসিয়া লাগিল। একটি অর্ধবয়সী ভদ্রলােক কাঁচা গোঁফ এবং পাকা চুল লইয়া বাহির হইয়া আসিলেন। বালককে জিজ্ঞাসা করিলেন, “চক্রবর্তীদের বাড়ি কোথায়।”
বালক ডাঁটা চিবাইতে চিবাইতে কহিল, “ওই হােত্থা।” কিন্তু কোন্ দিকে যে নির্দেশ করিল, কাহারও বুঝিবার সাধ্য রহিল না।
ভদ্রলােকটি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোথা।”
সে বলিল, “জানি নে ?” বলিয়া পূর্ববৎ তৃণমূল হইতে রসগ্রহণে প্রবৃত্ত হইল। বাবুটি তখন অন্য লােকের সাহায্য অবলম্বন করিয়া চক্রবর্তীদের গৃহের সন্ধানে চলিলেন।
অবিলম্বে বাঘা বাগ্দি আসিয়া কহিল, “ফটিকদাদা, মা ডাকছে।”
ফটিক কহিল, “যাব না।”
বাঘা তাহাকে বলপূর্বক আড়কোলা করিয়া তুলিয়া লইয়া গেল; ফটিক নিষ্ফল আক্রোশে হাত পা ছুড়িতে লাগিল।
ফটিককে দেখিবামাত্র তাহার মা অগ্নিমূর্তি হইয়া কহিলেন, “আবার তুই মাখনকে মেরেছিস।”
ফটিক কহিল, “না, মারি নি।
“ফের মিথ্যে কথা বলছিস।”
কখ্খনাে মারি নি। মাখনকে জিজ্ঞাসা করো।”
মাখনকে প্রশ্ন করাতে মাখন আপনার পূর্ব নালিসের সমর্থন করিয়া বলিল, “হাঁ, মেরেছে।”
তখন আর ফটিকের সহ্য হইল না। দ্রুত গিয়া মাখনকে এক সশব্দ চড় কষাইয়া দিয়া কহিল, “ফের মিথ্যে কথা!”
মা মাখনের পক্ষ লইয়া ফটিককে সবেগে নাড়া দিয়া তাহার পৃষ্ঠে দুটা-তিনটা প্রবল চপেটাঘাত করিলেন। ফটিক মাকে ঠেলিয়া দিল।
মা চীৎকার করিয়া কহিলেন, “অ্যাঁ, তুই আমার গায়ে হাত তুলিস!”
এমন সময়ে সেই কাঁচাপাকা বাবুটি ঘরে ঢুকিয়া বলিলেন, “কী হচ্ছে তােমাদের।”
ফটিকের মা বিস্ময়ে আনন্দে অভিভূত হইয়া কহিলেন, “ওমা, এ যে দাদা, তুমি কবে এলে।” বলিয়া গড় করিয়া প্রণাম করিলেন।
বহু দিন হইল দাদা পশ্চিমে কাজ করিতে গিয়াছিলেন। ইতিমধ্যে ফটিকের মার দুই সন্তান হইয়াছে, তাহারা অনেকটা বাড়িয়া উঠিয়াছে, তাহার স্বামীর মৃত্যু হইয়াছে, কিন্তু একবারও দাদার সাক্ষাৎ পায় নাই। আজ বহুকাল পরে দেশে ফিরিয়া আসিয়া বিশ্বম্ভরবাবু তাঁহার ভগিনীকে দেখিতে আসিয়াছেন।
কিছুদিন খুব সমারােহে গেল। অবশেষে বিদায় লইবার দুই-একদিন পূর্বে বিশ্বম্ভরবাবু তাঁহার ভগিনীকে ছেলেদের পড়াশুনা এবং মানসিক উন্নতি সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলেন। উত্তরে ফটিকের অবাধ্য উচ্ছৃঙ্খলতা, পাঠে অমনােযােগ, এবং মাখনের সুশান্ত সুশীলতা ও বিদ্যানুরাগের বিবরণ শুনিলেন।
তাঁহার ভগিনী কহিলেন, “ফটিক আমার হাড় জ্বালাতন করিয়াছে।”
শুনিয়া বিশ্বম্ভর প্রস্তাব করিলেন, তিনি ফটিককে কলিকাতায় লইয়া গিয়া নিজের কাছে রাখিয়া শিক্ষা দিবেন।
বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন।
ফটিককে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন রে ফটিক, মামার সঙ্গে কলকাতায় যাবি?”
ফটিক লাফাইয়া উঠিয়া বলিল, “যাব।”
যদিও ফটিককে বিদায় করিতে তাহার মায়ের আপত্তি ছিল না, কারণ তাঁহার মনে সর্বদাই আশঙ্কা ছিল- কোন্ দিন সে মাখনকে জলেই ফেলিয়া দেয় কি মাথাই ফাটায়, কি কী একটা দুর্ঘটনা ঘটায়, তথাপি ফটিকের বিদায়গ্রহণের জন্য এতাদৃশ আগ্রহ দেখিয়া তিনি ঈষৎ ক্ষুন্ন হইলেন।
‘কবে যাবে’ ‘কখন যাবে’ করিয়া ফটিক তাহার মামাকে অস্থির করিয়া তুলিল; উৎসাহে তাহার রাত্রে নিদ্রা হয় না।
অবশেষে যাত্রাকালে আনন্দের ঔদার্য-বশত তাহার ছিপ ঘুড়ি লাটাই সমস্ত মাখনকে পুত্রপৌত্রাদিক্রমে ভােগদখল করিবার পুরা অধিকার দিয়া গেল।
কলিকাতায় মামার বাড়ি পৌঁছিয়া প্রথমত মামীর সঙ্গে আলাপ হইল। মামী এই অনাবশ্যক পরিবারবৃদ্ধিতে মনে-মনে যে বিশেষ সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন তাহা বলিতে পারি না। তাঁহার নিজের তিনটি ছেলে লইয়া তিনি নিজের নিয়মে ঘরকন্না পাতিয়া বসিয়া আছেন, ইহার মধ্যে সহসা একটি তেরাে বৎসরের অপরিচিত অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ছেলে ছাড়িয়া দিলে কিরূপ একটা বিপ্লবের সম্ভাবনা উপস্থিত হয়। বিশ্বম্ভরের এত বয়স হইল, তবু কিছুমাত্র যদি জ্ঞানকাণ্ড আছে।
বিশেষত, তেরাে-চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতাে পৃথিবীতে এমন বালাই আর নাই। শােভাও নাই, কোনাে কাজেও লাগে না। স্নেহও উদ্রেক করে না, তাহার সঙ্গসুখও বিশেষ প্রার্থনীয় নহে। তাহার মুখে আধাে-আধাে কথাও ন্যাকামি, পাকা কথাও জ্যাঠামি এবং কথামাত্রই প্রগল্ভতা। হঠাৎ কাপড়চোপড়ের পরিমাণ রক্ষা না করিয়া বেমানানরূপে বাড়িয়া উঠে; লােকে সেটা তাহার একটা কুশ্রী স্পর্ধাস্বরূপ জ্ঞান করে। তাহার শৈশবের লালিত্য এবং কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা সহসা চলিয়া যায়; লােকে সেজন্য তাহাকে মনে মনে অপরাধ না দিয়া থাকিতে পারে না। শৈশব এবং যৌবনের অনেক দোষ মাপ করা যায়, কিন্তু এই সময়ের কোনাে স্বাভাবিক অনিবার্য ত্রুটিও যেন অসহ্য বােধ হয়।
সেও সর্বদা মনে-মনে বুঝিতে পারে, পৃথিবীর কোথাও সে ঠিক খাপ খাইতেছে না; এইজন্য আপনার অস্তিত্ব সম্বন্ধে সর্বদা লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী হইয়া থাকে। অথচ, এই বয়সেই স্নেহের জন্য কিঞ্চিৎ অতিরিক্ত কাতরতা মনে জন্মায়। এই সময়ে যদি সে কোনাে সহৃদয় ব্যক্তির নিকট হইতে স্নেহ কিম্বা সখ্য লাভ করিতে পারে তবে তাহার নিকট আত্মবিক্রীত হইয়া থাকে। কিন্তু তাহাকে স্নেহ করিতে কেহ সাহস করে না; কারণ সেটা সাধারণে প্রশ্রয় বলিয়া মনে করে। সুতরাং তাহার চেহারা এবং ভাবখানা অনেকটা প্রভুহীন পথের কুকুরের মতাে হইয়া যায়।
অতএব, এমন অবস্থায় মাতৃভবন ছাড়া আর-কোনাে অপরিচিত স্থান বালকের পক্ষে নরক। চারি দিকের স্নেহশূন্য বিরাগ তাহাকে পদে পদে কাটার মতাে বিধেঁ। এই বয়সে সাধারণত নারীজাতিকে কোনো-এক শ্রেষ্ঠ স্বর্গলােকের দুর্লভ জীব বলিয়া মনে ধারণা হইতে আরম্ভ হয়, অতএব তাঁহাদের নিকট হইতে উপেক্ষা অত্যন্ত দুঃসহ বােধহয়।
মামীর স্নেহহীন চক্ষে সে যে একটা দুর্গ্রহের মতাে প্রতিভাত হইতেছে, এইটে ফটিকের সব চেয়ে বাজিত। মামী যদি দৈবাৎ তাহাকে কোনাে-একটা কাজ করিতে বলিতেন তাহা হইলে সে মনের আনন্দে যতটা আবশ্যক তার চেয়ে বেশি কাজ করিয়া ফেলিত— অবশেষে মামী যখন তাহার উৎসাহ দমন করিয়া বলিতেন, “ঢের হয়েছে, ঢের হয়েছে। ওতে আর তােমায় হাত দিতে হবে না। এখন তুমি নিজের কাজে মন দাও গে। একটু পড়াে গে যাও”—তখন তাহার মানসিক উন্নতির প্রতি মামীর এতটা যত্নবাহুল্য তাহার অত্যন্ত নিষ্ঠুর অবিচার বলিয়া মনে হইত।
ঘরের মধ্যে এইরূপ অনাদর, ইহার পর আবার হাঁফ ছাড়িবার জায়গা ছিল না । দেয়ালের মধ্যে আটকা পড়িয়া কেবলই তাহার সেই গ্রামের কথা মনে পড়িত।
প্রকাণ্ড একটা ধাউস ঘুড়ি লইয়া বোঁ বোঁ শব্দে উড়াইয়া বেড়াইবার সেই মাঠ, ‘তাইরে নাইরে নাইরে না’ করিয়া উচ্চৈঃস্বরে স্বরচিত রাগিণী আলাপ করিয়া অকর্মণ্যভাবে ঘুরিয়া বেড়াইবার সেই নদীতীর, দিনের মধ্যে যখন-তখন ঝাঁপ দিয়া পড়িয়া সাঁতার কাটিবার সেই সংকীর্ণ স্রোতস্বিনী, সেই-সব দল-বল উপদ্রব স্বাধীনতা, এবং সর্বোপরি সেই অত্যাচারিণী অবিচারিণী মা অহর্নিশি তাহার নিরুপায় চিত্তকে আকর্ষণ করিত।
জন্তুর মতাে একপ্রকার অবুঝ ভালােবাসা কেবল একটা কাছে যাইবার অন্ধ ইচ্ছা, কেবল একটা না দেখিয়া অব্যক্ত ব্যাকুলতা, গােধূলিসময়ের মাতৃহীন বৎসের মতো কেবল একটা আন্তরিক ‘মা, মা’ ক্রন্দন- সেই লজ্জিত শঙ্কিত শীর্ণ দীর্ঘ অসুন্দর বালকের অন্তরে কেবলই আলােড়িত হইত।
স্কুলে এতবড়ো নির্বোধ এবং অমনােযােগী বালক আর ছিল না। একটা কথা জিজ্ঞাসা করিলে সে হা করিয়া চাহিয়া থাকিত। মাস্টার যখন মার আরম্ভ করিত তখন ভারক্লান্ত গর্দভের মতাে নীরবে সহ্য করিত। ছেলেদের যখন খেলিবার ছুটি হইত তখন জানালার কাছে দাড়াইয়া দূরের বাড়িগুলার ছাদ নিরীক্ষণ করিত; যখন সেই দ্বিপ্রহর-রৌদ্রে কোনো-একটা ছাদে দুটিএকটি ছেলেমেয়ে কিছু-একটা খেলার ছলে ক্ষণেকের জন্য দেখা দিয়া যাইত তখন তাহার চিত্ত অধীর হইয়া উঠিত।
এক দিন অনেক প্রতিজ্ঞা করিয়া অনেক সাহসে মামাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, “মামা, মার কাছে কবে যাব।” মামা বলিয়াছিলেন, “স্কুলের ছুটি হােক।”কার্তিক মাসে পূজার ছুটি, সে এখনাে ঢের দেরি।
এক দিন ফটিক তাহার স্কুলের বই হারাইয়া ফেলিল। একে তো সহজেই পড়া তৈরি হয় না, তাহার পর বই হারাইয়া একেবারে নাচার হইয়া পড়িল। মাস্টার প্রতি দিন তাহাকে অত্যন্ত মারধাের অপমান করিতে আরম্ভ করিলেন। স্কুলে তাহার এমন অবস্থা হইল যে, তাহার মামাতাে ভাইরা তাহার সহিত সম্বন্ধ স্বীকার করিতে লজ্জা বােধ করিত। ইহার কোনাে অপমানে তাহারা অন্যান্য বালকের চেয়েও যেন বলপূর্বক বেশি করিয়া আমােদ প্রকাশ করিত।
অসহ্য বােধ হওয়াতে একদিন ‘ফটিক তাহার মামীর কাছে নিতান্ত ‘অপরাধীর মতাে গিয়া কহিল, “বই হারিয়ে ফেলেছি।”
মামী অধরের দুই প্রান্তে বিরক্তির রেখা অঙ্কিত করিয়া বলিলেন, “বেশ করেছ! আমি তােমাকে মাসের মধ্যে পাঁচবার করে বই কিনে দিতে পারি নে।”
ফটিক আর-কিছু না বলিয়া চলিয়া আসিল— সে যে পরের পয়সা নষ্ট করিতেছে, এই মনে করিয়া তাহার মায়ের উপর অত্যন্ত অভিমান উপস্থিত হইল; নিজের হীনতা এবং দৈন্য তাহাকে মাটির সহিত মিশাইয়া ফেলিল।
স্কুল হইতে ফিরিয়া সেই রাত্রে তাহার মাথাব্যথা করিতে লাগিল এবং গা সির্ সির্ করিয়া আসিল। বুঝিতে পারিল, তাহার জ্বর আসিতেছে। বুঝিতে পারিল, ব্যামাে বাধাইলে তাহার মামীর প্রতি অত্যন্ত অনর্থক উপদ্রব করা হইবে। মামী এই ব্যামোটাকে যে কিরূপ একটা অকারণ অনাবশ্যক জ্বালাতনের স্বরূপ দেখিবে তাহা সে স্পষ্ট উপলব্ধি করিতে পারিল। রােগের সময় এই অকর্মণ্য অদ্ভুত নির্বোধ বালক পৃথিবীতে নিজের মা ছাড়া আর কাহারও কাছে সেবা পাইতে পারে, এরূপ প্রত্যাশা করিতে তাহার লজ্জা বােধ হইতে লাগিল।
পরদিন প্রাতঃকালে ফটিককে আর দেখা গেল না। চতুর্দিকে প্রতিবেশীদের ঘরে খোঁজ করিয়া তাহার কোনাে সন্ধান পাওয়া গেল না।
সেদিন আবার রাত্রি হইতে মুষলধারে শ্রাবণের বৃষ্টি পড়িতেছে। সুতরাং তাহার খোঁজ করিতে লােকজনকে অনর্থক অনেক ভিজিতে হইল। অবশেষে কোথাও না পাইয়া বিশ্বম্ভরবাবু পুলিসে খবর দিলেন।
সমস্ত দিনের পর সন্ধ্যার সময় একটা গাড়ি আসিয়া বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়ির সম্মুখে দাঁড়াইল। তখনাে ঝুপ্ ঝুপ্ করিয়া অবিশ্রাম বৃষ্টি পড়িতেছে, রাস্তায় এক-হাঁটু জল দাঁড়াইয়া গিয়াছে।
দুইজন পুলিশের লােক গাড়ি হইতে ফটিককে ধরাধরি করিয়া নামাইয়া বিশ্বম্ভরবাবুর নিকট উপস্থিত করিল। তাহার আপাদমস্তক ভিজা, সর্বাঙ্গে কাদা, মুখ চক্ষু লােহিতবর্ণ, থর থর করিয়া কাঁপিতেছে। বিশ্বম্ভরবাবু প্রায় কোলে করিয়া তাহাকে অন্তঃপুরে লইয়া গেলেন।
মামী তাহাকে দেখিয়াই বলিয়া উঠিলেন, “কেন বাপু, পরের ছেলেকে নিয়ে কেন এ কর্মভােগ। দাও ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দাও।” বাস্তবিক, সমস্ত দিন দুশ্চিন্তায় তাঁহার ভালােরূপ আহারাদি হয় নাই এবং নিজের ছেলেদের সহিতও নাহক অনেক খিট্মিট্ করিয়াছেন।
ফটিক কাঁদিয়া উঠিয়া কহিল, “আমি মার কাছে যাচ্ছিলুম, আমাকে ফিরিয়ে এনেছে।”
বালকের জ্বর অত্যন্ত বাড়িয়া উঠিল। সমস্ত রাত্রি প্রলাপ বকিতে লাগিল। বিশ্বম্ভরবাবু চিকিৎসক লইয়া আসিলেন।
ফটিক তাঁহার রক্তবর্ণ চক্ষু একবার উন্মীলিত করিয়া কড়িকাঠের দিকে হতবুদ্ধিভাবে তাকাইয়া কহিল, “মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি।”
বিশ্বম্ভরবাবু রুমালে চোখ মুছিয়া সস্নেহে ফটিকের শীর্ণ তপ্ত হাতখানি হাতের উপর তুলিয়া লইয়া তাহার কাছে আসিয়া বসিলেন।
ফটিক আবার বিড় বিড়, করিয়া বকিতে লাগিল; বলিল, “মা, আমাকে মারিস নে, মা। সত্যি বলছি, আমি কোনো দোষ করি নি।”
পরদিন দিনের বেলা কিছুক্ষণের জন্য সচেতন হইয়া ফটিক কাহার প্রত্যাশায় ফ্যাল্ফ্যাল্ করিয়া ঘরের চারি দিকে চাহিল। নিরাশ হইয়া আবার নীরবে দেয়ালের দিকে মুখ করিয়া পাশ ফিরিয়া শুইল।
বিশ্বম্ভরবাবু তাহার মনের ভাব বুঝিয়া তাহার কানের কাছে মুখ নত করিয়া মৃদুস্বরে কহিলেন, “ফটিক, তাের মাকে আনতে পাঠিয়েছি।”
তাহার পরদিনও কাটিয়া গেল। ডাক্তার চিন্তিত বিমর্ষ মুখে জানাইলেন, অবস্থা বড়ােই খারাপ।
বিশ্বম্ভরবাবু স্তিমিত প্রদীপে রোগশয্যায় বসিয়া প্রতি মুহূর্তেই ফটিকের মাতার জন্য প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন।
ফটিক খালাসিদের মতাে সুর করিয়া করিয়া বলিতে লাগিল, “এক বাও মেলে না। দো বাও মেলে—এ-এ না।” কলিকাতায় আসিবার সময় কতকটা রাস্তা স্টীমারে আসিতে হইয়াছিল, খালাসিরা কাছি ফেলিয়া সুর করিয়া জল মাপিত; ফটিক প্রলাপে তাহাদেরই অনুকরণে করুণস্বরে জল মাপিতেছে এবং যে অকুল সমুদ্রে যাত্রা করিতেছে, বালক রশি ফেলিয়া কোথাও তাহার তল পাইতেছে না।
এমন সময়ে ফটিকের মাতা ঝড়ের মতো ঘরে প্রবেশ করিয়াই উচ্চকলরবে শােক করিতে লাগিলেন। বিশ্বম্ভর বহুকষ্টে তাঁহার শােকোচ্ছাস নিবৃত্ত করিলে, তিনি শয্যার উপর আছাড় খাইয়া পড়িয়া উচ্চৈঃস্বরে ডাকিলেন, “ফটিক। সােনা! মানিক আমার!”
ফটিক যেন অতি সহজেই তাহার উত্তর দিয়া কহিল, “অ্যাঁ।”
মা আবার ডাকিলেন, “ওরে ফটিক, বাপধন রে।”
ফটিক আস্তে আস্তে পাশ ফিরিয়া কাহাকেও লক্ষ্য না করিয়া মৃদু স্বরে কহিল, “মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”
সেদ্ধ মিষ্টি আলুর কয়েক টুকরো পেটে জামিন দেয় ওসমান। ভাতের অভাবে অন্য কিছু দিয়ে উদরপূর্তির নাম চাষী-মজুরের ভাষায় পেটে জামিন দেয়া। চাল যখন দুর্মূল্য তখন এ ছাড়া উপায় কি?ওসমান হুঁক্কা নিয়ে বসে। মাজু বিবি নিয়ে আসে রয়নার তেলের বোতল। হাতের তেলোয় ঢেলে সে স্বামীর পিঠে মালিশ করতে শুরু করে।ছ’ বছরের মেয়ে টুনি জিজ্ঞেস করে—এই তেল মালিশ করলে কি অয় মা?—পানিতে কামড়াতে পারে না। উত্তর দেয় মাজু বিবি।—পানিতে কামড়ায়! পানির কি দাঁত আছে নি?—আছে না আবার। ওসমান হাসে। —দাঁত না থাকলে কামড়ায় ক্যামনে?টুনি হয়তো বিশ্বাস করত। কিন্তু মাজু বিবি বুঝিয়ে দেয় মেয়েকে—ঘাস-লতা-পাতা, কচু-ঘেঁচু পইচ্যা বিলের পানি খারাপ অইয়া যায়। অই পানি গতরে লাগলে কুটকুট করে। ওরেই কয় পানিতে কামড়ায়।
ওসমান হুঁক্কা রেখে হাঁক দেয়,—কই গেলি তোতা? তামুকের ডিব্বা আর আগুনের মালশা লইয়া নায় যা। আমি আইতে আছি।তেল নিয়ে এবার ওসমান নিজেই শুরু করে। পা থেকে গলা পর্যন্ত ভালো করে মালিশ করে। মাথায় আর মুখে মাখে সর্ষের তেল। তারপর কাস্তে ও হুঁক্কা নিয়ে সে নৌকায় ওঠে।তেরো হাতি ডিঙিটাকে বেয়ে চলে দশ বছরের ছেলে তোতা। ওসমান পায়ের চটচটে তেল মালিশ করতে করতে চারদিকে চোখ বুলায়।শ্রাবণ মাসের শেষ। বর্ষার ভরা যৌবন এখন। খামখেয়ালী বর্ষণ বৃষ্টির। আউশ ধান উঠে যাওয়ায় আমন ধানের গাছগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের সতেজ ডগা চিকচিক করছে ভোরের রোদে।
দেখতে দেখতে পাটক্ষেতে এসে যায় নৌকা। পাট গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে ওসমানের চোখ তৃপ্তিতে ভরে ওঠে। যেমন মোটা হয়েছে, লম্বাও হয়েছে প্রায় দুই-মানুষ সমান। তার খাটুনি সার্থক হয়েছে। সে কি যেমন-তেমন খাটুনি! রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে ক্ষেত চষো রে—ঢেলা ভাঙ্গো রে—’উড়া’ বাছো রে—তারপর বৃষ্টি হলে আর এক চাষ দিয়ে বীজ বোনো। পাটের চারা বড় হয়ে উঠলে আবার ঘাস বাছো, ‘বাছট’ করো। ‘বাছট’ করে খাটো চিকন গাছগুলোকে তুলে না ফেললে সবগুলোই টিঙটিঙে থেকে যায়। কোষ্টায় আয় পাওয়া যায় না মোটেই।এত পরিশ্রমের ফসল কিন্তু তার একার নয়। সে-তো শুধু ভাগচাষী। জমির মালিক ওয়াজেদ চৌধুরী ঢাকায় বড় চাকরী করেন। দেশে গোমস্তা রেখেছেন। সে কড়ায় গণ্ডায় অর্ধেক ভাগ আদায় করে নেয়। মরশুমের সময় তাঁর ছেলে ইউসুফ ঢাকা থেকে আসে। ধান পাট বিক্রি করে টাকা নিয়ে আবার ঢাকা চলে যায়। গত বছর বাইনের সময় ও একবার এসেছিল। এসে কাগজে কাগজে টিপসই নিয়ে গেছে ভাগচাষীদের। এর আগে জমির বিলি-ব্যবস্থা মুখেমুখেই চলত।
দীর্ঘ সুপুষ্ট পাট গাছ দেখে যে আনন্দ হয়েছিল ওসমানের, তার অনেকটা নিভে যায় এসব চিন্তায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে ভাবে—আহা, তার মেহনতের ফসলে যদি আর কেউ ভাগ না বসাত!ওসমান লুঙ্গিটা কাছা মেরে নেয়। জোঁকের ভয়ে শক্ত করেই কাছা মারতে হয়। ফাঁক পেলে জোঁক নাকি মলদ্বার দিয়ে পেটের মধ্যে গিয়ে নাড়ী কেটে দেয়।ওসমান পানিতে নামে। পচা পানি কবরেজি পাচনের মত দেখতে। গত দু’বছরের মত বন্যা হয়নি এবারও। তবু বুক সমান পানি পাটক্ষেতে। এ পাট না ডুবিয়ে কাটবার উপায় নেই।কতগুলো পাটগাছ একত্র করে দড়ি দিয়ে বাঁধে ওসমান। ছাতার মত যে ছাইনিটা হয় তার নিচে হুঁক্কা, তামাকের ডিবা, আগুনের মালশা ঝুলিয়ে রাখে সে ‘টাঙনা’ দিয়ে।নৌকা থেকে কাস্তেটা তুলে নিয়ে এবার সে বলে,—তুই নাও লইয়া যা গা। ইস্কুলতন তাড়াতাড়ি আইসা পড়বি।—ইস্কুল ত চাইট্টার সময় ছুটি অইব।
—তুই ছুট্টি লইয়া আগে চইলা আইস্।—ছুট্টি দিতে চায় না যে মাস্টার সাব।—কামের সময় ছুটি দিতে পারব না, কেমুন কথা। ছুট্টি না দিলে জিগাইস্, আমার পাটগুলা জাগ দিয়া দিতে পারবনি তোগ মাস্টার।তোতা নৌকা বেয়ে চলে যায়। ওসমান ডুবের পর ডুব দিয়ে চলে। লোহারুর দোকান থেকে সদ্য আল কাটিয়ে আনা ধারাল কাস্তে দিয়ে সে পাটের গোড়া কাটে। কিন্তু চার পাঁচটার বেশি পাট কাটতে পারে না এক ডুবে। এক হাতা পাট কাটতে তিন-চার ডুব লেগে যায়। একের পর এক দশ বারো ডুব দিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা দমটাকে তাজা করবার জন্যে জিরোবার দরকার হয়। কিন্তু এই জিরোবার সময়টুকুও বৃথা নষ্ট করবার উপায় নেই। কাস্তেটা মুখ দিয়ে কামড়ে ধরে হাতা বাঁধতে হয় এ সময়। প্রথম দিকে দশ ডুবে তিন হাতা কেটে জিরানো দরকার হয়। কিন্তু ডুবের এই হার বেশিক্ষণ থাকে না। ক্রমে আট ডুব, ছয় ডুব, চার ডুব, দুই ডুব এমন কি এক ডুবের পরেও জিরানো দরকার হয়ে পড়ে। অন্য দিকে ডুব প্রতি কাটা পাটের পরিমাণও কমতে থাকে। শুরুতে যে এক হাতা পাট কাটতে তিন-চার ডুব লাগে তা কাটতে শেষের দিকে লেগে যায় সাত-আট ডুব।
পেটের জামিনের মেয়াদ যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ কাজ ভালোই হয়। মাঝে মাঝে ঠিকের ওপর উঠবার আগেই পেটের মধ্যের ক্ষুধা-রাক্ষস খাম-খাম শুরু করে দেয়।ওসমান আমল দেয় না প্রথম দিকে। পাট কেটেই চলে ডুব দিয়ে দিয়ে। কিন্তু আমল দিতে হয় যখন মোচড়ানি শুরু হয় নাড়ী-ভুঁড়ির মধ্যে, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, মাথা ঝিমঝিম করে, হাত-পাগুলো নিস্তেজ হয়ে আসতে থাকে।ওসমান একবার ভাবে ঘরে যাওয়ার কথা। ডাকবে নাকি সে ছেলেকে নৌকা নিয়ে আসবার জন্যে? কিন্তু কাজ যে অর্ধেকও হয়নি এখনো। আশি হাতা পাট কাটার সঙ্কল্প নিয়ে সে জমিতে এসেছে।পরক্ষণেই আবার সে ভাবে—তোতা ত এখনো ইস্কুল থেকেই ফেরেনি। আর ঘরে এত সকালে রান্না হওয়ার কথাও ত নয়।পাশেই কিছুদূরে একটা শালুক ফুল দেখতে পায় ওসমান। তার চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। পেটে জামিন দেয়ার এত সহজ উপায়টা মনে না থাকার জন্যে নিজের ওপর বিরক্ত হয় সে। এদিক ওদিক থেকে ডুব দিয়ে দিয়ে সে শালুক তোলে গোটা দশ-বারো। ক্ষুধার জ্বালায় বিকট গন্ধ উপেক্ষা করে কাঁচাই খেয়ে ফেলে তার কয়েকটা। বাকিগুলো মালশার আগুনে পুড়িয়ে খেয়ে নেয়।
ওসমান আবার শুরু করে—সেই ডুব দেয়া, পাটের গোড়া কাটা, হাতা বাঁধা। বেলা গড়িয়ে গেছে অনেকটা। প্রত্যেক ডুবের পর জিরোতে হয় এখন। পাটও একটা-দু’টোর বেশি কাটা যায় না এক ডুবে। অনেকক্ষণ পানিতে থাকার দরুন শরীরে মালিশ করা তেল ধুয়ে গেছে। পানির কামড়ানি শুরু হয়ে গেছে এখন। ওসমানের মেজাজ বিগড়ে যায়। সে গালাগাল দিয়ে ওঠে, ‘আমরা না খাইয়া শুকাইয়া মরি, আর এই শালার পাটগুলো মোট্টা অইছে কত। কাচিতে ধরে না। ক্যান্, চিক্কন চিক্কন অইতে দোষ আছিল কি? হে অইসে এক পোচে দিতাম সাবাড় কইরা।’ওসমান তামাক খেতে গিয়ে দেখে মালশার আগুন নিভে গেছে। কিছুক্ষণ আগেই বৃষ্টি হয়েছিল একপশলা। পাটগাছের ছাইনি বৃষ্টি ঠেকাতে পারেনি।ওসমান এবার ক্ষেপে যায়। গা চুলকাতে চুলকাতে সে একচোট গালাগাল ছাড়ে বৃষ্টি আর পচা পানির উদ্দেশে। তারপর হঠাৎ জমির মালিকের ওপর গিয়ে পড়ে তার রাগ। সে বিড়বিড় করে বলে,—ব্যাডা তো ঢাকার শহরে ফটেং বাবু অইয়া বইসা আছে। থাবাডা দিয়া আধাডা ভাগ লইয়া যাইব। ব্যাডারে একদিন পচা পানির কামড় খাওয়াইতে পারতাম!ওসমান আজ আর কাজ করবে না। সিদ্ধান্ত করবার সাথে সাথে সে জোরে ডাক দেয়, তোতারে—উ—দুই ডাকের পর ওদিক থেকে সাড়া আসে, আহি—অ——আয়, তোর আহিডা বাইর করমু হনে।পাটের হাতাগুলো এক জায়গায় জড় করতে করতে গজগজ করে ওসমান,—আমি বুইড়্যা খাইট্যা মরি আর ওরা একপাল আছে বইসা গিলবার।তোতা নৌকা নিয়ে আসে। এত সকালে তার আসার কথা নয়। তবুও ওসমান ফেটে পড়ে, এতক্ষণ কি করছিলি, অ্যাঁ? তোরে না কইছিলাম ছুট্টি লইয়া আগে আইতে? ছুট্টি না দিলে পলাইয়া আইতে পারস নাই?
—আগেই আইছিলাম। মা কইছিল আর একটু দেরি কর। ভাত অইলে ফ্যানডা লইয়া যাইস।—ফ্যান আনছস্? দে দে শিগ্গীর।তোতা মাটির খোরাটা এগিয়ে দেয়।লবণ মেশান একখোরা ফেন। ওসমান পানির মধ্যে দাঁড়িয়েই চুমুক দেয়। সবটা শেষ করে অস্ফুটস্বরে বলে,—শুকুর আলহামদুলিল্লাহ।ফেনটুকু পাঠিয়েছে এ জন্যে স্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানায় তার অন্তরের ভাষা। এ রকম খাটুনির পর এ ফেনটুকু পেটে না দিলে সে পানি থেকে উঠতেই পারে না নৌকার ওপর। এবার আউশ ধান কাটার সময় থেকেই এ-দশা হয়েছে। অথচ কতইবা আর তার বয়স! চলি্লশ হয়েছে কি হয়নি।ওসমান পাটের হাতাগুলো তুলে ধরে। তোতা সেগুলো টেনে তোলে নৌকায় গুনে গুনে সাজিয়ে রাখে। পাট তুলতে তুলতে ওসমান জিজ্ঞেস করে ছেলেকে,—কি রান্ছে রে তোর মা?—ট্যাংরা মাছ আর কলমী শাক।—মাছ পাইল কই?
—বড়শী দিয়া ধরছিল মায়।ওসমান খুশী হয়।পাট সব তোলা হয়ে গেলে ওসমান নৌকায় ওঠে। নৌকার কানিতে দুই হাতের ভর রেখে অতি কষ্টে তাকে উঠতে হয়।—তোমার পায়ে কালা উইডা কী, বা’জান? তোতা ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে বলে।—কই?—উই যে! জোঁক না জানি কী! আঙ্গুল দিয়ে দেখায় তোতা।—হ, জোঁকই ত রে! এইডা আবার কোনসুম লাগল? শিগ্গীর কাচিটা দে।তোতা কাস্তেটা এগিয়ে দেয়। ভয়ে তার শরীরের সমস্ত লোম কাঁটা দিয়ে উঠেছে।
ডান পায়ের হাঁটুর একটু ওপরেই ধরেছে জোঁকটা। প্রায় বিঘতখানেক লম্বা। করাতে জোঁক। রক্ত খেয়ে ধুমসে উঠেছে।ওসমান কাস্তেটা জোঁকের বুকের তলা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়। এবার একটা শক্ত কাঠি দিয়ে জোঁকটা কাস্তের সাথে চেপে ধরে পোচ মারে পা থেকে।—আঃ বাঁচলাম রে! ওসমান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।—ইস্, কত রক্ত! তোতা শিউরে ওঠে।ছেলের দিকে তাকিয়ে ওসমান তাড়া দেয়,—নে এইবার লগি মার তাড়াতাড়ি।তোতা পাট বোঝাই নৌকাটা বেয়ে নিয়ে চলে।জোঁক হাঁটুর যেখানটায় চুমুক লাগিয়েছিল সেখান থেকে তখনও রক্ত ঝরছে। সে দিকে তাকিয়ে তোতা জিজ্ঞেস করে,—বা’জান কেমুন কইরা জোঁক ধরল তোমারে, টের পাও নাই?—না রে বাজান, এগুলো কেমুন কইরা যে চুমুক লাগায় কিছুই টের পাওয়া যায় না। টের পাইলে কি আর রক্ত খাইতে পারে?—জোঁকটা কত বড়, বাপপুসরে—
—দুও বোকা! এইডা আর এমুন কী জোঁক। এরচে’ বড় জোঁকও আছে।জমি থেকে পাট কেটে ফেলার পরেও ঝামেলা পোয়াতে হয় অনেক। জাগ দেয়া, কোষ্টা ছাড়ান, কোষ্টা ধুয়ে পরিষ্কার করা, রোদে শুকানো—এ কাজগুলো কম মেহনতের নয়।পাট শুকাতে না শুকাতেই চৌধুরীদের গোমস্তা আসে। একজন কয়াল ও দাড়িপাল্লা নিয়ে সে নৌকা ভিড়ায় ওসমানের বাড়ির ঘাটে।বাপ-বেটায় শুকনো পাট এনে রাখে উঠানে। মেপে মেপে তিন ভাগ করে কয়াল। ওসমান ভাবে তবে কি তে-ভাগা আইন পাস হয়ে গেছে? তার মনে খুশী ঝলক দিয়ে ওঠে।গোমস্তা হাঁক দেয়,—কই ওসমান, দুই ভাগ আমার নায় তুইল্যা দাও।ওসমান হাঁ করে চেয়ে থাকে।—আরে মিয়া, চাইয়া রইছ ক্যান? যাও।—আমারে কি এক ভাগ দিলেন নি?
—হাঁ—ক্যান?—ক্যান আবার! নতুন আইন আইছে জান না? তে-ভাগা আইন।—তে-ভাগা আইন! আমি ত হে অইলে দুই ভাগ পাইমু।—হঁ, দিব হনে তোমারে দুই ভাগ। যাও ছোড হুজুরের কাছে!—হঁ, এহনই যাইমু।—আইচ্চা যাইও যহন ইচ্ছা। এহন পাট দুই ভাগ আমার নায় তুইল্যা দিয়া কথা কও।—না, দিমু না পাট। জিগাইয়া আহি।—আরে আমার লগে রাগ করলে কি অইব? যদি হুজুর ফিরাইয়া দিতে কন তহন না হয় কানে আইট্যা ফিরত দিয়া যাইমু।ওয়াজেদ চৌধুরীর ছেলে ইউসুফ বৈঠকখানার বারান্দায় বসে সিগারেট ফুঁকছে। ওসমান তার কাছে এগিয়ে যায় ভয়ে ভয়ে। তার পেছনে তোতা।—হুজুর, ব্যাপারডা কিছু বুঝতে পারলাম না। ওসমান বলে।
—কী ব্যাপার? সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে ইউসুফ।—হুজুর, তিন ভাগ কইরা এক ভাগ দিছে আমারে।—হ্যাঁ, ঠিকই ত দিয়েছে।ওসমান হাঁ করে চেয়ে থাকে।—বুঝতে পারলে না? লাঙ্গল-গরু কেনার জন্যে টাকা নিয়েছিলে যে পাঁচ শ’।ওসমান যেন আকাশ থেকে পড়ে।—আমি টাকা নিছি? কবে নিলাম হুজুর?—হ্যাঁ, এখন ত মনে থাকবেই না। গত বছর কাগজে টিপসই দিয়ে টাকা নিয়েছিলে, মনে পড়ে? গরু-লাঙ্গল কেনার জন্যে টাকা দিয়েছি। তাই আমরা পাব দু’ভাগ, তোমরা পাবে এক ভাগ। তে-ভাগা আইন পাস হয়ে গেলে আধা-আধা সেই আগের মত পাবে।—আমি টাকা নেই নাই। এই রকম জুলুম খোদাও সহ্য করব না।
—যা-যা ব্যাটা, বেরো। বেশি তেড়িবেড়ি করলে এক কড়া জমি দেব না কোনো ব্যাটারে।ওসমান টলতে টলতে বেরিয়ে যায় ছেলের হাত ধরে।ইউসুফ ক্রূর হাসি হেসে বলে,—তে-ভাগা! তে-ভাগা আইন পাস হওয়ার আগে থেকেই রিহার্সাল দিয়ে রাখছি।সিগারেটে একটা টান দিয়ে আবার সে বলে,—আইন! আইন করে কি আর আমাদের আটকাতে পারে! আমরা সুচের ফুটো দিয়ে আসি আর যাই। হোক না আইন। কিন্তু আমরা জানি, কেমন করে আইনকে ‘বাইপাস’ করতে হয়। হুঁ হ্ হুঁ।শেষের কথাগুলো ইউসুফের নিজের নয়। পিতার কথাগুলোই ছেলে বলে পিতার অনুকরণে।গত বছরের কথা। প্রস্তাবিত তে-ভাগা আইনের খবর কাগজে পড়ে ওয়াজেদ চৌধুরী এমনি করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলেছিলেন কথাগুলো।আইনের একটা ধারায় ছিল—’জমির মালিক লাঙ্গল-গরু সরবরাহ করিলে বা ঐ উদ্দেশ্যে টাকা দিলে উৎপন্ন শস্যের অর্ধাংশ পাইবেন।’
—এই সুযোগেরই সদ্ব্যবহারের জন্যে তিনি ছেলেকে পাঠিয়ে কাগজে কাগজে টিপসই আনিয়েছিলেন ভাগ-চাষীদের।ফেরবার পথে তোতা জিজ্ঞেস করে,—বা’জান কেমুন কইর্যা লেইখ্যা রাখছিল? টিপ দেওনের সময় টের পাও নাই?ছেলের প্রশ্নের উত্তর দেয় না ওসমান। একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে তার মুখ থেকে শুধু উচ্চারিত হয়—আহ্-হা-রে!তোতা চমকে তাকায় পিতার মুখের দিকে। পিতার এমন চেহারা সে আর কখনো দেখেনি।চৌধুরীবাড়ির সীমানা পার হতেই ওসমান দেখে—করিম গাজী, নবুখাঁ ও আরো দশ বারোজন ভাগ-চাষী এদিকেই আসছে।করিম গাজী ডাক দেয়,—কি মিয়া, শেখের পো? যাও কই?—গেছিলাম এই বড় বাড়ি।
ওসমান উত্তর দেয়,—আমারে মিয়া মাইর্যা ফালাইছে এক্কেরে। আমি বোলে টাকা নিছিলাম পাঁচ শ’।কথা শেষ না হতেই নবুখাঁ বলে,—ও, তুমিও টিপ দিছিলা কাগজে?—হঁ ভাই, কেমুন কইরা যে কলমের খোঁচায় কি লেইখ্যা থুইছিল কিছুই টের পাই নাই। টের পাইলে কি আর এমুনডা অয়। টিপ নেওনের সময় গোমস্তা কইছিল, ‘জমি বর্গা নিবা, তার একটা দলিল থাকা ত দরকার।’—হঁ, বেবাক মাইনষেরেই এম্বায় ঠকাইছে। করিম গাজী বলে,—আরে মিয়া এমুন কারবারডা অইল আর তুমি ফির্যা চল্ছো?—কি করমু তয়?
—কি করবা! খেঁকিয়ে ওঠে করিম গাজী, চল আমাগ লগে দেখি কি করতে পারি!করিম গাজী তাড়া দেয়,—কি মিয়া, চাইয়া রইছ ক্যান? আরে এমনেও মরছি অমনেও মরছি। একটা কিছু না কইর্যা ছাইড়্যা দিমু?ওসমান তোতাকে ঠেলে দিয়ে বলে,—তুই বাড়ি যা গা।তার ঝিমিয়ে-পড়া রক্ত জেগে ওঠে। গা ঝাড়া দিয়ে সে বলে,—হঁ, চল। রক্ত চুইষ্যা খাইছে। অজম করতে দিমু না, যা থাকে কপালে।