Archive

Category Archives for "Bangla Kobita"

কোরানের বাণী – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

মধ্যদিনের আলোর দোহাই,
নিশার দোহাই ওরে
প্রভু তোরে ছেড়ে যাননি কখনো,
ঘৃণা না করেন তোরে।
অতীতের চেয়ে নিশ্চয়ই ভালো
হবে রে ভবিষ্যৎ,
একদিন খুশি হবি তুই লভি
তার কৃপা সুমহৎ।
অসহায় যবে আসিলি জগতে
তিনি দিয়াছেন ঠাঁই-
তৃষ্ণা ও ক্ষুধা দুঃখ যা ছিল
ঘুচায়ে দেছেন তাই।
পথ ভুলেছিলি তিনিই সুপথ
দেখায়ে দেছেন তোরে,
সে কৃপার কথা স্মরণে রাখিস;
অসহায় জনে ওরে
দলিস না কভু ভিখারি আতুর
বিমুখ যেন না হয়
তাঁর করুণার বারতা ঘোষণা
করবে দুনিয়াময়।

হাসি নিয়ে কবিতা

🖤🖤 বেশি হাসি 🖤🖤

হাসতে হাসতে অন্ধ,
মুখটা তার বন্ধ,
চোখটা গেলো বুজে,
বেশি হাসে অকাজে।
হাসলেই হাসি, বাড়ে বেশি,
হাসতে নেই মানা,
জীবন যদি থেমেও যায়,
হাসি যাবে না থামা।
তাই তো ভাই, হাসতে হবে,
থাকতে হবে ভালো,
অন্ধকারে একা হলে,
দেখবে তুমি আলো।
দুঃখ গুলো যাবে ঢেকে,
সব হাসির আড়ালে।
দেখবে তুমি আছো ভালো
সব পরিস্থিতি সামলে।

🖤কোথায় পেলে এমন হাসি🖤

কোথায় পেলে এমন হাসি?
যে হাসিতে জোছনা ঝড়ে!
যেই হাসির আলোক বরণ
ঝলমলিয়ে মর্ত্যে পড়ে।

কোথায় পেলে এমন হাসি?
যে হাসিতে জুড়ায় হৃদয়,
যেই হাসির আবরণে
দূর হয়ে যায় সব ডর-ভয়।

এমন হাসি পেলে কোথায়
যে হাসিতে ফাগুন উড়ে,
যেই হাসির সুরের টানে
পাখিরা সব গান করে।

পেলে কোথায় এমন হাসি?
যে হাসিতে বর্ষা আসে,
যেই হাসির ভালোবাসায়
মেঘগুলো সব ভাসে আকাশে।

কোথায় পেলে এমন হাসি?
যে হাসিতে গোলাপ ফুঁটে,
যেই হাসিরই সুবাস পেয়ে
ভ্রমররা সব আকুল ছুটে।

এমন হাসি পাও যদি ভাই
আঁকড়ে রেখো মন মাঝে,
হারিয়ে গেলেই আসবে আঁধার
ঢাকবে হৃদয় কালো সাঁঝে।

🖤তোমার হাসি🖤

তোমার হাসিতে
ধরিত্রী থমকে যায়।
তোমার হাসিতে
পথভোলা পথিক-
পথ খুঁজে পায়।

তোমার হাসিতে
বাগানে ফুল ফুটে।
তোমার হাসিতে
দিগন্তের শেষ্প্রান্তে-
লাল সূর্য উঠে।

তোমার হাসিতে
পাখিরা গান গায়।
তোমার হাসিতে
আকাশের তারাগুলো-
আলোর দেখা পায়।

তোমার হাসিতে
নদীর রেখা বয়।
তোমার হাসিতে
সমুদ্রের তীরঘেষে-
পাহাড়ের জন্ম হয়।

তোমার হাসিতে
পৃথিবীতে শান্তি আসে।
তোমার হাসিতে
বসুন্ধরা জুড়ে-
স্বর্গের সুখ ভাসে।

অমন হাসির জন্য মানুষের
ভালোবাসা রয়ে যায়।
অমন হাসির খোঁজে ধরায়
কবিতারা থেকে যায়।

🖤তুমি হাসতে বলেছিলে🖤

তুমি আমাকে হাসতে বলেছিলে আর
আমি চেয়েছিলাম তুমি আমার হাসির কারণ হও।
তুমি আমাকে ভালো থাকতেও বলেছিলে
আর আমি চেয়েছিলাম,
তুমি আমার ভালো থাকার সঙ্গী হও।
তুমি সুখ খুজেছিলে,
কিন্তু আমায় নিয়ে সুখি হতে চাও নি।
আমি ভালো বেসেছিলাম,
তুমি ভালোবাসার হিসেব কষতে বসেছিলে।
আমি তোমাকে নিয়ে আকাশ হতে চেয়েছিলাম,
তুমি আমাকে মেঘও কল্পনা করো নি।
আমি তোমায় নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম
আর তুমি,অন্য কাউকে নিয়ে।
তুমি আমায় হাসতে বলেছিলে,
কিন্তু আমার হাসির কারণ হতে চাও নি।
আফসোস!! আমি ভালো বেসেছিলাম…

প্রেমের কবিতা

এটাই কি আমার বড় ভুল, তোমাকে ভালবাসা 

 

স্ম্রৃতির একটা পাতা উল্টিয়ে দেখলাম,
গৌরবময় স্বর্ণালী দিন বিগত, বুঝলাম!
তুমিই ছিলে একমাত্র আমার মানষপটে,
যাকে নানাভাবেই সাজিয়েছিলাম অকপটে!
তোমাকে তো ভালবেসেছিলাম আমি সীমাহীন,
যে ভালবাসার থাকার কথা ছিল অমলীন!

আমার দিনের সূত্রপাত হত তোমার নাম দিয়ে,
এইত আমাদের ভালবাসা, কথা হত যা নিয়ে!
ভালবাসার মাঝে হারিয়েছিলাম এমন করে,
নিজেকে ধ্বংস করেছিলাম নিজ হাতে ধরে!

তোমাকে পাবার জন্য নিজেকে করেছিলাম বিচ্ছিন্ন,
সামান্য আবেগেও নিজেকে করেছিলাম পূর্ণ আচ্ছন্ন!
আমাকে দেখতো সবে মবে সন্দেহের প্রলেপ নিয়ে,
আমি যে সেটা সহ্য করতে পারতাম না কোনভাবে!
অন্ধ ভালবাসা আমাকে পরিবার থেকে করেছিল দূর,
ভেবেছিলাম শুধু তোমাকে নিয়েই বাঁধব নতুন সুর!

আমি কি ভাবতে পেরেছিলাম এই আমূল পরিবর্তন?
আমার ভালবাসায় করতে হবে আমায় পৃষ্ঠ প্রদর্শন?
আমি সেদিন বুঝি নাই প্রেম তোমার কাছে খেলা-
আর এটাই যে আমার বড় ভুল, তোমাকে ভালবাসা।

 

কুমার জীবন 

 

একজন পুরুষের জীবনে রয়ে গেছে কিছু ভাগ,
যার মধ্যে কোনটার জন্য মনে থাকে অনুরাগ!
যখন সেটা পার হয়ে যায়, মনে থাকে কষ্ট:
কভু ফেরানো যাবে না সেটা, তা তো সুস্পষ্ট!
মাত্র একবারই জীবনে আসে সেই সুবর্ণ সময়,
কুমার জীবনই সেটা, যদি কেউ তার নাগাল পায়!

এটা সেই জীবন যেথা মানুষ পায় কিছু উত্তালতা,
এটাই সেই সময় যখন সে পায় না বলার স্বাধীনতা।

কুমার জীবন উপভোগ্য কিন্তু যে ভোগ করতে পারে,
বিয়ের পরে যা হারিয়ে যেতে পারে কিন্তু চিরতরে!
জীবনের সুবর্ণ সময়গুলো তো আসে না বারবার,
তাই চেষ্টা কর এর পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করার!

বৈবাহিক জীবনে অনেক সময় এসে যায় জটিলতা,
নিজের দিকে নজর দেবার তখন আর সময় কোথা?
অনেক ছেলেই আগে ভাগে বুঝতে পারে না এটা,
বুঝে তখনই যখন জটিল আকার ধারণ করে সেটা!

বিয়ের পরে একটা ছেলের জীবনে আসে পরিবর্তন,
কিন্তু সেটা সে বোঝে না যখন সময়ের হয় সংক্ষেপন!
নিজের আবেগ অনুভুতিগুলোর দিও না অকাল সমাধি,
মুল্যায়ন করতে শেখ কুমার জীবনের সংক্ষিপ্ত কালবিধি।

 

আমার চারপাশে 

 

আমি বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছি
কি হচ্ছে আমার চারপাশে,
এটা আমার জন্য সুখকর কিছু নয়
তাতে কার কি যায় আসে?

এখন আমি বসে আছি
বিশাল সাজানো একটা ঘরে,
চেয়ার, টেবিল সবই আছে-
কিন্তু আমি যে নই নিজ গৃহে!

অনেক্ষন ধরে চেষ্টা করছি
কে কি বলে সেটা শুনতে,
কিছুই লাগছে না ভাল,
কিছুই পারছি না বুঝতে!
একটা সময় আসবে এমন
যখন সব হবে আমার গিলতে,
নাহলে তো কেউ পারবেনা,
আমার পতন ঠেকাতে!

খুব বিরক্তিকর ঠেকছে আমার
আমি চলে হেতে চাই এখন,
কার কাছে লাগছে ভাল
সন্দেহ আছে বিলক্ষণ!
আমার ঘর আমাকে ডেকে চলেছে,
আসছে ঘুম চোখ জুড়ে,
কিন্তু আমি যদি চলে যাই তবে
আমার পতন হবে পাতাল ফুঁড়ে!

আমার চারপাশের বন্ধুরা সব
মনোযোগ দিয়ে শুনছে,
কিন্তু আমি তা পারছি না দেখে
আমার খুব ভয় করছে!
পড়তে আমার লাগে না ভাল
তার পরেও আমি বাধ্য,
কবে যে মুক্তি পাব আমি,
বলতে কার আছে সাধ্য?

চারিদিকে তাকিয়ে দেখি আমি
আমার আশেপাশের মানুষগুলা
এরা সবাই খুব সাবধানী,
আর অসাধারণ সব পড়ুয়া!
আমার কাছে সব কিছুই এখন
লাগছে ভীষন বোঝা,
তবুও বলতে পারি না, ক্ষমা কর
আর পারিনা সইতে এ সাজা।
চেষ্টা করে যাচ্ছি জেগে থাকতে,
দেখে আর শুনে যেতে-
এখনও বুঝতে চেষ্টায় আছি
কি ঘটছে আমার চারপাশে!

 

পুরানো চিঠি 

 

বাসার গেটে এসে থামলো
নীল রঙের একটা গাড়ী,
দেরী হয়নি মোটেও
আসতে তার বাড়ী!
একজন মানুষ নেলে এল
হাতে ব্যাগের বোঝা,
মাঝবয়সী মানুষ উনি,
দেখতে সরল সোজা!

ধীর পায়ে হেটে চলেন
সামনে বন্ধ দুয়ার-
নিঃশব্দে এগিয়ে যান,
লোক আসবে খোলার।
মৃদু চাপে উনি যখন
বাজিয়ে দিলেন ঘন্টা,
রহস্যময় এক ঘটনা
যা চঞ্চল করবে মনটা!

বয়স্কা এক মহিলে বলেন,
কে আছে ওখানে?
লোকটা তখন বলে ওঠে,
মা! আমিই দাঁড়িয়ে এখানে।
আনন্দের আতিশয্যে মা তখন
হয়ে যান বোকা,
খুশি হয়ে বলে ওঠেন,
আয় রে আমার খোকা!

অশ্রুসজল নয়নে মা বলে,
এতদিন পর এলি খোকা?
এতদিন কোথায় ছিলি তুই?
দিয়ে আমায় ধোঁকা?
মাকে জড়িয়ে ধরে লোকটি,
কপালে দেয় চুম!
তোমাকে ছেড়ে মা আমার
চোখে ছিলনা ঘুম।

বাবা, রিশ্রাম নে।
মা ওঠেন বলে,
ঠিক যেন ছোট্ট পাখি
সাঝেঁ নীড়ে ফেরে।
গোসল সেরে উনি
হয়ে ওঠেন সতেজ,
সারা বাড়ীজুড়ে যেন
ফুলের সুরভী আমেজ!
এরপর উনি যখন
সেরে ওঠেন প্রার্থনা,
মা তখন নিয়ে আসেন
খাবার ভর্তি খাঞ্ছা।

মা তো বানিয়েছেন
অনেক রকম খাদ্য,
অতুলনীয় সেগুলো যে
সবকিছুই অনবদ্য!
মা বলেন, ২০ বছর আগের
চিঠি একটা আছে পুরান,
তুই হয়ত বুঝবি,
জানবি কার নাম।

বহু বছর হয়ে গেল
যখন আমি গেলাম,
অনেক বছর পার করে
ঠিকি ফিরে এলাম।
ঠিক, মা বললেন
দিয়ে একটু হাসি।
চিঠি টা দাও তো,
খুলে তবে দেখি!
হলুদ খামে মোড়া চিঠি
লেখাগুলো ঝাপ্সা-
মনে পড়ছে না কিছু
ক্লান্তিতে সব আবসা!
বালিসে হেলান দিয়ে ওটা
চেষ্টা করেন দেখা-
লেখা দেখে মনে হয় যেন
কোন কাঁচা হাতের লেখা!

ভাল করে দেখার পরেও
ঠাহর হল না কিছুই,
স্মৃতির পাতা হাতড়ে গিয়ে
হতাশ হলেন শুধুই!
এক ঝটকা আলোর মত
কি যেন এল মনে,
দুঃখে ছেয়ে গেল মুখ
চিঠির পানে চেয়ে।
কেউ তো জানে না
কি ছিল লেখা,
জানে শুধুই সে-
যে পেয়েছে দেখা।

এরপর যে কি হল
তা নেই কারো জানা,
কবিতায় যে সব কথা
বলতে আছে মানা।

 

নতুন নয়ত কিছু! 

 

আজ আমার শরীর খারাপ লাগছে
মনে হচ্ছে যেন জ্বর এসেছে গায়ে,
এমনটা তো হয়নি কখন আগে:
ভাল লাগছে না কিছুই ডানে বায়ে!

সারাদিন ধরে নামলো অঝরে বৃষ্টি,
ক্ষণিকের তরেও হয়নি ক্ষান্ত,
ভেবেছিলাম একটু বাইরে বের হব
যদি মনটা একটু হত শান্ত!
ছাত্রাবাসে সারাদিন একাই অলস বসে
পৌঁছে গেলাম বিরক্তির শেষ সীমায়,
আমি এখান থেকে মুক্তি পেতে চাই,
সেই পথ কে দেখাবে আমায়?

এরুপ বৃষ্টিভেজা দিনের কথা
মনে পড়ে যায় ক্ষনে ক্ষনে,
ঘরের কথা মনে পড়ে যায় যেথা
ঢলে পড়তাম ঘুমের ঘোরে!
আর মনে পড়ে কিছু সুস্বাদু খাবার
যা খেতাম আমার নিজের ঘরে,
এর কিছু গল্প উপন্যাস এর বই-
যার কাহিনী আজো মনে পড়ে!

সময়ের এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে
আগের মত নেই যে আর কিছু,
অতীত-বর্তমানের মাঝে ভবিষ্যত
দেয়াল টেনে দিয়েছে পিছু পিছু!
আমার নিজেকে বড়ই অসহায় লাগে
তুমি কি বুঝতে পারছ আমার যন্ত্রনা?

দুর্ভাগ্যেরর আবরণ আমাকে জড়িয়ে নিয়ে
দিয়ে গেছে কিছু নির্মম বিড়ম্বনা!
কেই যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করে,
কেমন আছ হে বন্ধু?

দক্ষ অভিনেতার মত আমি বলে উঠি,
আগের মতই! নতুন নয়ত কিছু!

 

তোমার তরে হাসিমুখে 

 

একদিন দেখেছিলাম সুন্দর এক স্বপ্ন,
নদীর তীরে আমরা বসেছিলাম মগ্ন!
যখন তুমি ধরেছিলে আমার হাত-
পুষ্পসম প্রস্ফুটিত হয়েছিল প্রভাত!
কানে কানে বলেছিলে চুপি চুপি-
মৃদু বাতাস করেনি কোন কারচুপি!
আমার হৃদয়ে লেগেছিল এক সাড়া-
তুমিই আমার অন্তরে দিয়েছিলে নাড়া!

তোমার জন্য ফুল তুলতে চাইলাম একটি,
তখন শুরু হয়ে গেল মুশল ধারে বৃষ্টি!
আমি তোমাকে বলেছিলাম, এস প্রিয়তম!
লজ্জা পেয়ে তুমি হয়েছিলে অবনত!
আমার জীবনে তুমি দিয়ে দিয়েছো দোলা
আমার জীবনে যদিও ছিল কত ঝামেলা!
তোমাকে কত ভালবাসি, এটা রেখ স্মরণ,
তোমার তরে হাসিমুখে মৃত্যু করবো বরণ।

 

কষ্টকে জয় করতে 

 

আমদের এই জীবনটা খুব সংক্ষিপ্ত,
তবুও কেন একে অন্যের প্রতি ক্ষিপ্ত?
আমরা পারি একে অর্থবহ করে তুলতে,
আমার পারি সব কষ্টকে জয় করতে!
ভবিষ্যতের জন্য আছে কিছু স্বপ্ন-
সেটা যেন না হয় আঁধারে নিমগ্ন!

প্রত্যেককে দিতে হবে তাই কঠোর শ্রম,
সুন্দর পৃথিবীর জন্য না থাকুক কোন ভ্রম!
এস বন্ধু! সবে মিলে দুঃখকে জয় করি,
সকল জরা ভুলে এক সুন্দর পৃথিবী গড়ি!

 

তুমিই আমার ভুবন 

 

আমাদের ভূবনে থাকবে না কোন বেদনা,
থাকবে না কোন বিরহ আর দেনা-পাওনা!
তোমাকে ছেড়ে আমি কখনও দূরে যাবোনা,
তোমার ব্যাপারে আমি পিছপাও হবোনা!

ঢেকে রাখবো তোমায় দিয়ে সব ভালবাসা,
প্রমাণ করতে পারি, তুমিই আমার আশা!
আমার জীবনে তুমি এনে দিলে পরিবর্তন,
তোমার জন্য আমার সব! এটা রেখ স্মরণ!

তোমার হৃদয়ের মাঝে আমায় দিও আসন,
তুমিই আমার ভালবাসা, তুমিই আমার ভুবন।

 

একাকী পথচলা 

 

চিন্তা করেও ভেবে পাইনা কি লিখবো-
মনের মধ্যে পাই না কোন আশার আলো!
একা একা হাঁটি আমাই দিনভর বারান্দায়,
পৌঁছাতে পারলাম না জীবনের কিনারায়!
যন্ত্রে রুপান্তরিত হচ্ছে আমাদের এই জীবন,
যন্ত্রের মধ্যেই বাঁচা আর যন্ত্রের মধ্যেই মরণ!

মাঝে মাঝে ভুলে যাই আমার নিজের অস্তিত্ব,
খালি কামরায় যখন গুমরে মরে সব আমিত্ব!
যন্ত্রমানব হয়ে গিয়েছি! উপায় নেই ফেরার!

জীবন প্রত্যাশী? কিন্তু কিই বা আছে পাবার?
কখন মনে হয় আমি ফিরে আসবনা আবার-
ভাবি আমি পথ কি খোলা আছে চলে যাবার?
কন্টকময় স্বর্গে আমি নিজেকে করলাম আবিস্কার,
একাকী পথচলায় এটাই আমার প্রাপ্য পুরস্কার!

 

শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায় 

 

যদি তুমি বলো তবে আমি আকাশ ছুঁতে পারি,
সুদূর আকাশে পাখির মত ডানা মেলে উড়ি!
আকাশ থেকে তোমার জন্য তারা এনে দেব,
তোমার জন্য ভালবাসা বিলিয়ে আমি যাব!

… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
পাহাড় অতিক্রম করতে পারি যদি তুমি বলো,
তোমার জন্য ভালবাসা মোর হবেনা টলোমলো!
পাহাড় খুঁড়ে তোমার জন্য আনব নীল-কমল!
এটাই আমার দৃঢ় পণ! হতে দেব না দুর্বল!
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
যদি তুমি বলো সাগর পাড়ি দেব সাঁরতে!
তোমার হাসি আমার সকল কষ্ট দেয় উতরে।
সাগরের তল থেকে আমি এনে দেব মুক্তো,
আমি জেনেছি আমার জীবনে তুমি আছ যুক্ত!
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
যদি তুমি বলো দেব পাড়ি বিশাল মহাশুন্য –
তোমার সঙ্গ আমার একাকীত্বকে করবে পূর্ণ!
পৃথিবীর সকল সুখ এনে দেব তোমার জন্য,
তোমায় ভালবেসে আমার জীবন হল ধন্য!
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
কত ভালবাসি তোমায় যদি তুমি জানতে-
কখনও দেখেছ কি ক্ষুদ্র শিশির বিন্দু?
জ্বলজ্বল করে ওঠে প্রভাত রবির কিরণে!
আমার ভালবাসা তেমনি উজ্জ্বল হে বন্ধু!
হৃদয়ের দহন কি বুঝতে পারছো না তুমি?
আমায় ছেড়ে যদি যাও, কিভাবে বাঁচব আমি?
আমার দিকে তাকিয়ে একবার বল আমায়-
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়!
… … …
শুধু একবার বলো, ভালবাসি শুধুই তোমায়

 

কিছু ভুল 

 

আমি মাঝে মাঝে কিছু ভুল করে ফেলি,
কিন্তু আমি জানি ওগুলো নয় সব মেকি!
হতে পারে এটা আমার অবহেলা-
কিংবা হতে পারে আমি বড় বোকা!
আমি কিন্তু মানুষটা নই এত খারাপ,
আমার লেখায় ঝরে পড়ে সব অনুতাপ!

মনের ভিতর থেকে তাড়িয়ে দিও না আমায়,
হারিয়ে যাব তাহলে আমি সুদূর নীলিমায়!
আমার তরে তুমি বন্ধ করে দিও না দুয়ার,
বাঁচবোনা আমি যদি অবহেলা পাই তোমার।

 

বাস্তব জীবন 

 

এই মুহুর্তে আমি ভীষণ বিরক্ত,
কম্পিউটার ভাইরাস করছে উত্যক্ত!
পারছিনা কোন কাজ ঠিকমত করতে,
কিভাবে করবো তাও পারছিনা জানতে!
একবার ভাবি সবকিছু ধুয়ে মুছে ফেলি,
চাইলেও কি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি?
ঝামেলার সাথে যুক্ত আছে কম্পিউটার-
বলতেও পারছিনা, এটা কোন ব্যাপার!

আমাদের জীবনেও কত সমস্যা রয়ে গেছে,
সেগুলোর অনেকটাই অসমাপ্ত হয়ে আছে!
আমারা তো নই মানুষরুপী কোন যন্ত্র,
বিকল হলে ঠিক করে দেবে কোন মন্ত্র!

আমাদের আছে আবেগের ছটা আর ভালবাসা,
আরও আছে আমাদের জীবনের কত আশা!
সামাজিক জীব হিসাবে আছে কত দায়িত্ব,
ঘরে বাইরে সবখানেই আছে কাজের গুরুত্ব!

এর পরে আছে কত সমস্যা! এড়ানো নাহি যায়,
চালাক মানুষগুলো ঠিকিই তো এড়িয়ে চলে যায়!
খুব সহজেই তো আমার কম্পিউটার বদলে ফেলি,
কিন্তু জীবনের সমস্যাগুলো কিভাবে এড়িয়ে চলি?

Bangla Love Poem

আজকে আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বাছাই করা Bangla Love Poem। আসা করছি আজকের এই পোস্টটা আপনাদের ভালো লাগবে।

New Bangla Love Poem

“যত দূরে যাওনা কেনো আছি
তোমার পাশে,
তাকিয়ে দেখো আকাশ পানে,
ঘুম যদি না আসে।
কাছে আমায় পাবে তুমি
হাত বাড়াবেই যেই,
ঘদি না পাও,
জানবে সেদিন আমি আর নেই।”

“ভালোবাসা তো যায়না টাকা
দিয়ে কেনা, ভালোবাসা তো
যায়না হীরা মুক্তা দিয়ে গড়া।
দুটি মনের আকুলতায় যে বন্ধন হয়,
তাকেই তো ভালোবাসা কয়।”

“আমি একটা দিন চাই
আলােয় আলােয় ভরা।
আমি একটা রাত চাই
অন্ধকার ছাড়া।
আমি একটা ফুল চাই
সুন্দর সুবাস ভরা।
আর একটা ভালাে বন্ধু চাই
সবার চেয়ে সেরা।”

“যত দূরেই যাইনা কেনো..
থাকবো তোমার পাশে।
যেমন করে শিশির ফোঁটা..
জড়িয়ে থাকে ঘাসে,
সকল কষ্ট মুছে..
দেবো মুখের হাসি,
হৃদয় থেকে বলছি..
তোমাকেই ভালোবাসি।”

“মনে পরে তোমাকে
যখন থাকি নীরবে,
ভাবি শুধু তোমাকে..
সব সময় অনুভবে,
সপ্নে দেখি তোমাকে..
চোখের প্রতি পলকে,
আপন ভাবি তোমাকে..
আমার প্রতি নিঃস্বাসে ও বিশ্বাসে।”

“চুপি চুপি বলছি তোমায়..
কাউকে বলো না।
এত সুন্দর লাগছে তোমায়..
হয় না তুলনা।
কি সুন্দর ঠোঁট তোমার..
কি সুন্দর আঁখি।
যে দেখবে সেই বলবে..
আমি তোমায় ভালোবাসি।”

“চোখের আড়াল হতে পারি
মনের আড়াল নয়।
মন যে আমার সব সময়..
তোমার কথা কয়।
মনকে যদি প্রশ্ন করো..
তোমার আপন কে ?
মন বলে, এখন
তোমার লেখা পড়ছে যে ।”

“তােমার জন্য রইলাে আমার..
স্বপ্নে ভেজা ঘুম ,
একলা থাকা শান্ত দুপুর..
রাত্রি নিঝুম,
তােমার জন্য রইলাে আমার..
দুষ্ট চোখের ভাষা,
মনের মাঝে লুকিয়ে রাখা ..
অনেক ভালোবাসা।”

“মিষ্টি মিষ্টি SMS দিয়ে
কেড়ে নিলে মন ,
তােমায় দেখতে ব্যাকুল বন্ধু..
আমার দুনয়ন ।
মন বসেনা কোনাে কাজে..
ভাবি গাে তােমারে ,
বল না বন্ধু কি জাদু
করলে তুমি আমারে।”

“চোখে চোখে কথা বল..
হৃদয়ে রাখ হৃদয় ।
মনে মনে ভাসি চল..
হয়ে যাক না প্রণয় ।
বুকের ভেতর তোমার জন্য..
মাতাল হাওয়া বয় ।
অনুভবে না বলা কথা
বুঝে নিতে হয় ।”

Bangla Love Poem for Wife

এক নতুনত্ব – জাহিদুল ইসলাম জীহাদ

দৃষ্টি পড়ে যখনি,তুমি বদলেছো প্রতিনিয়ত,
এক নতুনত্ব।
কোনটা যে তোমার আসল সৌন্দর্য
কোন রুপে আছে সত্য।
কখনো গহীন অরন্যে শানকি হাতে জল
দিচ্চ বৃক্ষের পুষ্পের গাত্রে।
কখনো যান্ত্রীক থেকে হস্ত নড়ছে,
কাউকে নামিয়ে স্কুলে।
কখনো দাঁড়িয়ে শির নত করে,
ছাড়াচ্চো গোটানো শাড়ি।
কখনো দর্পনে খুটিয়ে দেখছো,
শুভ্র দাঁত,গোলাপি ঠোঁট।
কখনো কেদারায় বসে,
বিলি কাটছো জটিল রুক্ষ চুলে।
কখনো বাথটাবে গোড়ালী ঘষচ,
সংগীত গেয়ে দুলে দুলে।
কখনো রুপচর্চা সিদুঁরের সাথে রঙ্গে
সাজাও দুই ঠোট।
কখনো চিরকুট লিখতে মহীয়ান,
খেয়ে যাও চিন্তার হোছট।
কখনো গোছাও মনিবদ্ব বাঁধা,
শাখা,পলা,নোয়ায়।
কখনো হস্তে নিয়ে গল্পের পুস্তক,
মানশিকতা নেই সেটা পড়াই।
কখনো কপাটে উদাসী মুখ,
চোখে মেলে আদিগন্ত দৃষ্টি।
গহীন রাত্রিতে নির্ভাসীতা তুমি,
আদিম আদমের সৃষ্টি।
বারি,নীর,পুষ্প,গাড়ী,কুন্তল,স্কুল,
চিকুর বাথটাব শাড়ী।
সিদুঁর,দর্পন,মাড়ি,চিরকুট,
কবিতায় চিন্তার পাড়ি।
মনিবদ্ব পালা,শাখা নোয়া,
এক এক তোমার কোয়া,
মিলনাত্বের শখ মিটায় না,
তোমার হাজারো গাত্র ছোয়ায়।
খরিদ করব লেন্স,তুলব মানব চিত্র,
এ কথা ভাবতে ভাবতে,
অন্তরীক্ষে চলে গেল চিরতরে মহূর্ত,
অচির সময়ে ঘূর্ণি আবর্তে।
জানা ছিল না অন্তর নয়নের,
আদি পিনহোল ক্যামেরা।
তুলেছো চিত্র,সোনালী একই,
নিয়ে তার বিবর্তমান চেহারা।
তাতে তোলা চিত্র একটাই
, কিন্তু যখনি তাতে লোচন পড়ে
হৃদয়ের মধ্যে কপাট খোলে আমার
কল্পনাকারী দুই আঁখি।
সে কল্পনারাজ্যে উজ্জীবিত তুমি,
খসিয়ে লজ্জার নির্মোক।
খুলেছো কলরাজ্য,মেলেছো ডানা
জ্ঞানশূন্য মুগ্ধ চোখে।
দেখতে দেখতে দেখি বদলায়
সেই চিত্রটি নীতি-নৃত্য,
সে সবেতে আছে নানান রুপ
সব রুপই লাগে চির সত্য।

 প্রত্যাশা – আমিনুল ইসলাম

পুষ্প হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আমি,
নীল পরী রুপে হয়তো সামনে এসে দাড়াবে তুমি,
সব ভালবাসা প্রকাশ করতে না পারলেও
তোমাতেই বিভোর হব আমি।

নীলকষ্ট দূর করবো আমি মহাবীর,
মাখিয়ে দেবো তোমায় প্রেমের আবির(রং)।

তোমার মধুর কন্ঠ ধ্বনি ঝরবে যখন,
ভালবাসার ঝুড়িতে কুড়িয়ে তা আমি রাখবো তখন।
থাকবে দুজনার মাঝে রাগ,অভিমানের শত প্রহসন,
তোমার আমার মধুর সৃতিগুলো যত্বনে অন্তরে থাকিবে আজীবন।

তোমার কাজল-কালো চোখের পাতা,
জাগিয়ে তোলে আমার এ মনে প্রেমের উষ্ণতা।
তোমার ঐ কাজল কালো চোখ,
ঐটাতে তাকাতেই পাই আমি স্বর্গীয় সুখ।
তোমার প্রতি এ ভালবাসা শেষ হবে না মরিয়া,
আজীবন রাখিবো তোমায় অন্তরে বাধিয়া,
অভিমানের বেলায়
ভাঙ্গাবো অভিমান সাধিয়া সাধিয়া।

তোমাতে আমি বিভোর হব বারে বার,
যতদিন চলে এ শ্বাস-প্রশ্বাস।

আমার প্রথম বসন্তে তুমি – Azadlal Horejan

আমার প্রথম বসন্তে তুমি,
প্রথম মানুষ,
প্রথম বাড়িয়ে ছিলে হাত,
দিয়ে ছিলে ফুল,
আমার প্রথম র্বষায় তুমি,
প্রথম সাথী ।
মিলনে বাড়িয়ে ছিলে হাত,
দেখিয়ে ছিলে সুখস্বপ্ন,
আমার এ সুপ্ত হ্রদয়ে,
শুধু তোমার ভাবনা,
আমার প্রথম বসন্তে,
প্রথম প্রেম।

আর দুদিন পরেই বালিকা কড়া নেড়েছিল -তৌকির হোসেন

আর দুদিন পরেই বালিকা কড়া নেড়েছিল!
কড়াটির তপ্ত শ্বাস শীতল আবেগিক বালুকার
কণা ছড়িয়েছিলো দিগ্বিদিক।
নীল শার্টটার চটে যাওয়া অংশে ঘেঁষে যাওয়া শরীরের মিশে যাওয়া গন্ধ লেপ্টে আছে।
যে গন্ধে মেশা জুলাইয়ের সকালের রোদ, লালখানের ধুলো আর ঘামে ভেজা কপাল।
যে গন্ধে মেশা দুজনের আঙ্গুল, ঘষতে থাকে একে ওকে।
মাঝে মাঝে।
বারে বারে।
নষ্টালজিয়ার দীর্ঘ কাটা ফিল্মের সেই দীর্ঘশ্বাসময় ইতিহাস
আর দুটোদিন পরেই রচিত হয়েছিল।
সেই ইতিহাস ছিলো কয়েকটি বিকেল,
কয়েকটি সন্ধ্যা।
মগপুকুরের রাতের নির্জন পাড়।
যে রাতে আমিও একাত্মতায় মিশে ছিলাম ফের কিছু কথা বলা ব্যস্ত লোকগুলোর সাথে।
ওপার থেকে ভেসে এসেছিল কিছু রুদ্ধশ্বাস,
হাঁপানি রোগের টান, জড়িয়ে থাকে ভালোবাসা, অন্ধ নেশা, ছায়াজলের বিদিশা।
অকস্মাৎ পুকুরে আন্দোলন, ফিল্মের কাটা পড়া দেহ, প্রেমপত্রের সাহিত্য-
জেগে থাকে দুদিনের তরে, স্মৃতিতে নিরলস
যে দুদিন পরেই রচিত হয়েছিলো একটি দীর্ঘশ্বাসের ইতিহাস!
তুমি ভালো আছ?
ভালো আছে তোমার ইতিহাস?

ঋতুরাগ -বিবেক রঞ্জন বসু

মাথার ওপর সূর্য ঝরায় লোহিত অভিমান,
তোমার প্রখর রূপের ছটায় সেও বুঝি আজ ম্লান।
আগুন-রাঙ্গা আলতা পায়ে দাঁড়ালে আলসেতে,
এসেছিলাম অনেকটা পথ তোমার দেখা পেতে।
চুপ পাখিরা ক্লান্ত পাখায় এঁকেছে রোদ্দুর,
শুকনো ঘাসে সুর তুলে যায় খেয়ালী নুপুর।
ইচ্ছে-নদীর বাতাসে তাই দারুন উচাটন,
সেদিন তোমার নুপুরেতেই হারিয়েছিলাম মন।

তুমি আমি আজ মুখোমুখি- তানজিলা ইয়াসমিন

তখনো ভোরের আলো আকাশের বুক চিড়ে পৃথিবীর বুকে উঁকি দেয়নি:
সূর্য তার ভালোবাসা নিয়ে মেঘের বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে,
প্রকৃতি হয়তো কিছু ঘটার অপেক্ষায় সমীরণের ঘনঘটা দিয়ে যাচ্ছে:
এমন আলো আঁধারির মিষ্টি আলোয় দুই তৃষ্ণার্ত-
হৃদয়ের ভোরের বুকে চুপিচুপি পাশাপাশি হেঁটে চলা,
সাদা বলাকার দল দেখো কি ভালোবাসার ছোঁয়ায় উড়ে চলেছে,
শেষ কবে দুজন এভাবে পাশাপাশি হেঁটে গিয়েছে
এখন আর স্মৃতিতে তা ছায়া হয়ে আসে না!
ভালোবাসার তীব্রতা বুঝি এতটাও মাতাল হয় :
এই ভোর না হওয়া মিষ্টি আলোতে সন্তর্পনে
দুজনের কি আবেগী মুহূর্তের নীরব প্রকাশ,
ও চোখ! আজ তুমি আলোতে হারাবে না:
আজ আমি দেখবো তাকে
কতদিন কতরাত কত বছরের অপেক্ষার ক্ষণ আজ বাস্তব!
তুমি আমি আজ মুখোমুখি- দেখো এই আলো আঁধারি আজ
আমাদের তার হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে বরণ করেছে:
ভালোবাসা চলনা আজ আমরা দুজন এই আলো আঁধারির মাঝে-
আমাদের তৃষিত ভালোবাসা সমর্পন করে আবার নতুন আলোর পথে হেঁটে যাই,
আমার খোলা চুলের ঘ্রাণের মাঝে তোমার সুপ্ত সুখ গুলো তুমি খুঁজে নেবে!

ভাবনার সুখ দুয়ার গুলো দেখো পুবের আলোর সাথে সাথে কেমন উজ্জ্বল হয়ে গেছে ,
তোমার নীরব হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে একটি কথা বলা-
বলো কখনো এ হাত ছেড়ে যাবে না ওই দূর নীলিমার মায়ার মতো,
বলো যাবেনা- তোমাতে ওই আলো আঁধারির মাঝে নিজেকে সমর্পন !

Bangla Love Poem for Girlfriend

বিবাহিতাকে – জয় গোস্বামী

কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি আমার সামনে দাড়ালেই আমি
তোমার ভিতরে একটা বুনো ঝোপ দেখতে পাই।
ওই ঝোপে একটা মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া আছে।
অনেকদিন ধরে আছে। কিন্তু আশ্চর্য যে
এই মৃতদেহ জল, বাতাস, রৌদ্র ও সকলপ্রকার
কীট-বীজাণুকে প্রতিরোধ করতে পারে। এরপচন নেই।
বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না।
রাতে আলো বেরোয় এর গা থেকে।
আমি জানি, মৃতদেহটা আমার।
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, এই জারিজুরি এবার ফাঁস হওয়া প্রয়োজন।
আর তা হবেও, যেদিন চার পায়ে গুঁড়ি মেরেগিয়ে
পা কামড়ে ধরে, ওটাকে, ঝোপ থেকে
টেনে বার করব আমি।

কথা আছে -সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বহুক্ষণ মুখোমুখি চুপচাপ, একবার চোখ তুলে সেতু
আবার আলাদা দৃষ্টি, টেবিলে রয়েছে শুয়ে
পুরোনো পত্রিকা
প্যান্টের নিচে চটি, ওপাশে শাড়ির পাড়ে
দুটি পা-ই ঢাকা
এপাশে বোতাম খোলা বুক, একদিন না-কামানো দাড়ি
ওপাশে এলো খোঁপা, ব্লাউজের নীচে কিছু
মসৃণ নগ্নতা
বাইরে পায়ের শব্দ, দূরে কাছে কারা যায়
কারা ফিরে আসে
বাতাস আসেনি আজ, রোদ গেছে বিদেশ ভ্রমণে।
আপাতত প্রকৃতির অনুকারী ওরা দুই মানুষ-মানুষী
দুখানি চেয়ারে স্তব্ধ, একজন জ্বলে সিগারেট
অন্যজন ঠোঁটে থেকে হাসিটুকু মুছেও মোছে না
আঙুলে চিকচিকে আংটি, চুলের কিনারে একটু ঘুম
ফের চোখ তুলে কিছু স্তব্ধতার বিনিময়,
সময় ভিখারী হয়ে ঘোরে
অথচ সময়ই জানে, কথা আছে, ঢের কথা আছে।

হঠাৎ দেখা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন।
আগে ওকে বারবার দেখেছি
লালরঙের শাড়িতে
দালিম ফুলের মতো রাঙা:
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে।
মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব সর্ষেখেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা:
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।
হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার।
সমাজবিধির পথ গেল খুলে,
আলাপ করলেম শুরু —
কেমন আছ, কেমন চলছে সংসার ইত্যাদি।
সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের দিনের ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,
কোনোটা বা দিলেই না।
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় —
কেন এ-সব কথা,
এর চেয়ে অনেক ভালো চুপ করে থাকা।
আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে।
এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে।
মনে হল কম সাহস নয়:
বসলুম ওর এক-বেঞ্চিতে।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে,
*কিছু মনে কোরো না,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার।
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই:
দূরে যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই।
তাই যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে।
সত্য করে বলবে তো?
আমি বললেম, বলব।
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
*আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে,
কিছুই কি নেই বাকি।*
একটুকু রইলেম চুপ করে:
তারপর বললেম,
*রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।*
খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম না কি।
ও বললে, থাক্, এখন যাও ও দিকে।
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে:
আমি চললেম একা।

আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে – রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।
তেমনি তোমার নিবিঢ় চলা, মরমের মূল পথ ধরে।
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক , খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ।
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া, ভিতরের নীল বন্দরে।
ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।
দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটারে।
আমার ভিতরে বাহিরে………

প্রেমিক – জয় গোস্বামী

তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে গেছে।

আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতেদিচ্ছে না।

তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে সারাদিন।

এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …

অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!
তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।

এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …

অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!

 ছন্দরীতি– মহাদেব সাহা


তোমাদের কথায় কথায় এতো ব্যকরণ
তোমাদের উঠতে বসতে এতো অভিধান,
কিন্তু চঞ্চল ঝর্ণার কোনো ব্যাকরণ নেই
আকাশের কোনো অভিধান নেই, সমুদ্রের নেই।
ভালোবাসা ব্যাকরণ মানে না কখনো
হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো সংবিধান নেই
হৃদয় যা পারে তা জাতিসঙ্ঘ পারে না
গোলাপ ফোটে না কোনো ব্যাকরণ বুঝে।
প্রেমিক কি ছন্দ পড়ে সম্বোধন করে?
নদী চিরছন্দময়, কিন্তু সে কি ছন্দ কিছু জানে,
পাখি গান করে কোন ব্যাকরণ মেনে?
তোমারাই বলো শুধু ব্যাকরণ, শুধু অভিধান!
বলো প্রেমের কি শুদ্ধ বই, শুদ্ধ ব্যাকরণ
কেউ কি কখনো সঠিক বানান খোঁজে প্রেমের চিঠিতে
কেউ কি জানতে চায় প্রেমালাপ স্বরে না মাত্রায়?
নীরব চুম্বনই জানি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছন্দরীতি।

Best Bengali Love Poem

প্রেমিক জনের চিঠি – শ্রীজাত

ওই কথা কি এভাবে কেউ বলতে পারে?
হঠাৎ করে, সিড়ির বাঁকে, অন্ধকারে

নিশ্বাস নাক গন্ধ পোহায়, চনমিয়া…
ঘুপচি মতাে মুঠোর ভেতর একলা টিয়া

ছটফটাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। চাই না উড়ান?
ঠাকুর ঘরের চাল থেকে পাহাড়চূড়া?

ঠোটের উপর ঘাম মুছে নাও। ডাকছে নীচে।
নখের ঘরে কেটেছে হাত, ওষুধ মিছে।

বুকটুকুনির ওঠানামায় ধুকপুকুনি
জড়িয়ে নেওয়ার মন হলে কে ছাড়ত শুনি?

কিন্তু এখন সবটা ইচ্ছে করছে না যে
হয়তো হঠাৎ উড়ে টিয়া, ভিড়ের মাঝে…

এইটুকু তো অতৃপ্তি দাও প্রেমিক জনে,
একটা চুমু না-খাওয়া থাক, এই জীবনে!

কটি মেয়ের জন্য – রুদ্র গোস্বামী

একা ফুটপাথ
আলো ককটেল
ভিজে নাগরিক রাত পদ্য।

তুই হেঁটে যাস
কাঁচ কুয়াশায়
জল ভ্রূণ ভাঙা চাঁদ সদ্য।

আমি প্রশ্ন
তুই বিস্ময়
চোখ চশমার নীচে বন্ধ।

ঠোঁট নির্বাক
চাওয়া বন্য
আমি ভুলে যাই দ্বিধা দ্বন্দ্ব।

জাগা রাত্রি
ঘুম পস্তায়
মোড়া রূপকথা পিচ রাস্তা

পোষা স্বপ্ন
ছিঁড়ে ছারখার
প্রিয় রিংটোন লাগে সস্তা।

তুই সত্যি
আরও সত্যি
তুই শিশিরের কুঁড়ি পদ্ম।

বাকি মিথ্যে
সব মিথ্যে
চেনা চার দেয়ালের গদ্য।

গোপন প্রিয়া – কাজী নজরুল ইসলাম

পাইনি বলে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রাণি,
মধ্যে সাগর, এ-পার ও-পার করছি কানাকানি!
আমি এ-পার, তুমি ও-পার,
মধ্যে কাঁদে বাধার পাথার
ও-পার হতে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্ছানি,
আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁওয়াখানি।

নাম-শোনা দুই বন্ধু মোরা, হয়নি পরিচয়!
আমার বুকে কাঁদছে আশা, তোমার বুকে ভয়!
এই-পারী ঢেউ বাদল-বায়ে
আছড়ে পড়ে তোমার পায়ে,
আমার ঢেউ-এর দোলায় তোমার করলো না কূল ক্ষয়,
কূল ভেঙেছে আমার ধারে-তোমার ধারে নয়!

চেনার বন্ধু, পেলাম না ক জানার অবসর।
গানের পাখী বসেছিলাম দুদিন শাখার পর।
গান ফুরালো যাব যবে
গানের কথাই মনে রবে,
পাখী তখন থাকবো না ক-থাকবে পাখীর ঘর,
উড়ব আমি,-কাঁদবে তুমি ব্যথার বালুচর!

তোমার পারে বাজল কখন আমার পারের ঢেউ,
অজানিতা! কেউ জানে না, জানবে না ক কেউ।
উড়তে গিয়ে পাখা হতে
একটি পালক পড়লে পথে
ভুলে প্রিয় তুলে যেন খোঁপায় গুঁজে নেও!
ভয় কি সখি? আপনি তুমি ফেলবে খুলে এ-ও!

বর্ষা-ঝরা এমনি প্রাতে আমার মত কি
ঝুরবে তুমি একলা মনে, বনের কেতকী?
মনের মনে নিশীথ-রাতে
চুমু দেবে কি কল্পনাতে?
স্বপ্ন দেখে উঠবে জেগে, ভাববে কত কি!
মেঘের সাথে কাঁদবে তুমি, আমার চাতকী!

দূরের প্রিয়া! পাইনি তোমায় তাই এ কাঁদন-রোল!
কূল মেলে না,-তাই দরিয়ায় উঠতেছে ঢেউ-দোল!
তোমায় পেলে থামত বাঁশী,
আসত মরণ সর্বনাশী।
পাইনি ক তাই ভরে আছে আমার বুকের কোল।
বেণুর হিয়া শূন্য বলে উঠবে বাঁশীর বোল।

বন্ধু, তুমি হাতের-কাছের সাথের-সাথী নও,
দূরে যত রও এ হিয়ার তত নিকট হও।
থাকবে তুমি ছায়ার সাথে
মায়ার মত চাঁদনী রাতে!
যত গোপন তত মধুর-নাই বা কথা কও!
শয়ন-সাথে রও না তুমি নয়ন-পাতে রও!

ওগো আমার আড়াল-থাকা ওগো স্বপন-চোর!
তুমি আছ আমি আছি এই তো খুশি মোর।
কোথায় আছ কেমনে রাণি
কাজ কি খোঁজে, নাই বা জানি!
ভালোবাসি এই আনন্দে আপনি আছি ভোর!
চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর!

রাত্রে যখন এক্লা শোব-চাইবে তোমার বুক,
নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ,
দুখের সুরায় মস্ত্ হয়ে
থাকবে এ-প্রাণ তোমায় লয়ে,
কল্পনাতে আঁকব তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ!
ঘুমে জাগায় জড়িয়ে রবে, সেই তো চরম সুখ!

গাইব আমি, দূরের থেকে শুনবে তুমি গান।
থামবে আমি-গান গাওয়াবে তোমার অভিমান!
শিল্পী আমি, আমি কবি,
তুমি আমার আঁকা ছবি,
আমার লেখা কাব্য তুমি, আমার রচা গান।
চাইব না ক, পরান ভরে করে যাব দান।

তোমার বুকে স্থান কোথা গো এ দূর-বিরহীর,
কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির।
গোপন তুমি আসলে নেমে
কাব্যে আমার, আমার প্রেমে,
এই-সে সুখে থাকবে বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর?
দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না-ই বাঁধিলাম নীড়!

বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান,
মনে আমায় করবে না ক-সেই তো মনে স্থান!
যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে
করবে মনে, সে-দিন প্রিয়ে
ভোলার মাঝে উঠবে বেঁচে, সেই তো আমার প্রাণ!
নাই বা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেলে গেলাম গান!

হৃদয়ের ঋণ – হেলাল হাফিজ

আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,
খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলে
বেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর

বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাত
গচ্ছিত রেখে লাজুক দুহাতে আমি
কাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাত
অযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী,

একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদি
অমার্জনীয় অপরাধ হয় হোক,
ইতিহাস দেবে অমরতা নিরবধি
আয় মেয়ে গড়ি চারু আনন্দলোক।

দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
আয় না পাষাণী একবার পথ ভুলে
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ।

তুই কি আমার দুঃখ হবি – আনিসুল হক

তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?

তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।

তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।

তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?

Bangla Love Poem Photo HD Download

bangla love poem photo
bangla love poem hd
bangla-love-poem for wife hd images
bangla love poems download

Bengali Love Poem

আজকে আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বাছাই করা Bengali Love Poem। আসা করছি আজকের এই পোস্টটা আপনাদের ভালো লাগবে।

Best Bengali Love Poem

হয়তো আমি এখনও আধারে- নিশান বরুয়া

হয়তো আমি এখনও আধারে, তোমায় হাতরে বেড়াই
এখনও যেন সপ্নলোকে, তোমাকেই ফিরে পাই
হয়তো এখনও বেহায়া এ মন, লুকিয়ে আলতো করে
ভাবছে তোমায়, আঁকছে ছবি নিজেরই অজানায়
সবটুকুই হোক তোমার, যেন সূর্য ও চাঁদের মাঝে
লেখা থাক এ গল্পের ইতি নতুনের শব্দে
আমি হাটতে চাই, তোমার সাথে
শুরু থেকে এই পথের শেষে
হঠাৎ থমকে দিয়ে বলতে চাই,
ধন্য তোমায় ভালবেসে
ভালবেসেও মিথ্যে বলেছি, অজান্তেই অনেকবার
সবকিছু জেনে তবুও ভেবেছি তোমায়
ছিলেনা তুমি এ বৃত্তে আমার
বিধাতার কাছে চাইছি আমি
ক্লান্ত হয়ে আজ আনমনে
দিয়ে দাও আমায় সপ্নগুলো আমার
আজ যেন এই, নতুন এ আকাশ
চাইছে তোমায় এখানে,
বাতাসেরও এই নতুন শব্দে
সাক্ষ দেয়ার সুর প্রতিক্ষনে
তবে আজ কেন দিধা মনে
সব পূর্নতার পূর্বক্ষনে
ভেবে নিয়েছি তোমায় নিজের কর!!

ভালোবাসার প্রজাপতি – মো: নিজাম গাজী

কোন কাননে ফুটিলো ফুল এমন তাহার ঘ্রান,
ঘ্রান শুনে উছলে উঠে মম এই প্রান।
সুবাস শুনে প্রশ্ন জাগে কোথায় তাহার বাস,
কোন চাষী বা এমন করে করলো তারে চাষ।
ঘ্রান শুনে প্রানে মোর ধরলো ভীমরতি,
ইচ্ছে করে মানুষ থেকে হতে প্রজাপতি।
প্রজাপতি যেমন করে থাকে ওরে মিশে,
তেমন করে থাকতে চাই তোমায় ভালোবেসে।

Bengali Love Poem for Wife

প্রেমের সিম্ফনি – ধ্রুব নীল

যদি আজ রাতেই এ দেশে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হয়, যদি
কাল প্রভাতেই ক্ষমতার দখল নেন একজন আর্মি জেনারেল,
যদি তিনি আপাদমস্তক একজন ব্যর্থ প্রেমিক হন এবং ভুল
চোখে দ্যাখেন প্রতিটি রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘাতক প্রেমিকারা
। জ্যোৎস্নাঙ্কিত আকাশটায় যদি খুঁজে পান স্মৃতি বিজড়িত নষ্ট
চাঁদ, যদি ঘোষণা করেন নতুন অর্ডিন্যান্স, যদি তিনি নিষিদ্ধ
করেন প্রেম, প্রেমিকার প্রিয় ঠোঁট, ভীত প্রেমিকের প্রথম চুম্বন।
হুড তোলা প্রতিটি গণতান্ত্রিক রিক্সা যদি আতঙ্কগ্রস্ত হয়, যদি
তাদের তাড়া করে ক্ষুধার্ত কুকুররূপী গোটা চারেক মিলিটারী
ভ্যান, যদি সামরিক রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করা প্রচন্ড অসম্ভব হয়,
জাতীয় সঙ্গীত থেকে রাতারাতি বিলুপ্ত করা হয় অরুণরাঙা সে
অথেনটিক লাইন। যদি কারফিউ জারি হয় প্রতিটি পার্ক এবং
প্রতিটি নির্জন রেস্তোরাঁয়, যদি দাঙ্গায় ভরে ওঠে এই দেশ, গণ-
মিছিলে টিয়ার শেলের পূর্বেই বুকে বিদ্ধ হয় রক্তিম বুলেট, যদি
সময়টাকে ক্ষণে ক্ষণেই উনিশশ একাত্তর মনে হয়, প্রতিটি মিনিট
ভয়ের ট্রাউজার পরে হয়ে ওঠে এক একটি থমথমে গোরস্থান।
বন্ধ হয় সিলেট অভিমুখী সমস্ত বাস, যদি বারংবার শিডিউল
ভঙ্গ করে ঢাকা টু শ্রীমঙ্গলগামী প্রাত্যহিক ট্রেন, সভ্যতার এ
অসভ্য ড্রেনে যদি মুখ থুবড়ে পড়ে আমাদের বিশুদ্ধ প্রেম, যদি
আমাদের আর দ্যাখাই না হয়, ভালোবাসার অপরাধে আমার
জন্য বরাদ্দ হয় যাবজ্জীবন জেল এবং পরদিনই হিশেব পালটে
নিয়ে যদি আচমকা মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়। ভয়, ভয় এবং ভয়
থেকে তবুও জন্ম নেবে না কোনো নির্লজ্জ কম্প্রোমাইজ। শেষতম
ইচ্ছায় সমাধিস্তম্ভ রূপে আমি উচ্চারণ করবো তোমার হৃদয়।
অবন্তিকা, মনে রাখবে তো?
মরে যাই, দুঃখ নেই। আমি কেবল ওই হৃদয়েই অমরত্ব চাই!

যত অবিমান করে নাও তুমি – আব্দুল আহাদ

যত অভিমান করে নাও তুমি,
তাতে নাহি কোন কিঞ্চিত ক্রোধ,
তবু তোমার স্নেহ কোলে রাখিব মাথা,
যেদিন দৃষ্টিপটে পড়েছিল তুমি,
সেদিন স্মৃতিপটে গাঁথিয়াছি আমি।
আমি দিকহারা নাবিক পথহার পথিক।
তোমার জৌতিময়ে খুজে পাই দিকবেদিক।
আমার ডানা আছে উড়তে জানিনা!
আমার কান আছে শুনতে পারিনা!
মন থেকেও বদির চক্ষু থাকিতে অন্ধ!
কেবল তোমার শুধায় সজীব হই আমি।
তুমি আমার প্রানও সার,
পথহারা পথিকের আলো,
নয়নের জ্বল মন ময়ূরকণ্ঠী।
যত অভিমান করে নাও তুমি,
তাতে নাহি কোন কিঞ্চিত ক্রোধ।
তোমার সাথে কথা বললে হয় যায় কবিতা।
তোমার কথা কানে পড়লে লেগে যায় মায়া।
তোমার সাথে দেখা করলে লেগে যাবে ভালবাসা।
তোমার স্মৃতি বারবার মনে পড়ে জানিনা কেনো,,,
যদিও আমার মহব্বত তোমার সুন্দর বুলিতে,,
যদি হও তুমি বিশ্বাসঘাতক বলে দাও!!
আমি চলে যাব দূর অচেনাতে,,,,
সত্যি বলছি, আমি কোন মিথ্যুক বা প্রতারক নই ।
তারপরো যদি ধোকা দাও ক্ষমা পাবে না অন্তকালে।

Bengali love poem by rabindranath tagore

অনন্ত প্রেম
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার,
কত রূপ ধরে পরেছো গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।

যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলন কথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমির রজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে,
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুভতারকা বেশে।



আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদি কালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহ বিধুর নয়ন সলিলে,
মিলন মধুর লাজে—
পুরাতন প্রেম নিত্য নূতন সাজে।

আজি সেই চির দিবসের প্রেম
অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে
সকল প্রেমের স্মৃতি—
সকল কালের সকল কবির গীতি।

Love Poem in Bengali for girlfriend

স্বপ্নে দেখা – ইন্তিখাব আলম

আষাঢ়ের সন্ধ্যায়, বর্ষার আগমনে,
এক নিরালা ভাঙা কাঠের সেতু,
পারাপারের সময়,
তোমার হাতে হাত রেখে,
তোমার বিস্ময় ভরা আঁখির দিকে চেয়ে আছি।

কালোমেঘে ঘেরা আকাশ হয়তে,
হঠাৎ করে আসা না বলা বৃষ্টি,
হিমেল হাওয়ায়,
ভিজিয়ে দিল দুটি শরীর।

তোমার সেই পুরানো ভাঙা ছাতার নীচে ,
শীতল বাতাসে, বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দে,
ভূমি থেকে ওঠে আসা মাটির মেটো গন্ধে,
হারিয়ে যায় দুজনে কোন অদূরে।
বিদ্যুৎ চমকায়, বাদল গর্জায়,
দমকা হাওয়া শুরু হয়,
অঝোর ধারায় বৃষ্টি, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ,
প্রায় ভিজে যায় দুজনে,
তখনো তোমার সেই পুরানো ভাঙা ছাতার নীচে।

বিদ্যুতের ঝলকানিতে, ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরে,
শান্ত বধূর মতো , একদৃষ্টে চেয়ে,
তোমার ভয়মিশ্রিত কন্ঠে, কিছু বলার আগেই
তোমার ঠোঁটের নরম স্পর্শ ছুঁয়ে যায় ,
জীবনের প্রথম চুম্বন।

তোমার সেই লজ্জা মিশ্রিত অস্পষ্ট হাসিমাখা মুখখানা,
প্রতিরাতে আমার স্বপ্নে হাতছানি দেয়,
কে তুমি? কেন বার বার স্বপ্নে দেখা দাও?
তোমার জন্যে যেন আমি অপেক্ষায় আছি।

ইচ্ছেজাগা – দিপেশ সরকার

যদি তোমার উরনার আরালে ভালোবাসা খুঁজি আমাকে দেবে..?
যদি তোমার কমল স্পর্শে হৃদয়ের স্পন্দনে স্পন্দিত হয়,
আমাকে আপন করে নেবে..?

তোমার হাতের অনামিকা জুরে আমার হাতের আঁকিবুঁকি।
তোমার ঠোঁটে আমার ঠোঁটের লুকোচুরি।
আশকারা দেবে…?

যদি বলি আমি দিশেহারা হয়ে গেছি।
যদি বলি তোমার প্রেমে আমার মতিভ্রম হয়েছে।
আমাকে পাগল বলবে না তো..?

ওই যে তোমার নূপুর চুরিতে রুমঝুম।
সকাল বিকাল মিষ্টি সুরের গুনগুন।
ওই যে তোমার কানের ঝুমকোদুল গো।
তোমার মাথায় সাজানো বুনোফুল।
ওদের আমি খুব ভালোবাসি।

তোমার ড্রইং খাতাই লুকিয়ে রাখা
সমুদ্রের পাড়ে দারিয়ে থাকা সেই প্রেমিক প্রেমিকা।
বৃষ্টিভেজা বিকালে সেই প্রেমিক প্রেমিকা।
ওরাই তো আমার কবিতা।
তুমি পড়বে….?
পড়ো না একবার।
পড়লেই জানতে পাড়বে কত যন্তনা লুকানো আছ

Love Poem in Bengali lyrics

যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে
জীবনে অমর হয়ে রয়।

যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে
জীবনে অমর হয়ে রয়।।
সেই প্রেম আমাকে দিও
জেনে নিও
তুমি আমার প্রানের চেয়ে প্রিয়।

তুমি আর আমি আর কেউ নাই
এমন একটা যদি পৃথিবী হয়
মিলনের সুখে ভরে যায় বুক
যেখানে আছে শুধু সুখ আর সুখ
সেই সুখ আমাকে দিও।।
জেনে নিও
তুমি আমার প্রানের চেয়ে প্রিয়।

চাই না কিছুই তো জীবনে আর
তোমার মুখটা যদি দেখি একবার
এ জীবন করেছ কত যে মধুর
হৃদয়ে কত গান কত যে সুর
সেই সুর আমাকে দিও
জেনে নিও
তুমি আমার প্রানের চেয়ে প্রিয়।

শুধু তোর কারনে বেচে আছি

শুধু তোর কারনে বেচে আছি,
তুই দুঃখ
দিলে মরে যাবো।

হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসি,
তুই ছাড়া
প্রানে মরে যাবো।

মরে যাবো রে,মরে যাবো।
মরে যাবো রে,মরে যাবো।

আমি কার জন্যে বেচে থাকবো?
আমি কার জন্যে বেচে থাকবো?

তোকে পাবো বলে,
এই পৃথিবীতে আমি নেই আজও নিশ্বস।♪♪

আমার এইনা হৃদয়,
শুধু তোর কথা কয়,
আমি তোরেই করি বিশ্বাস।

তোকে পাবো বলে,
এই পৃথিবীতে
আমি নেই আজও নিশ্বাস।

আমার এইনা হৃদয়,শুধু তোর কথা কয়।
আমি তোরে করি বিশ্বাস।

ৃমরে যাবো রে,মরে যাবো।
মরে যাবো রে,মরে যাবো।

আমি কার জন্যে বেচে থাকবো?
আমি কার জন্যে বেচে থাকবো?

তুই থাকলে দূরে মন ভেঙে চূড়ে,
আমি হয়ে যাই নিশ্ব।
আমার এইনা আশা,
এই ভালোবাসা।আজ না হয় যেন অদৃশ্য।

তুই থাকলে দূরে মন ভেঙে চূড়ে,
আমি হয়ে যাই নিশ্ব।
আমার এইনা আশা,
এই ভালোবাসা।আজ না হয় যেন অদৃশ্য।

মরে যাবো রে,মরে যাবো।
মরে যাবো রে,মরে যাবো।

আমি কার জন্যে বেচে থাকবো?
আমি কার জন্যে বেচে থাকবো?

শুধু তোর কারনে বেচে আছি,
তুই দুঃখ
দিলে মরে যাবো।

হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসি,
তুই ছাড়া প্রানে মরে যাবো।

মরে যাবো রে,মরে যাবো।
মরে যাবো রে,মরে যাবো।

bengali love poem photo
bengali love poems image download hd
bengali love poem hd

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা – কবি শামসুর রাহমান

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,

সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিত্কার করতে করতে
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।
তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভূর বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুড়ো
উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের
দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
মোল্লাবাড়ির এক বিধবা দাঁড়িয়ে আছে
নড়বড়ে খুঁটি ধ’রে দগ্ধ ঘরের।

স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে
বসে আছে পথের ধারে।
তোমার জন্যে,
সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝড়ে
রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়ানো
সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে —
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।

পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,
মতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।

আরও পড়ুন

 

বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা – কবি শামসুর রাহমান

নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।
মমতা নামের প্রুত  প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড়
ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে
শিউলিশৈশবে ‘পাখী সব করে রব’ ব’লে মদনমোহন
তর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি,
অবিচ্ছিন্ন পরস্পর মমতায় লীন,
ঘুরেছি কাননে তাঁ নেচে নেচে, যেখানে কুসুম-কলি সবই
ফোটে, জোটে অলি ঋতুর সংকেতে।

আজন্ম আমার সাথী তুমি,
আমাকে স্বপ্নের সেতু দিয়েছিলে গ’ড়ে পলে পলে,
তাইতো ত্রিলোক আজ সুনন্দ জাহাজ হয়ে ভেড়ে
আমারই বন্দরে।

গলিত কাচের মতো জলে ফাত্না দেখে দেখে রঙিন মাছের
আশায় চিকন ছিপ ধরে গেছে বেলা। মনে পড়ে কাঁচি দিয়ে
নক্সা কাটা কাগজ এবং বোতলের ছিপি ফেলে
সেই কবে আমি হাসিখুশির খেয়া বেয়ে
পৌঁছে গেছি রত্নদীপে কম্পাস বিহনে।

তুমি আসো আমার ঘুমের বাগানেও
সে কোন্ বিশাল
গাছের কোটর থেকে লাফাতে লাফাতে নেমে আসো,
আসো কাঠবিড়ালির রূপে,
ফুল্ল মেঘমালা থেকে চকিতে ঝাঁপিয়ে পড়ো ঐরাবত সেজে,
সুদূর পাঠশালার একান্নটি সতত সবুজ
মুখের মতোই দুলে দুলে ওঠো তুমি
বার বার কিম্বা টুকটুকে লঙ্কা ঠোঁট টিয়ে হ’য়ে
কেমন দুলিয়ে দাও স্বপ্নময়তায় চৈতন্যের দাঁড়।

আমার এ অক্ষিগোলকের মধ্যে তুমি আঁখিতারা।
যুদ্ধের আগুণে,
মারীর তাণ্ডবে,
প্রবল বর্ষায়
কি অনাবৃষ্টিতে,
বারবনিতার
নূপুর নিক্কনে
বনিতার শান্ত
বাহুর বন্ধনে,
ঘৃণায় ধিক্কারে,
নৈরাজ্যের এলো-
ধাবাড়ি চিত্কারে,
সৃষ্টির ফাল্গুনে

হে আমার আঁখিতারা তুমি উন্মিলিত সর্বক্ষণজাগরণে।

তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে, কী থাকে আমার ?
উনিশ শো’ বাহন্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি
বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী।
সে ফুলের একটি পাপড়িও ছিন্ন হ’লে আমার সত্তার দিকে
কতো নোংরা হাতের হিংশ্রতা ধেয়ে আসে।
এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি,
এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি-খেউড়ের পৌষমাস !
তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো,
বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।

আরও পড়ুন