মধ্যদিনের আলোর দোহাই,
নিশার দোহাই ওরে
প্রভু তোরে ছেড়ে যাননি কখনো,
ঘৃণা না করেন তোরে।
অতীতের চেয়ে নিশ্চয়ই ভালো
হবে রে ভবিষ্যৎ,
একদিন খুশি হবি তুই লভি
তার কৃপা সুমহৎ।
অসহায় যবে আসিলি জগতে
তিনি দিয়াছেন ঠাঁই-
তৃষ্ণা ও ক্ষুধা দুঃখ যা ছিল
ঘুচায়ে দেছেন তাই।
পথ ভুলেছিলি তিনিই সুপথ
দেখায়ে দেছেন তোরে,
সে কৃপার কথা স্মরণে রাখিস;
অসহায় জনে ওরে
দলিস না কভু ভিখারি আতুর
বিমুখ যেন না হয়
তাঁর করুণার বারতা ঘোষণা
করবে দুনিয়াময়।
🖤🖤 বেশি হাসি 🖤🖤
হাসতে হাসতে অন্ধ,
মুখটা তার বন্ধ,
চোখটা গেলো বুজে,
বেশি হাসে অকাজে।
হাসলেই হাসি, বাড়ে বেশি,
হাসতে নেই মানা,
জীবন যদি থেমেও যায়,
হাসি যাবে না থামা।
তাই তো ভাই, হাসতে হবে,
থাকতে হবে ভালো,
অন্ধকারে একা হলে,
দেখবে তুমি আলো।
দুঃখ গুলো যাবে ঢেকে,
সব হাসির আড়ালে।
দেখবে তুমি আছো ভালো
সব পরিস্থিতি সামলে।
🖤কোথায় পেলে এমন হাসি🖤
কোথায় পেলে এমন হাসি?
যে হাসিতে জোছনা ঝড়ে!
যেই হাসির আলোক বরণ
ঝলমলিয়ে মর্ত্যে পড়ে।
কোথায় পেলে এমন হাসি?
যে হাসিতে জুড়ায় হৃদয়,
যেই হাসির আবরণে
দূর হয়ে যায় সব ডর-ভয়।
এমন হাসি পেলে কোথায়
যে হাসিতে ফাগুন উড়ে,
যেই হাসির সুরের টানে
পাখিরা সব গান করে।
পেলে কোথায় এমন হাসি?
যে হাসিতে বর্ষা আসে,
যেই হাসির ভালোবাসায়
মেঘগুলো সব ভাসে আকাশে।
কোথায় পেলে এমন হাসি?
যে হাসিতে গোলাপ ফুঁটে,
যেই হাসিরই সুবাস পেয়ে
ভ্রমররা সব আকুল ছুটে।
এমন হাসি পাও যদি ভাই
আঁকড়ে রেখো মন মাঝে,
হারিয়ে গেলেই আসবে আঁধার
ঢাকবে হৃদয় কালো সাঁঝে।
🖤তোমার হাসি🖤
তোমার হাসিতে
ধরিত্রী থমকে যায়।
তোমার হাসিতে
পথভোলা পথিক-
পথ খুঁজে পায়।
তোমার হাসিতে
বাগানে ফুল ফুটে।
তোমার হাসিতে
দিগন্তের শেষ্প্রান্তে-
লাল সূর্য উঠে।
তোমার হাসিতে
পাখিরা গান গায়।
তোমার হাসিতে
আকাশের তারাগুলো-
আলোর দেখা পায়।
তোমার হাসিতে
নদীর রেখা বয়।
তোমার হাসিতে
সমুদ্রের তীরঘেষে-
পাহাড়ের জন্ম হয়।
তোমার হাসিতে
পৃথিবীতে শান্তি আসে।
তোমার হাসিতে
বসুন্ধরা জুড়ে-
স্বর্গের সুখ ভাসে।
অমন হাসির জন্য মানুষের
ভালোবাসা রয়ে যায়।
অমন হাসির খোঁজে ধরায়
কবিতারা থেকে যায়।
🖤তুমি হাসতে বলেছিলে🖤
তুমি আমাকে হাসতে বলেছিলে আর
আমি চেয়েছিলাম তুমি আমার হাসির কারণ হও।
তুমি আমাকে ভালো থাকতেও বলেছিলে
আর আমি চেয়েছিলাম,
তুমি আমার ভালো থাকার সঙ্গী হও।
তুমি সুখ খুজেছিলে,
কিন্তু আমায় নিয়ে সুখি হতে চাও নি।
আমি ভালো বেসেছিলাম,
তুমি ভালোবাসার হিসেব কষতে বসেছিলে।
আমি তোমাকে নিয়ে আকাশ হতে চেয়েছিলাম,
তুমি আমাকে মেঘও কল্পনা করো নি।
আমি তোমায় নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম
আর তুমি,অন্য কাউকে নিয়ে।
তুমি আমায় হাসতে বলেছিলে,
কিন্তু আমার হাসির কারণ হতে চাও নি।
আফসোস!! আমি ভালো বেসেছিলাম…
এটাই কি আমার বড় ভুল, তোমাকে ভালবাসা
স্ম্রৃতির একটা পাতা উল্টিয়ে দেখলাম,
গৌরবময় স্বর্ণালী দিন বিগত, বুঝলাম!
তুমিই ছিলে একমাত্র আমার মানষপটে,
যাকে নানাভাবেই সাজিয়েছিলাম অকপটে!
তোমাকে তো ভালবেসেছিলাম আমি সীমাহীন,
যে ভালবাসার থাকার কথা ছিল অমলীন!
আমার দিনের সূত্রপাত হত তোমার নাম দিয়ে,
এইত আমাদের ভালবাসা, কথা হত যা নিয়ে!
ভালবাসার মাঝে হারিয়েছিলাম এমন করে,
নিজেকে ধ্বংস করেছিলাম নিজ হাতে ধরে!
তোমাকে পাবার জন্য নিজেকে করেছিলাম বিচ্ছিন্ন,
সামান্য আবেগেও নিজেকে করেছিলাম পূর্ণ আচ্ছন্ন!
আমাকে দেখতো সবে মবে সন্দেহের প্রলেপ নিয়ে,
আমি যে সেটা সহ্য করতে পারতাম না কোনভাবে!
অন্ধ ভালবাসা আমাকে পরিবার থেকে করেছিল দূর,
ভেবেছিলাম শুধু তোমাকে নিয়েই বাঁধব নতুন সুর!
আমি কি ভাবতে পেরেছিলাম এই আমূল পরিবর্তন?
আমার ভালবাসায় করতে হবে আমায় পৃষ্ঠ প্রদর্শন?
আমি সেদিন বুঝি নাই প্রেম তোমার কাছে খেলা-
আর এটাই যে আমার বড় ভুল, তোমাকে ভালবাসা।
কুমার জীবন
একজন পুরুষের জীবনে রয়ে গেছে কিছু ভাগ,
যার মধ্যে কোনটার জন্য মনে থাকে অনুরাগ!
যখন সেটা পার হয়ে যায়, মনে থাকে কষ্ট:
কভু ফেরানো যাবে না সেটা, তা তো সুস্পষ্ট!
মাত্র একবারই জীবনে আসে সেই সুবর্ণ সময়,
কুমার জীবনই সেটা, যদি কেউ তার নাগাল পায়!
এটা সেই জীবন যেথা মানুষ পায় কিছু উত্তালতা,
এটাই সেই সময় যখন সে পায় না বলার স্বাধীনতা।
কুমার জীবন উপভোগ্য কিন্তু যে ভোগ করতে পারে,
বিয়ের পরে যা হারিয়ে যেতে পারে কিন্তু চিরতরে!
জীবনের সুবর্ণ সময়গুলো তো আসে না বারবার,
তাই চেষ্টা কর এর পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করার!
বৈবাহিক জীবনে অনেক সময় এসে যায় জটিলতা,
নিজের দিকে নজর দেবার তখন আর সময় কোথা?
অনেক ছেলেই আগে ভাগে বুঝতে পারে না এটা,
বুঝে তখনই যখন জটিল আকার ধারণ করে সেটা!
বিয়ের পরে একটা ছেলের জীবনে আসে পরিবর্তন,
কিন্তু সেটা সে বোঝে না যখন সময়ের হয় সংক্ষেপন!
নিজের আবেগ অনুভুতিগুলোর দিও না অকাল সমাধি,
মুল্যায়ন করতে শেখ কুমার জীবনের সংক্ষিপ্ত কালবিধি।
আমার চারপাশে
আমি বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছি
কি হচ্ছে আমার চারপাশে,
এটা আমার জন্য সুখকর কিছু নয়
তাতে কার কি যায় আসে?
এখন আমি বসে আছি
বিশাল সাজানো একটা ঘরে,
চেয়ার, টেবিল সবই আছে-
কিন্তু আমি যে নই নিজ গৃহে!
অনেক্ষন ধরে চেষ্টা করছি
কে কি বলে সেটা শুনতে,
কিছুই লাগছে না ভাল,
কিছুই পারছি না বুঝতে!
একটা সময় আসবে এমন
যখন সব হবে আমার গিলতে,
নাহলে তো কেউ পারবেনা,
আমার পতন ঠেকাতে!
খুব বিরক্তিকর ঠেকছে আমার
আমি চলে হেতে চাই এখন,
কার কাছে লাগছে ভাল
সন্দেহ আছে বিলক্ষণ!
আমার ঘর আমাকে ডেকে চলেছে,
আসছে ঘুম চোখ জুড়ে,
কিন্তু আমি যদি চলে যাই তবে
আমার পতন হবে পাতাল ফুঁড়ে!
আমার চারপাশের বন্ধুরা সব
মনোযোগ দিয়ে শুনছে,
কিন্তু আমি তা পারছি না দেখে
আমার খুব ভয় করছে!
পড়তে আমার লাগে না ভাল
তার পরেও আমি বাধ্য,
কবে যে মুক্তি পাব আমি,
বলতে কার আছে সাধ্য?
চারিদিকে তাকিয়ে দেখি আমি
আমার আশেপাশের মানুষগুলা
এরা সবাই খুব সাবধানী,
আর অসাধারণ সব পড়ুয়া!
আমার কাছে সব কিছুই এখন
লাগছে ভীষন বোঝা,
তবুও বলতে পারি না, ক্ষমা কর
আর পারিনা সইতে এ সাজা।
চেষ্টা করে যাচ্ছি জেগে থাকতে,
দেখে আর শুনে যেতে-
এখনও বুঝতে চেষ্টায় আছি
কি ঘটছে আমার চারপাশে!
পুরানো চিঠি
বাসার গেটে এসে থামলো
নীল রঙের একটা গাড়ী,
দেরী হয়নি মোটেও
আসতে তার বাড়ী!
একজন মানুষ নেলে এল
হাতে ব্যাগের বোঝা,
মাঝবয়সী মানুষ উনি,
দেখতে সরল সোজা!
ধীর পায়ে হেটে চলেন
সামনে বন্ধ দুয়ার-
নিঃশব্দে এগিয়ে যান,
লোক আসবে খোলার।
মৃদু চাপে উনি যখন
বাজিয়ে দিলেন ঘন্টা,
রহস্যময় এক ঘটনা
যা চঞ্চল করবে মনটা!
বয়স্কা এক মহিলে বলেন,
কে আছে ওখানে?
লোকটা তখন বলে ওঠে,
মা! আমিই দাঁড়িয়ে এখানে।
আনন্দের আতিশয্যে মা তখন
হয়ে যান বোকা,
খুশি হয়ে বলে ওঠেন,
আয় রে আমার খোকা!
অশ্রুসজল নয়নে মা বলে,
এতদিন পর এলি খোকা?
এতদিন কোথায় ছিলি তুই?
দিয়ে আমায় ধোঁকা?
মাকে জড়িয়ে ধরে লোকটি,
কপালে দেয় চুম!
তোমাকে ছেড়ে মা আমার
চোখে ছিলনা ঘুম।
বাবা, রিশ্রাম নে।
মা ওঠেন বলে,
ঠিক যেন ছোট্ট পাখি
সাঝেঁ নীড়ে ফেরে।
গোসল সেরে উনি
হয়ে ওঠেন সতেজ,
সারা বাড়ীজুড়ে যেন
ফুলের সুরভী আমেজ!
এরপর উনি যখন
সেরে ওঠেন প্রার্থনা,
মা তখন নিয়ে আসেন
খাবার ভর্তি খাঞ্ছা।
মা তো বানিয়েছেন
অনেক রকম খাদ্য,
অতুলনীয় সেগুলো যে
সবকিছুই অনবদ্য!
মা বলেন, ২০ বছর আগের
চিঠি একটা আছে পুরান,
তুই হয়ত বুঝবি,
জানবি কার নাম।
বহু বছর হয়ে গেল
যখন আমি গেলাম,
অনেক বছর পার করে
ঠিকি ফিরে এলাম।
ঠিক, মা বললেন
দিয়ে একটু হাসি।
চিঠি টা দাও তো,
খুলে তবে দেখি!
হলুদ খামে মোড়া চিঠি
লেখাগুলো ঝাপ্সা-
মনে পড়ছে না কিছু
ক্লান্তিতে সব আবসা!
বালিসে হেলান দিয়ে ওটা
চেষ্টা করেন দেখা-
লেখা দেখে মনে হয় যেন
কোন কাঁচা হাতের লেখা!
ভাল করে দেখার পরেও
ঠাহর হল না কিছুই,
স্মৃতির পাতা হাতড়ে গিয়ে
হতাশ হলেন শুধুই!
এক ঝটকা আলোর মত
কি যেন এল মনে,
দুঃখে ছেয়ে গেল মুখ
চিঠির পানে চেয়ে।
কেউ তো জানে না
কি ছিল লেখা,
জানে শুধুই সে-
যে পেয়েছে দেখা।
এরপর যে কি হল
তা নেই কারো জানা,
কবিতায় যে সব কথা
বলতে আছে মানা।
নতুন নয়ত কিছু!
আজ আমার শরীর খারাপ লাগছে
মনে হচ্ছে যেন জ্বর এসেছে গায়ে,
এমনটা তো হয়নি কখন আগে:
ভাল লাগছে না কিছুই ডানে বায়ে!
সারাদিন ধরে নামলো অঝরে বৃষ্টি,
ক্ষণিকের তরেও হয়নি ক্ষান্ত,
ভেবেছিলাম একটু বাইরে বের হব
যদি মনটা একটু হত শান্ত!
ছাত্রাবাসে সারাদিন একাই অলস বসে
পৌঁছে গেলাম বিরক্তির শেষ সীমায়,
আমি এখান থেকে মুক্তি পেতে চাই,
সেই পথ কে দেখাবে আমায়?
এরুপ বৃষ্টিভেজা দিনের কথা
মনে পড়ে যায় ক্ষনে ক্ষনে,
ঘরের কথা মনে পড়ে যায় যেথা
ঢলে পড়তাম ঘুমের ঘোরে!
আর মনে পড়ে কিছু সুস্বাদু খাবার
যা খেতাম আমার নিজের ঘরে,
এর কিছু গল্প উপন্যাস এর বই-
যার কাহিনী আজো মনে পড়ে!
সময়ের এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে
আগের মত নেই যে আর কিছু,
অতীত-বর্তমানের মাঝে ভবিষ্যত
দেয়াল টেনে দিয়েছে পিছু পিছু!
আমার নিজেকে বড়ই অসহায় লাগে
তুমি কি বুঝতে পারছ আমার যন্ত্রনা?
দুর্ভাগ্যেরর আবরণ আমাকে জড়িয়ে নিয়ে
দিয়ে গেছে কিছু নির্মম বিড়ম্বনা!
কেই যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করে,
কেমন আছ হে বন্ধু?
দক্ষ অভিনেতার মত আমি বলে উঠি,
আগের মতই! নতুন নয়ত কিছু!
তোমার তরে হাসিমুখে
একদিন দেখেছিলাম সুন্দর এক স্বপ্ন,
নদীর তীরে আমরা বসেছিলাম মগ্ন!
যখন তুমি ধরেছিলে আমার হাত-
পুষ্পসম প্রস্ফুটিত হয়েছিল প্রভাত!
কানে কানে বলেছিলে চুপি চুপি-
মৃদু বাতাস করেনি কোন কারচুপি!
আমার হৃদয়ে লেগেছিল এক সাড়া-
তুমিই আমার অন্তরে দিয়েছিলে নাড়া!
তোমার জন্য ফুল তুলতে চাইলাম একটি,
তখন শুরু হয়ে গেল মুশল ধারে বৃষ্টি!
আমি তোমাকে বলেছিলাম, এস প্রিয়তম!
লজ্জা পেয়ে তুমি হয়েছিলে অবনত!
আমার জীবনে তুমি দিয়ে দিয়েছো দোলা
আমার জীবনে যদিও ছিল কত ঝামেলা!
তোমাকে কত ভালবাসি, এটা রেখ স্মরণ,
তোমার তরে হাসিমুখে মৃত্যু করবো বরণ।
কষ্টকে জয় করতে
আমদের এই জীবনটা খুব সংক্ষিপ্ত,
তবুও কেন একে অন্যের প্রতি ক্ষিপ্ত?
আমরা পারি একে অর্থবহ করে তুলতে,
আমার পারি সব কষ্টকে জয় করতে!
ভবিষ্যতের জন্য আছে কিছু স্বপ্ন-
সেটা যেন না হয় আঁধারে নিমগ্ন!
প্রত্যেককে দিতে হবে তাই কঠোর শ্রম,
সুন্দর পৃথিবীর জন্য না থাকুক কোন ভ্রম!
এস বন্ধু! সবে মিলে দুঃখকে জয় করি,
সকল জরা ভুলে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ি!
তুমিই আমার ভুবন
আমাদের ভূবনে থাকবে না কোন বেদনা,
থাকবে না কোন বিরহ আর দেনা-পাওনা!
তোমাকে ছেড়ে আমি কখনও দূরে যাবোনা,
তোমার ব্যাপারে আমি পিছপাও হবোনা!
ঢেকে রাখবো তোমায় দিয়ে সব ভালবাসা,
প্রমাণ করতে পারি, তুমিই আমার আশা!
আমার জীবনে তুমি এনে দিলে পরিবর্তন,
তোমার জন্য আমার সব! এটা রেখ স্মরণ!
তোমার হৃদয়ের মাঝে আমায় দিও আসন,
তুমিই আমার ভালবাসা, তুমিই আমার ভুবন।
একাকী পথচলা
চিন্তা করেও ভেবে পাইনা কি লিখবো-
মনের মধ্যে পাই না কোন আশার আলো!
একা একা হাঁটি আমাই দিনভর বারান্দায়,
পৌঁছাতে পারলাম না জীবনের কিনারায়!
যন্ত্রে রুপান্তরিত হচ্ছে আমাদের এই জীবন,
যন্ত্রের মধ্যেই বাঁচা আর যন্ত্রের মধ্যেই মরণ!
মাঝে মাঝে ভুলে যাই আমার নিজের অস্তিত্ব,
খালি কামরায় যখন গুমরে মরে সব আমিত্ব!
যন্ত্রমানব হয়ে গিয়েছি! উপায় নেই ফেরার!
জীবন প্রত্যাশী? কিন্তু কিই বা আছে পাবার?
কখন মনে হয় আমি ফিরে আসবনা আবার-
ভাবি আমি পথ কি খোলা আছে চলে যাবার?
কন্টকময় স্বর্গে আমি নিজেকে করলাম আবিস্কার,
একাকী পথচলায় এটাই আমার প্রাপ্য পুরস্কার!
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়
যদি তুমি বলো তবে আমি আকাশ ছুঁতে পারি,
সুদূর আকাশে পাখির মত ডানা মেলে উড়ি!
আকাশ থেকে তোমার জন্য তারা এনে দেব,
তোমার জন্য ভালবাসা বিলিয়ে আমি যাব!
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
পাহাড় অতিক্রম করতে পারি যদি তুমি বলো,
তোমার জন্য ভালবাসা মোর হবেনা টলোমলো!
পাহাড় খুঁড়ে তোমার জন্য আনব নীল-কমল!
এটাই আমার দৃঢ় পণ! হতে দেব না দুর্বল!
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
যদি তুমি বলো সাগর পাড়ি দেব সাঁরতে!
তোমার হাসি আমার সকল কষ্ট দেয় উতরে।
সাগরের তল থেকে আমি এনে দেব মুক্তো,
আমি জেনেছি আমার জীবনে তুমি আছ যুক্ত!
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
যদি তুমি বলো দেব পাড়ি বিশাল মহাশুন্য –
তোমার সঙ্গ আমার একাকীত্বকে করবে পূর্ণ!
পৃথিবীর সকল সুখ এনে দেব তোমার জন্য,
তোমায় ভালবেসে আমার জীবন হল ধন্য!
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
কত ভালবাসি তোমায় যদি তুমি জানতে-
কখনও দেখেছ কি ক্ষুদ্র শিশির বিন্দু?
জ্বলজ্বল করে ওঠে প্রভাত রবির কিরণে!
আমার ভালবাসা তেমনি উজ্জ্বল হে বন্ধু!
হৃদয়ের দহন কি বুঝতে পারছো না তুমি?
আমায় ছেড়ে যদি যাও, কিভাবে বাঁচব আমি?
আমার দিকে তাকিয়ে একবার বল আমায়-
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়
কিছু ভুল
আমি মাঝে মাঝে কিছু ভুল করে ফেলি,
কিন্তু আমি জানি ওগুলো নয় সব মেকি!
হতে পারে এটা আমার অবহেলা-
কিংবা হতে পারে আমি বড় বোকা!
আমি কিন্তু মানুষটা নই এত খারাপ,
আমার লেখায় ঝরে পড়ে সব অনুতাপ!
মনের ভিতর থেকে তাড়িয়ে দিও না আমায়,
হারিয়ে যাব তাহলে আমি সুদূর নীলিমায়!
আমার তরে তুমি বন্ধ করে দিও না দুয়ার,
বাঁচবোনা আমি যদি অবহেলা পাই তোমার।
বাস্তব জীবন
এই মুহুর্তে আমি ভীষণ বিরক্ত,
কম্পিউটার ভাইরাস করছে উত্যক্ত!
পারছিনা কোন কাজ ঠিকমত করতে,
কিভাবে করবো তাও পারছিনা জানতে!
একবার ভাবি সবকিছু ধুয়ে মুছে ফেলি,
চাইলেও কি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি?
ঝামেলার সাথে যুক্ত আছে কম্পিউটার-
বলতেও পারছিনা, এটা কোন ব্যাপার!
আমাদের জীবনেও কত সমস্যা রয়ে গেছে,
সেগুলোর অনেকটাই অসমাপ্ত হয়ে আছে!
আমারা তো নই মানুষরুপী কোন যন্ত্র,
বিকল হলে ঠিক করে দেবে কোন মন্ত্র!
আমাদের আছে আবেগের ছটা আর ভালবাসা,
আরও আছে আমাদের জীবনের কত আশা!
সামাজিক জীব হিসাবে আছে কত দায়িত্ব,
ঘরে বাইরে সবখানেই আছে কাজের গুরুত্ব!
এর পরে আছে কত সমস্যা! এড়ানো নাহি যায়,
চালাক মানুষগুলো ঠিকিই তো এড়িয়ে চলে যায়!
খুব সহজেই তো আমার কম্পিউটার বদলে ফেলি,
কিন্তু জীবনের সমস্যাগুলো কিভাবে এড়িয়ে চলি?
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিত্কার করতে করতে
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।
তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভূর বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুড়ো
উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের
দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
মোল্লাবাড়ির এক বিধবা দাঁড়িয়ে আছে
নড়বড়ে খুঁটি ধ’রে দগ্ধ ঘরের।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে
বসে আছে পথের ধারে।
তোমার জন্যে,
সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝড়ে
রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়ানো
সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে —
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,
মতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।
আরও পড়ুন
নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।
মমতা নামের প্রুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড়
ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে
শিউলিশৈশবে ‘পাখী সব করে রব’ ব’লে মদনমোহন
তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি,
অবিচ্ছিন্ন পরস্পর মমতায় লীন,
ঘুরেছি কাননে তাঁ নেচে নেচে, যেখানে কুসুম-কলি সবই
ফোটে, জোটে অলি ঋতুর সংকেতে।
আজন্ম আমার সাথী তুমি,
আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গ’ড়ে পলে পলে,
তাইতো ত্রিলোক আজ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভেড়ে
আমারই বন্দরে।
গলিত কাচের মতো জলে ফাত্না দেখে দেখে রঙিন মাছের
আশায় চিকন ছিপ ধরে গেছে বেলা। মনে পড়ে কাঁচি দিয়ে
নক্সা কাটা কাগজ এবং বোতলের ছিপি ফেলে
সেই কবে আমি হাসিখুশির খেয়া বেয়ে
পৌঁছে গেছি রত্নদীপে কম্পাস বিহনে।
তুমি আসো আমার ঘুমের বাগানেও
সে কোন্ বিশাল
গাছের কোটর থেকে লাফাতে লাফাতে নেমে আসো,
আসো কাঠবিড়ালির রূপে,
ফুল্ল মেঘমালা থেকে চকিতে ঝাঁপিয়ে পড়ো ঐরাবত সেজে,
সুদূর পাঠশালার একান্নটি সতত সবুজ
মুখের মতোই দুলে দুলে ওঠো তুমি
বার বার কিম্বা টুকটুকে লঙ্কা ঠোঁট টিয়ে হ’য়ে
কেমন দুলিয়ে দাও স্বপ্নময়তায় চৈতন্যের দাঁড়।
আমার এ অক্ষিগোলকের মধ্যে তুমি আঁখিতারা।
যুদ্ধের আগুণে,
মারীর তাণ্ডবে,
প্রবল বর্ষায়
কি অনাবৃষ্টিতে,
বারবনিতার
নূপুর নিক্কনে
বনিতার শান্ত
বাহুর বন্ধনে,
ঘৃণায় ধিক্কারে,
নৈরাজ্যের এলো-
ধাবাড়ি চিত্কারে,
সৃষ্টির ফাল্গুনে
হে আমার আঁখিতারা তুমি উন্মিলিত সর্বক্ষণজাগরণে।
তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে, কী থাকে আমার ?
উনিশ শো’ বাহন্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি
বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী।
সে ফুলের একটি পাপড়িও ছিন্ন হ’লে আমার সত্তার দিকে
কতো নোংরা হাতের হিংশ্রতা ধেয়ে আসে।
এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি,
এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউড়ের পৌষমাস !
তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো,
বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।
আরও পড়ুন