আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু-গড়া এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।
জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখিরা
শিশু-হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তি লগনে তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না খুন-রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারি।।
সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।
সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবিকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।
তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর-ছেলে বীর-নারী
আমার শহিদ ভাইয়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাঁকে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালব ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।
পশ্চিমে বাগান বন চষা-খেত
মিলে গেছে দূর বনান্তে বেগনি বাষ্পরেখায়;
মাঝে আম জাম তাল তেঁতুলে ঢাকা
সাঁওতালপাড়া;
পাশ দিয়ে ছায়াহীন দীর্ঘ পথ গেছে বেঁকে
রাঙা পাড় যেন সবুজ শাড়ির প্রান্তে কুটিল রেখায়।
হঠাৎ উঠেছে এক-একটা যূথভ্রষ্ট তালগাছ,
দিশাহারা অনির্দিষ্টকে যেন দিক দেখাবার ব্যাকুলতা।
পৃথিবীর একটানা সবুজ উত্তরীয়
তারি এক ধারে ছেদ পড়েছে উত্তর দিকে,
মাটি গেছে ক্ষ’য়ে,
দেখা দিয়েছে
উর্মিল লাল কাঁকরের নিস্তব্ধ তোলপাড়–
মাঝে মাঝে মরচে-ধরা কালো মাটি
মহিষাসুরের মুণ্ড যেন।
পৃথিবী আপনার একটি কোণের প্রাঙ্গণে
বর্ষাধারার আঘাতে বানিয়েছে
ছোটো ছোটো অখ্যাত খেলার পাহাড়,
বয়ে চলেছে তার তলায় তলায় নামহীন খেলার নদী।
শরৎকালে পশ্চিম-আকাশে
সূর্যাস্তের ক্ষণিক সমারোহে
রঙের সঙ্গে রঙের ঠেলাঠেলি–
তখন পৃথিবীর এই ধূসর ছেলেমানুষির উপরে
দেখেছি সেই মহিমা
যা একদিন পড়েছে আমার চোখে
দুর্লভ দিনাবসানে
রোহিত সমুদ্রের তীরে তীরে
জনশূন্য তরুহীন পর্বতের রক্তবর্ণ শিখরশ্রেণীতে,
রুষ্টরুদ্রের প্রলয়ভ্রূকুঞ্চনের মতো।
এই পথে ধেয়ে এসেছে কালবৈশাখীর ঝড়,
গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে
ঘোড়সওয়ার বর্গি- সৈন্যের মতো–
কাঁপিয়ে দিয়েছে শাল-সেগুনকে,
নুইয়ে দিয়েছে ঝাউয়ের মাথা,
হায়-হায় রব তুলেছে বাঁশের বনে,
কলাবাগানে করেছে দুঃশাসনের দৌরাত্ম্য।
ক্রন্দিত আকাশের নীচে ওই ধূসর বন্ধুর
কাঁকরের স্তূপগুলো দেখে মনে হয়েছে
লাল সমুদ্রে তুফান উঠল,
ছিটকে পড়ছে তার শীকরবিন্দু।
এসেছিলেম বালককালে।
ওখানে গুহাগহ্বরে
ঝির্ ঝির্ ঝর্নার ধারায়
রচনা করেছি মন-গড়া রহস্যকথা,
খেলেছি নুড়ি সাজিয়ে
নির্জন দুপুর বেলায় আপন-মনে একলা।
তার পরে অনেক দিন হল,
পাথরের উপর নির্ঝরের মতো
আমার উপর দিয়ে
বয়ে গেল অনেক বৎসর।
রচনা করতে বসেছি একটা কাজের রূপ
ওই আকাশের তলায় ভাঙামাটির ধারে,
ছেলেবেলায় যেমন রচনা করেছি
নুড়ির দুর্গ!
এই শালবন, এই একলা-মেজাজের তালগাছ,
ওই সবুজ মাঠের সঙ্গে রাঙামাটির মিতালি
এর পানে অনেক দিন যাদের সঙ্গে দৃষ্টি মিলিয়েছি,
যারা মন মিলিয়েছিল
এখানকার বাদল-দিনে আর আমার বাদল-গানে,
তারা কেউ আছে কেউ গেল চলে।
আমারও যখন শেষ হবে দিনের কাজ,
নিশীথরাত্রের তারা ডাক দেবে
আকাশের ও পার থেকে–
তার পরে?
তার পরে রইবে উত্তর দিকে
ওই বুক-ফাটা ধরণীর রক্তিমা,
দক্ষিণ দিকে চাষের খেত,
পুব দিকের মাঠে চরবে গোরু।
রাঙামাটির রাস্তা বেয়ে
গ্রামের লোক যাবে হাট করতে।
পশ্চিমের আকাশপ্রান্তে
আঁকা থাকবে একটি নীলাঞ্জনরেখা।
Another Bangla Kobita
প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা আপনাদের জন্য শেয়ার করবো Bangla Kobita Caption বেস্ট ক্যাপশন । আশাকরছি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। আর ভালো লাগলে আপনার শেয়ার করুন আপনার কাছের মানুষের সাথে। আমাদের সাথে থাকার জন্য আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ আপনাকে। চলুন শুরু করি।
দু’আনা তার দুঃখ ছিল।
চোদ্দো আনা সুখ
জানালাপারের গন্ধমাখা।
চম্পাবরণ মুখ
সেও যদি যায় ঝাপসা হয়ে
সমীকরণ স্পষ্ট
দু’আনা তার সুখ বাঁচে ‘আর
চোদ্দো আনা কষ্ট
কন্যে মুখে কিছুই বলাে না
কন্যে তােমার সকল ছলনা
ডাইনির মতন চুল এলাে করে ওইভাবে জানালার পাশে বসে আছিস কেন? কী হয়েছে তাের, রাগ? আধ ঘণ্টা বসে আছি।
চুপ করে। চলে যাব?
রাগ করব কার উপরে?
ঠিক এই কথাটাই আমি জানতে চাইছিলাম। রাগ করছিস কার উপরে?
আমি রাগ করিনি। আমার কথা বলতে ভাল লাগছে না, আর কিছু বলবি?
না বলব না কিছু। আমি চললাম, তাের রােদ পােহানাে দেখার জন্য আমি বসে থাকতে পারব না।
কোথায় যাবি এখন?
জাহান্নামে, তােকে বলব কেন?
রাগলে তাের কানগুলাে বেগুনি হয়ে যায়, জানিস সেটা?
বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!
একটা কবিতা শােনাবি?
পারব না।
চম্পাবরণ রােদ নেমেছে ঠিক দুক্কুরবেলা
চম্পাবরণ কন্যে তােমার চক্ষে মেঘের খেলা
শাড়িটা পরে তােকে বেশ কেমন একটা ইয়ে লাগছে।
ইয়েটা কী? জঘন্য লাগছে বলতে বাধছে বুঝি? তাের মুখেও কিছু আটকায় তা হলে!
জানিস না, বড়রা কি বলেছেন, “সত্যম ব্রুয়াত, প্রিয়ম বড়ুয়া”।
অপ্রিয় সত্য বলতে নেই আসলে।
জঘন্য লাগছে তাে?
আমি কি তাই বললাম? আসলে শাড়ি পরে তােকে অন্যরকম লাগছে। বিকেলবেলার রােদটা সরে গেলে বােধ হয় তােকে আবার তাের মতন লাগবে।
এখন কার মতন লাগছে?
তাের মতনই, তবু যেন তুই নয়। আচ্ছা, তাের চুলগুলাে কি মেঘবরণ?
রাজকন্যা বলছিস আমাকে?
তাই কখনও বলতে পারি! রাজা-গজার খুব আকাল দেশে। শেষ অবধি রাজপুত্তুর জোটাবি কোথা থেকে?
রাখাল ছেলে কি জুটবে না এক-আধটা?
ঠাকুরমার ঝুলি হাতড়ে দ্যাখ, পেতেও পারিস। আসলে তাকে বোধ হয় খুব সুন্দর লাগছে আর মনে হচ্ছে তুই অনেক দূরে।
ট্রাম লাইনের উপরে, ওটা কী পাখি রে?
কাক নয়, চড়ুই, শালিখও নয় দেখছি। এই শহরে পাখি বলতে আর একটাই।
ওটা মন পাখি।
চোখের কোণে মুকুতা দোলে হাসলে করে আলাে
নীলাম্বরী উপচানাে তার কেশের বরণ কালাে
কনুইতে ব্যান্ড-এজ লাগিয়েছিস কেন?
কেটে গেছে।
কাটল কী করে?
একটা কঠিন ক্যাচ নিতে গিয়ে।
এখনও ক্রিকেট খেলে যাচ্ছিস? পরীক্ষার ক’টা দিন বাকি?
পরীক্ষার সঙ্গে ক্রিকেটের সম্পর্ক যে ব্যস্তানুপাতিক সেটা জানা ছিল না তাে!
সেভেনথ পেপারের প্রিপারেশন কেমন হয়েছে?
ফেল করব ওটাতে।
আর এইটথ পেপার?
ডাহা ফেল।
বলতে একটুও লজ্জা করছে না
আমার মতন খারাপ ছাত্র কিছু না থাকলে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি যে লাটে উঠবে। বছর বছর একজামিনেশন ফিজ দিয়ে টিকিয়ে রেখেছি তাে আমরাই।
ক’ঘন্টা পড়ছিস দিনে?
সারা রাত। সকালে প্রথম ট্রামটাকে রওনা করে দিয়ে তবে ঘুমােতে যাই।।
সারা রাত পড়ছিস?
সারা রাত জাগছি অন্তত।
কী করিস, সারা রাত জেগে?
ঘুমিয়ে পড়লে কলকাতা শহরকে খুব বােকা বােকা লাগে। ল্যাম্পপােস্টগুলাে হাই তােলে মাঝে মাঝে। আমার পড়ার টেবিলের সামনে যে জানলাটা,
ওটার ঠিক উল্টোদিকের রাস্তায় একটা টিউবওয়েল আছে। ওইটা ঘুমের মধ্যে খুব ককথা বলে। তখন নেড়িগুলো এইসা ধমক লাগায় কী বলবো!
সারা রাত এইসব পাগলামি?
পাগলামি কেন হবে, এ ছাড়াও পরীক্ষায় পাস করার জন্য কত কসরত করি। কাল রাতেই খাতা ভর্তি করে তাের নাম লিখেছি, প্রতি পাতায় ১০৮ বার।
কেন?
তাের মতন ভাল ছাত্রী আমাদের ডিপার্টমেন্টে আর আছেটা কে? যদি তাের নাম জপ করে উতরে যাই কোনওমতে।
শুধুই তাই?
না, এছাড়াও আছে। তাের নামটা লিখলে বেশ লাগে দেখতে।
কন্যে কন্যে চম্পাবরণ
কাজল চক্ষু বশীকরণ
পরীক্ষার পরে কী করবি?
ইচ্ছে আছে জেএনইউতে পড়ার। তুই কিছু ভেবেছিস?
ভাবার কিছু নেই তাে। পরের বার পরীক্ষা দেবার জন্য আবার তৈরি হব।
তুই সত্যি দিল্লি চলে যাবি?
যদি সুযােগ পাই, যাব।
পারবিই না যেতে। কাকু কিছুতেই তাের মতন একটা পুঁচকে মেয়েকে দিল্লিতে একা থাকতে দেবেন না।
আমি তাের থেকে তিন সপ্তাহের বড় বয়সে এটা মনে রাখিস। আর দিল্লিতে একা থাকব কেন? মাসির বাড়ি আছে তাে।
কেন, মাসি দিল্লিতে থাকেন কেন? আর জায়গা পেলেন না থাকার!
মাসির দিল্লিতে থাকার কারণটা খুব সহজ। মেসােমশাই থাকেন ওইখানে তাই। কিন্তু তাের এত রাগ কেন দিল্লির উপরে?
তুই দিল্লিতে যেতে চাইছিস কেন?
পড়াশুনাে করবার জন্য।
পড়াশুনাে করার জন্য কলকাতা ছেড়ে চলে যাবি?
হ্যাঁ যাব।
তুই জানিস, তুই চলে গেলে কলকাতা শহর মুখ গােমড়া করে বসে থাকবে, ভিক্টোরিয়ার পরি ঘুরবে না আর ফুচকাওয়ালারা কবিরাজি ওষুধের কোঅপারেটিভ স্টোর খুলবে?
আর তুই কী করবি?
তাের সঙ্গে আমার কী? আমি কিছুই করব না।করব নাই বা কেন? সারাদিন ক্রিকেট খেলব, রােজ বিকেলে দুটো করে এগ রােল খাব সেনাপতির দোকান থেকে আর সারা রাত্তির ফুটপাথের সাথে গল্প করব। যা ইচ্ছে করব, যা খুশি করব। কী দরকার তাের এত পড়াশোনা করার শুনি?
তুই সারাদিন ক্রিকেট খেলবি, সারা রাত ফুটপাথের সঙ্গে গল্প করবি, বছর বছর পরীক্ষা দিবি, যা ইচ্ছে করবি। আমি যদি পড়াশােনা করে
চাকরি না করি, রােজ বিকেলে তােকে দু’টো করে এগ রােল খাওয়াবে কে?
পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দু’জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের জল গড়াবে,
কান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি ক’রে দুচোখ ভ’রে থাকবো চেয়ে…
মনে থাকবে?
এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব
এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন
এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন
মনে থাকবে?
আমি হবো উড়নচন্ডি
এবং খানিক উস্কোখুস্কো
এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেব
তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব
মনে থাকবে?
পরের জন্মে কবি হবো
তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো।
তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে
নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে
গান বানিয়ে
মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো
মনে থাকবে?
“ও বাপুন
ও বাপুন রে
আমি তোর মা রে বাপুন
আমি তোর মা
একবার চল বাপ
তোর বাবার শেষ কাজ টুকুন করবি চল”
কোনো সাড়া নেই
কোনো শব্দ নেই
শব্দ বলতে যেটুকু
সে হলো আশপাশের ভদ্রলোকদের,
একতলা দোতলা বাড়ির দুমদাম দরজা-জানলা বন্ধ করার শব্দ
রাত কিন্তু বেশি না
বড়জোর দশটা সাড়ে দশটা এরকম
উলুবেড়িয়া পুরসভার আঠাশ নম্বর ওয়ার্ডের লতিবপুরের লতুন পাড়া
খবরটা কী বাতাসে ছড়ালো
কে জানে
হলে হয়তো হতেও পারে তাই
তবু হাল ছাড়েনি মহাদেব মিস্ত্রির বউ সতীবালা দাসী
মানুষটার কিন্তু হয়নি কিছুই করোনা টরোনা কিছুই হয়নি
সত্যি বলতে কী
হওয়ার মতন তেমন কিছুই হয়নি তার
একেবারে লিকপিকে চেহারার দুবলা পাতলা মানুষ
তবে ওই চেহারাতে যা জোর ছিল সে বিশাল জোর।
বড় কোনো অসুখ বিসুখে কোনোদিন ভোগেনি সে
মাঝেসাঝে রাতবিরেতে
একটু-আধটু বুক ধড়ফড় করত এই যা
সেদিন হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লেগে
সে এমন হাঁচি কাশি জোটালে
সে একবার শুরু হলে চাইত না থামতে
তাই দেখে পড়শীরা বলে বেড়ালে
“করোনা হয়েছে করোনা”
একদিন দল বেঁধে বাড়ি বয়ে তারা শুনিয়ে দিয়ে গেলে
” যাই বলো আর
তাই বলো বাপু
করোনা রোগীকে ঘরে রাখাটা ঠিক না
একদম ঠিক না”
দেখেশুনে সতীবালা তাকে ভর্তি করে দিলে হাসপাতালে
ডাক্তারবাবুরা অবশ্য রাখেনি বেশিদিন
দিন দুয়েক পরেই দিয়েছিল ছেড়ে
বলেছিল, ” করোনা টরোনা
কিছু না
ব্যামোটা হল হার্টের ব্যামো কটা দিন বাড়িতে গিয়ে
বিরাম বিশ্রামে রাখো
ওষুধপাতি খাওয়াও
তারপর সময় করে আমাদের এখানে একবার দেখিয়ে নিয়ে যেও ”
সে দেখানো আর হল কই
এই সন্ধ্যা রাতে
বুক ধড়ফড় করতে করতে
চলে গেল মানুষটা।
কি আশ্চর্য দিনকাল
করোনাকালের কী আশ্চর্য দিনকাল
সতীবালা দাসীর বুকফাটা
কান্না শুনে
পড়শীরা কেউ একজনাও
এলোনা খবর নিতে
পড়শীরা কেউ একজনাও
এলো না সান্তনা দিতে
কান্না শুনে তখনই তারা
যে যার মতন
বন্ধ করে দিলে দোর ।
একলা ঘরে মরা মানুষটাকে আঁকড়ে ধরে
হতবাক হয়ে বসে রইলে
সতীবালা
পাড়াপড়শি দের বিপদে -আপদে হাঁকতে ডাকতে
এককথায় ছুটে যেত মানুষটা
খেতে বসে খাবার ফেলে
কতবার গেছে ছুটে
হাসপাতালে ডাক্তার খানায় শশান ঘাটে যে যেখানে ডেকেছে ছুটে গেছে
আজ কারো দেখা নেই
আজ কারো সাড়া নেই
এসবেসটাসের ছাউনি দেওয়া
ছ’ ফুট বাই ছ’ ফুটের ঘরে
পলেস্তারা খসে পড়া বিবর্ণ দেওয়ালে টিমটিমে আলোয়
ভেসে উঠল একজনের মুখ
একমাত্র সন্তানের মুখ
বেঁচে থাকতে ওই মুখ
আর কোনদিন দেখবে না বলে
পণ করেছিল মানুষটা
লেদ কারখানার কালি ঝুলি মেখে লোহা-লক্কড়ের মেশিন চালিয়ে
দিনরাত খাটাখাটনি করে
ছেলেকে মানুষের মতন মানুষ করবে বলে
ইংলিশ মিডিয়াম ইস্কুলে
ভর্তি করে কম পয়সা ঢেলেছে
তবু তার হয়নি লেখাপড়া
বখাটে ছেলেদের পাল্লায় পড়ে
তার হয়নি কিছুই
শেষমেষ বাপের অমতে
হারান মিস্ত্রির মেয়েকে বিয়ে করে ঘরজামাই হয়ে
শশুরের গলায় ঝুলে পড়েছিল সে
আজ অনেক দোলাচলের পরে
আজ অনেক দোনামনার পরে
সেই ছেলের শ্বশুরবাড়ির দুয়ারে
কড়া নেড়ে একটানা ডেকে যাচ্ছে সতীবালা দাসী
” বাপুন ও বাপুন”
ডাকতে ডাকতে এক সময় থাকতে না পেরে কেঁদেও ফেলেছে
শেষে অনেক ডাকাডাকির পরে বন্ধ দরজার ভেতর থেকে ছেলে বললে , ” বাবার কি থেকে কি হয়েছে
কি রোগে বাবা মারা গেছে
সেকি তুমি জানো মা
তুমি কিছুই জানো না
শোনো বাড়িতে আমার
দশ মাসের বাচ্চা
আমি পারবো না যেতে
আমি কোনমতেই যেতে পারবো না”
ছেলের কথা শুনে
স্তম্ভিত হয়ে মুহূর্ত কয়েক দাঁড়িয়ে থেকে
নীরবে নিঃশব্দে ফিরে গেল মা
ছেলের কথা শুনে
চোখের জল মুছে
ক্ষোভে দুঃখে পুড়তে পুড়তে
দগ্ধ হয়ে ফিরে গেল মা ।
মাকে ফিরিয়ে দিয়ে
কি জানি কি কারণে
ছেলের কিন্তু সোয়াস্তি হলো না মনে
বউ তাকে বোঝালে বিস্তর
” তুমি যা বলেছ
একদম ঠিক বলেছ
করোনার সময় এমন বোকামি কেউ করে নাকি
বাবা হোক আর যেই হোক আগে তোমার জীবন
তারপরে অন্য কিছু”
এসব বলে টলে হাই তুলে
ঘুমিয়ে গেলে বউ
তার তবু ঘুম হলো না
বিছানায় এপাশ ওপাশ করে
কিছুতেই হলো না ঘুম
বিনিদ্র চোখে চোখের পাতা বুজতেই
তাকে হাতছানি দিয়ে
ডেকে ডেকে ফিরতে লাগলো বাবা
তাকে হাতছানি দিয়ে
ডেকে ডেকে ফিরতে লাগলো ফেলে আসা শৈশব
কখনো বাবার কাঁধে রথের মেলায়
কখনো বাবার কোলে
নাগরদোলায়
কখনো পুজোর গন্ধে
নতুন জামার আনন্দে
বাবার হাত ধরে
ঠাকুর দেখতে এ পাড়া ওপাড়ায়
এসবের মাঝে এক সময়ে
শেষরাতের ফিকে অন্ধকারে
চুপি চুপি বাইরে এসে
দুয়ার খুলে বসে রইলো সে
অন্য কিছুনা
বাড়ির সমুখ দিয়ে
যে পথ গেছে চলে
সে পথ দিয়ে হাটবারে
লোকেরা যেমন হাটে যায়
তেমনি যায় শ্মশানযাত্রায়
তাই যদি দেখা যায়
দরজার আড়াল থেকে
দেখা যায় যদি একটু
শেষবারের মতন দেখা হয় যদি একবার।
দেখা অবশ্য হয়েছিল তার
তবে সে দেখা অন্য দেখা
শেষ রাতের অন্ধকারে
নক্ষত্রদের আলোয়
সে দেখেছিল
নিস্তব্ধ নির্জন পথে
বাবা মহাদেব কে কাঁধে নিয়ে
মা সতী চলেছে শ্মশানযাত্রায়
করোনাকালের মা সতী চলেছে শ্মশানযাত্রায় ।।
যে আমাকে প্রেম শেখালো
জোৎস্না রাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে
সে যেন আজ রানীর মত
ব্যক্তিগত রাজ্যপাটে
পা ছড়িয়ে সবার কাছে
বসতে পারে
বলতে পারে মনের কথা
চোখের তারায়
হাত ইশারায়
ঐ যে দেখ দুঃখি প্রেমিক
যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর
ভিক্ষে দিলে ভিক্ষে নেবে
ছিন্ন বাসে শীর্ন দেহে
যাচ্ছে পুড়ে রোদের ভিতর
কিন্তু শোন প্রজাবৃন্দ
দুঃসময়ে সেই তো ছিলো
বুকের কাছে হৃদয় মাঝে
আজকে তারে দেখলে শুধু
ইচ্ছে করে
চোখের পাতায় অধর রাখি
যে আমাকে প্রেম শেখালো
প্রেম শিখিয়ে চিনিয়েছিলো
দুষ্টু গ্রহ অরুন্ধতী
বৃষ্টি ভেজা চতুর্দশী
জোৎস্না রাতের উজ্জ্বলতা
ভোরের বকুল শুভ্র মালা
নগর নাগর ভদ্র ইতর
রাজার বাড়ি
সেই তো আবার বুঝিয়েছিলো
যাওগো চলে আমায় ছেড়ে
যে আমাকে প্রেম শেখালো
জোৎস্না রাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে
নিজের দেহে আগুন জ্বেলে
ভেবেছিলাম
নিখাদ সোনা হবোই আমি
শীত বিকেলের টুকরো স্মৃতি
রাখবো ধরে সবার মত
হৃদয় বীণার মোহন তারে
ভুলেই গেলাম
যখন তুমি আমায় ডেকে
বললে শুধু
পথের এখন অনেক বাকি
যাও গো শোভন
যাও গো চলে বহুদুরে
কণ্ঠে আমার অনেক তৃষা
যাও গো চলে আপন পথে
এই না বলেই
হাসলে শুধু করুন ঠোঁটে
বাজলো দুরে শঙ্খ নিনাদ
কাঁদলো আমার বুকের পাথর
কাঁদলো দুরে হাজার তারা
একলা থাকার গভীর রাতে
একলা জাগার তিন প্রহরে
তাইতো বলি সবার কাছে
যে আমাকে দুঃখ দিলো
সে যেন আজ সবার চেয়ে
সুখেই থাকে
যে আমাকে প্রেম শেখালো
প্রেম শিখিয়ে বুকের মাঝে
অনল দিলো
সে যেন আজ সবার চেয়ে
সুখেই থাকে
সুখেই থাকে
আগে আপনাকে ভালো লাগত, রামবাবু
এখন আপনি বদলে গেছেন।
কখনও কখনও আপনাকে কংগ্রেস মনে হত
কখনও সি.পি.এম
কখনও সি.পি.আই
মার্কিন সেনেটে আপনার নাম উঠেছিল
কিন্তু ভিয়েতনামের পক্ষে
আপনি বালিদ্বীপ পর্যন্ত ছুটে গেছেন।
বিহারের লছমনপুরে আপনাকে প্রথম দেখি
ততদিনে আপনার স্ত্রী আপনাকে ছেড়ে গেছেন
বিহারের গ্রাম
আপনি তো ভালোই জানেন, খুব সুবিধের জায়গা নয়
ওখানকার লোকেরা বলে
পাতাল প্রবেশ হল স্রেফ ধাপ্পা
আপনি নাকি
উত্তরপ্রদেশের গ্রামে একটা কুয়োর ভেতর
বউকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিলেন।
এখনও সেই কুয়োর ভেতর বসে
মা সীতা কাঁদেন,
তখন গোটা বিহারের মেয়েরা
উত্তরপ্রদেশের মেয়েরা
রান্না করতে করতে কাঁদে
আর চোখ মছে।
আগে আপনাকে ভালো লাগত, রামবাবু
কত রাত্রে আমি না খেয়ে
মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছি
শুধু আপনার তীর ধনুকের গল্প শুনতে শুনতে।
ছোটবেলায় আপনার ভাইকেও আমার খুব ভালো লাগত
কী সুন্দর ভাই
এক ডাকে সাড়া দেয়
যে কোনও দরকারে দাদা বললে
ভাই একপায়ে খাড়া।
পরে বড় হয়ে দেখলাম
আপনার ভাই বীর হতে পারে তবে বড্ড মেনিমুখো
দাদার সমস্ত অর্ডার
সাপ্লাই দেওয়াতেই তার সুকৃতি।
আমি যদি আপনার ভাই হতাম
ও.বি.সি-দের মেরে ফেলার আগে বলতাম
দাদা, এ কাজ করিস না,
লঙ্কা পোড়ানোর আগে আমি বলতাম
ঠিক হচ্ছে না, দাদা, ফিরে চল।
আপনি এবং আপনার হনুমান
শুধু ভারতবর্ষে নয়
গোটা উপমহাদেশে হয়ে উঠলেন সোশ্যালিজম
মার্কস এঙ্গেলস এলেন
মাও-সে-তুং হো-চি-মিন এলেন
এল শিল্পায়ন পোখরান
কিন্তু আপনি এবং হনুমান এখনও পর্যন্ত
উত্তম-সুচিত্রার চেয়েও জনপ্রিয় জুটি।
কোভালাম বিচ থেকে বনগাঁর সেলুনে
আপনাদের জোড়া ক্যালেন্ডার।
আগে আপনাকে ভাল লাগত, রামবাবু
ত্রিপুরায় উপজাতিরা ঢুকে পড়ল
আপনি হনুমানকে দিয়ে খাদ্য পাঠালেন
মরিচঝাঁপি তৈরি হল
আপনি পানীয় জলের ব্যবস্থা করলেন
বাংলাদেশ থেকে পিল পিল করে পিপীলিকারা
চলে এল শিয়ালদায়
আপনি আপনার বৈমাত্রেয় বোন
ইন্দিরার পাশে দাঁড়ালেন, জলপাইগুড়িতে দাঁড়ালেন
অন্ধ্রে গিয়ে দাঁড়ালেন।
তখনও আপনি দাঁড়াতেন
আপনাকে নিয়ে লেখা
তুলসীদাসের রামচরিতমানস
আপনিও শুনতেন তখন
আপনার চোখেও বাষ্প ঘনিয়ে আসত।
কিন্তু এখন আপনি আর
আপনি নেই, আপনি
আদবানীকে ভুজুং দিচ্ছেন
জয়ললিতাকে ফুচুং।
পাকিস্তান নামে সবচেয়ে বড় বিষফোঁড়াটাকে বলছেন ফুসকুড়ি?
আমি বলব আপনিই নষ্টের গোড়া
বাল্মীকি আপনাকে যতই নরশ্রেষ্ঠ বলুক
নির্মল জলের মত বলুক
আমার সন্দেহ আছে
ওরা যখন অযোধ্যায় গেল
আপনার বাধা দেওয়া উচিৎ ছিল।
বম্বে থেকে বাঙালিকে ধরে ধরে
ফেরত পাঠাল মহারাষ্ট্র
তাহলে উড়িষ্যা থেকে মালয়ালিদের
ফেরত পাঠাক কলিঙ্গরাজ।
কর্ণাটক থেকে তামিলদের
পাঞ্জাব থেকে মারাঠিদের।
সারা দেশ জুড়ে লেগে যাক ফেরত আর ফেরত
এই ফেরত দেওয়ার মারি ও মড়ক
আপনি সামলাতে পারবেন, রামবাবু?
বনে থাকার দিনগুলো ভুলে যাবেন না
আপনার বাবার ভুলের জন্য
মনে মনে আপনি বাবাকে ক্ষমা করেননি কোনও দিন
আমি জানি
জঙ্গলে থাকতে আপনার ভালো লাগত না
সেই খারাপ দিনগুলো আপনি মনে করুন
তারও চেয়ে খারাপ দিন
আমাদের সামনে, আপনার হাত কাঁপছে না, ভয় করছে না
আপনার নামে ভারতবর্ষে
হাজার হাজার বালকের নাম
তারা বড়বাজারে, মেটিয়াবুরুজে, চাঁদনিচকের
দোকানে দোকানে কাজ করে
দিনান্তে বাড়িতে আটা কিনে নিয়ে যায়
ধোঁয়াভর্তি উনুনে বসে
তাদের মা রুটি ভেজে দেয়।
সারা ভারতবর্ষ জুড়ে
সন্ধে সাড়ে আটটায় কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে
যে বালকেরা এখন
দুটো রুটি নিয়ে বসেছে খাবে বলে
তাদের কে রাম কে রহিম
সেটা আপনার দেখার কথা ছিল না
বাল্মীকির সাথে দেখা হলে বলবেন
রামায়ণের পরবর্তী সংস্করণের আগে
অর্থাৎ প্রেসে পাঠাবার আগে
উনি যেন নতুন করে আর একবার লিখে দেন ।
সমস্ত সকালবেলা ধরে কারা আমাদের হারানো দিনের-গল্প বলে গেলো
সমস্ত সকালবেলা ধরে কারা আমাদের উঠতে বললো না
কেবল বললো বসে বসে শোনো তোমরা
তোমাদের সেই দিনগুলি যা তোমরা পিছনে ফেলে রেখে এসেছিলে
. তা কেউ কুড়িয়ে নেয়নি আর
তুমি টাকা হারিয়ে এসো, পিছন থেকে কুড়িয়ে নেয় অনেকে
পথ হারিয়ে এসো তুমি, সে-পথেই সারিবদ্ধ পথিক চলেছে
মৃতদেহ ফেলে রেখে এসো তুমি, — শকুন শৃগালে ভোগ করেছে মাংস
দরজা খুলে রেখে এসো তুমি—ত্রস্ত মেয়েমানুষ নিয়েছে পিতলের বাসন
বাড়ি ফেলে রেখে এশো তুমি— সমস্ত নৈরেকার, সকলি নৈরেকার !
তুমি ছেঁড়া জামা দিয়েছো ফেলে
ভাঙা লন্ঠন, পুরোনো কাগজ, চিঠিপত্র, গাছের পাতা—
. সবই কুড়িয়ে নেবার জন্যে আছে কেউ
তোমাদের সেই হারানো দিনগুলি কুড়িয়ে পাবে না তোমরা আর |
তোমরা যতো যাবে ততোই যাবে মৃত্যুর দিকে
বোঝাবে সকলে – ঐ তো জীবন, ঐ তো পূর্ণতা, ঐ তো সর্বাঙ্গীন সর্বাবয়ব
ঐ তো যাকে বলে সমাজ, ধর্ম, সাহিত্য, ধ্যান, পরমার্থ বিষাদ—
সমস্ত সকালবেলা ধরে কারা আমাদের হারানো দিনের গল্প বলে গেলো
তারা কোথা থেকে পেয়েছো বলে গেলো না
স্বীকার করলো না তারা পথ থেকে চুরি করেছে কিনা আমাদের
. সেই হারানো স্বপ্নগুলি, স্মৃতিগুলি
তারা আমাদের বলে গেলো হারানো দিনের সেই অনুপম স্বপ্নগুলি স্মৃতিগুলি
আমরা অনুভব করলাম আবার—সেইসব হারানো গল্প
. যা আমরা এতাবত্কাল হারিয়ে এসেছি
হারিয়ে এসেছি বনে-প্রান্তরে পুরানো খাতার শ্লেটে রাসতলায়
নদীসমুদ্রে বেলাভূমিতে পথে ডালে-ডালে টকি হাউসে
হারিয়ে এসেছি ইস্টিশানে খেয়াঘাটে কলকাতার গ্রামে গ্রামে
কারুর চুলে কারুর মুখে চোখে কারুর অঙ্গীকারে—
হারিয়ে এসেছি হারিয়ে এসেছি হারিয়ে এসেছি – ফিরে পাবো না
. জেনে কখনো আর
কখনো ফিরে পাবো না সেইসব দিন যা ঝড়-বৃষ্টি-রৌদ্রে হেমন্তে ভরা
সেইসব বাল্যকালের নগ্নতার কান্নার পয়সা-পাবার-দিন
. ফিরে পাবো না আর
ফিরে পাবো না আর কাগজের নৌকা ভাসাবার দিন উঠানের
. ক্ষণিক সমুদ্রের কলরোলে
ফিরে পাবো না আর ফিরে পাবো না আর ফিরে পাবো না আর
সেইসব জ্যোত্স্নার ঝরাপাতার কথকতার দিন ফিরে পাবো না আর |
সমস্ত সকালবেলা ধরে কারা আমাদের সেইসব হারানো দিনগুলির
. কথা বলে গেলো
সকালবেলা তাই আমাদের কোনও কাজ হয়নি করা
আমরা অনন্তকাল এমনি চুপচাপ হারানো দিনের গল্প শুনছিলাম
. পুলিশের মতো
আমরা আমাদের কর্তব্য স্থির করছিলাম পুলিশের মতো
আমরা ভাবছিলাম সেইসব হারানো দিনগুলি ফিরে পাবার জন্য
. লাকি মিতাকে পাঠিয়ে দেখবো একবার
আমরা বসে বসে এলোমেলো উত্তাল সম্ভাবনার স্বপ্নে এমনি করে
. ব্যস্ত রাখছিলাম আমাদের
আমরা এমনি করে সময়ের একের পর এক চড়াই-উৎরাই হচ্ছিলাম পার
এমন সময় তারা বললো—‘গাড়ি’ এসে গেছে, উঠে পড়ো উঠে পড়ো –
এখানে থাকলে বাঘে খাবে তোমাদের’
আমরা তখনই লাফিয়ে লাফিয়ে অনেকে হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে
. ভবিষ্যৎ-গাড়ির দিকে চলে গেলাম
আমরা সকলেই এখানে বাঘের জিহ্বা এড়িয়ে গিয়ে ওখানের বাঘের
. জিহ্বার দিকে চলে গেলাম |
বৃষ্টি বৃষ্টি
জলে জলে জোনাকি
আমি সুখ যার মনে
তার নাম জানো কী ?
মেঘ মেঘ চুল তার
অভ্রের গয়না
নদী পাতা জল চোখ
ফুলসাজ আয়না।
বৃষ্টি বৃষ্টি
কঁচুপাতা কাঁচ নথ
মন ভার জানালায়
রাতদিন দিনরাত।
ঘুম নেই ঘুম নেই
ছাপজল বালিশে
হাঁটুভাঙা নোনা ঝিল
দুচোখের নালিশে।
বৃষ্টি বৃষ্টি
জলেদের চাঁদনি
দে সোনা এনে দে
মন সুখ রোশনি।