Bangla Love Poem
আজকে আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বাছাই করা Bangla Love Poem। আসা করছি আজকের এই পোস্টটা আপনাদের ভালো লাগবে।
New Bangla Love Poem
“যত দূরে যাওনা কেনো আছি
তোমার পাশে,
তাকিয়ে দেখো আকাশ পানে,
ঘুম যদি না আসে।
কাছে আমায় পাবে তুমি
হাত বাড়াবেই যেই,
ঘদি না পাও,
জানবে সেদিন আমি আর নেই।”
“ভালোবাসা তো যায়না টাকা
দিয়ে কেনা, ভালোবাসা তো
যায়না হীরা মুক্তা দিয়ে গড়া।
দুটি মনের আকুলতায় যে বন্ধন হয়,
তাকেই তো ভালোবাসা কয়।”
“আমি একটা দিন চাই
আলােয় আলােয় ভরা।
আমি একটা রাত চাই
অন্ধকার ছাড়া।
আমি একটা ফুল চাই
সুন্দর সুবাস ভরা।
আর একটা ভালাে বন্ধু চাই
সবার চেয়ে সেরা।”
“যত দূরেই যাইনা কেনো..
থাকবো তোমার পাশে।
যেমন করে শিশির ফোঁটা..
জড়িয়ে থাকে ঘাসে,
সকল কষ্ট মুছে..
দেবো মুখের হাসি,
হৃদয় থেকে বলছি..
তোমাকেই ভালোবাসি।”
“মনে পরে তোমাকে
যখন থাকি নীরবে,
ভাবি শুধু তোমাকে..
সব সময় অনুভবে,
সপ্নে দেখি তোমাকে..
চোখের প্রতি পলকে,
আপন ভাবি তোমাকে..
আমার প্রতি নিঃস্বাসে ও বিশ্বাসে।”
“চুপি চুপি বলছি তোমায়..
কাউকে বলো না।
এত সুন্দর লাগছে তোমায়..
হয় না তুলনা।
কি সুন্দর ঠোঁট তোমার..
কি সুন্দর আঁখি।
যে দেখবে সেই বলবে..
আমি তোমায় ভালোবাসি।”
“চোখের আড়াল হতে পারি
মনের আড়াল নয়।
মন যে আমার সব সময়..
তোমার কথা কয়।
মনকে যদি প্রশ্ন করো..
তোমার আপন কে ?
মন বলে, এখন
তোমার লেখা পড়ছে যে ।”
“তােমার জন্য রইলাে আমার..
স্বপ্নে ভেজা ঘুম ,
একলা থাকা শান্ত দুপুর..
রাত্রি নিঝুম,
তােমার জন্য রইলাে আমার..
দুষ্ট চোখের ভাষা,
মনের মাঝে লুকিয়ে রাখা ..
অনেক ভালোবাসা।”
“মিষ্টি মিষ্টি SMS দিয়ে
কেড়ে নিলে মন ,
তােমায় দেখতে ব্যাকুল বন্ধু..
আমার দুনয়ন ।
মন বসেনা কোনাে কাজে..
ভাবি গাে তােমারে ,
বল না বন্ধু কি জাদু
করলে তুমি আমারে।”
“চোখে চোখে কথা বল..
হৃদয়ে রাখ হৃদয় ।
মনে মনে ভাসি চল..
হয়ে যাক না প্রণয় ।
বুকের ভেতর তোমার জন্য..
মাতাল হাওয়া বয় ।
অনুভবে না বলা কথা
বুঝে নিতে হয় ।”
Bangla Love Poem for Wife
এক নতুনত্ব – জাহিদুল ইসলাম জীহাদ
দৃষ্টি পড়ে যখনি,তুমি বদলেছো প্রতিনিয়ত,
এক নতুনত্ব।
কোনটা যে তোমার আসল সৌন্দর্য
কোন রুপে আছে সত্য।
কখনো গহীন অরন্যে শানকি হাতে জল
দিচ্চ বৃক্ষের পুষ্পের গাত্রে।
কখনো যান্ত্রীক থেকে হস্ত নড়ছে,
কাউকে নামিয়ে স্কুলে।
কখনো দাঁড়িয়ে শির নত করে,
ছাড়াচ্চো গোটানো শাড়ি।
কখনো দর্পনে খুটিয়ে দেখছো,
শুভ্র দাঁত,গোলাপি ঠোঁট।
কখনো কেদারায় বসে,
বিলি কাটছো জটিল রুক্ষ চুলে।
কখনো বাথটাবে গোড়ালী ঘষচ,
সংগীত গেয়ে দুলে দুলে।
কখনো রুপচর্চা সিদুঁরের সাথে রঙ্গে
সাজাও দুই ঠোট।
কখনো চিরকুট লিখতে মহীয়ান,
খেয়ে যাও চিন্তার হোছট।
কখনো গোছাও মনিবদ্ব বাঁধা,
শাখা,পলা,নোয়ায়।
কখনো হস্তে নিয়ে গল্পের পুস্তক,
মানশিকতা নেই সেটা পড়াই।
কখনো কপাটে উদাসী মুখ,
চোখে মেলে আদিগন্ত দৃষ্টি।
গহীন রাত্রিতে নির্ভাসীতা তুমি,
আদিম আদমের সৃষ্টি।
বারি,নীর,পুষ্প,গাড়ী,কুন্তল,স্কুল,
চিকুর বাথটাব শাড়ী।
সিদুঁর,দর্পন,মাড়ি,চিরকুট,
কবিতায় চিন্তার পাড়ি।
মনিবদ্ব পালা,শাখা নোয়া,
এক এক তোমার কোয়া,
মিলনাত্বের শখ মিটায় না,
তোমার হাজারো গাত্র ছোয়ায়।
খরিদ করব লেন্স,তুলব মানব চিত্র,
এ কথা ভাবতে ভাবতে,
অন্তরীক্ষে চলে গেল চিরতরে মহূর্ত,
অচির সময়ে ঘূর্ণি আবর্তে।
জানা ছিল না অন্তর নয়নের,
আদি পিনহোল ক্যামেরা।
তুলেছো চিত্র,সোনালী একই,
নিয়ে তার বিবর্তমান চেহারা।
তাতে তোলা চিত্র একটাই
, কিন্তু যখনি তাতে লোচন পড়ে
হৃদয়ের মধ্যে কপাট খোলে আমার
কল্পনাকারী দুই আঁখি।
সে কল্পনারাজ্যে উজ্জীবিত তুমি,
খসিয়ে লজ্জার নির্মোক।
খুলেছো কলরাজ্য,মেলেছো ডানা
জ্ঞানশূন্য মুগ্ধ চোখে।
দেখতে দেখতে দেখি বদলায়
সেই চিত্রটি নীতি-নৃত্য,
সে সবেতে আছে নানান রুপ
সব রুপই লাগে চির সত্য।
প্রত্যাশা – আমিনুল ইসলাম
পুষ্প হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আমি,
নীল পরী রুপে হয়তো সামনে এসে দাড়াবে তুমি,
সব ভালবাসা প্রকাশ করতে না পারলেও
তোমাতেই বিভোর হব আমি।
নীলকষ্ট দূর করবো আমি মহাবীর,
মাখিয়ে দেবো তোমায় প্রেমের আবির(রং)।
তোমার মধুর কন্ঠ ধ্বনি ঝরবে যখন,
ভালবাসার ঝুড়িতে কুড়িয়ে তা আমি রাখবো তখন।
থাকবে দুজনার মাঝে রাগ,অভিমানের শত প্রহসন,
তোমার আমার মধুর সৃতিগুলো যত্বনে অন্তরে থাকিবে আজীবন।
তোমার কাজল-কালো চোখের পাতা,
জাগিয়ে তোলে আমার এ মনে প্রেমের উষ্ণতা।
তোমার ঐ কাজল কালো চোখ,
ঐটাতে তাকাতেই পাই আমি স্বর্গীয় সুখ।
তোমার প্রতি এ ভালবাসা শেষ হবে না মরিয়া,
আজীবন রাখিবো তোমায় অন্তরে বাধিয়া,
অভিমানের বেলায়
ভাঙ্গাবো অভিমান সাধিয়া সাধিয়া।
তোমাতে আমি বিভোর হব বারে বার,
যতদিন চলে এ শ্বাস-প্রশ্বাস।
আমার প্রথম বসন্তে তুমি – Azadlal Horejan
আমার প্রথম বসন্তে তুমি,
প্রথম মানুষ,
প্রথম বাড়িয়ে ছিলে হাত,
দিয়ে ছিলে ফুল,
আমার প্রথম র্বষায় তুমি,
প্রথম সাথী ।
মিলনে বাড়িয়ে ছিলে হাত,
দেখিয়ে ছিলে সুখস্বপ্ন,
আমার এ সুপ্ত হ্রদয়ে,
শুধু তোমার ভাবনা,
আমার প্রথম বসন্তে,
প্রথম প্রেম।
আর দুদিন পরেই বালিকা কড়া নেড়েছিল -তৌকির হোসেন
আর দুদিন পরেই বালিকা কড়া নেড়েছিল!
কড়াটির তপ্ত শ্বাস শীতল আবেগিক বালুকার
কণা ছড়িয়েছিলো দিগ্বিদিক।
নীল শার্টটার চটে যাওয়া অংশে ঘেঁষে যাওয়া শরীরের মিশে যাওয়া গন্ধ লেপ্টে আছে।
যে গন্ধে মেশা জুলাইয়ের সকালের রোদ, লালখানের ধুলো আর ঘামে ভেজা কপাল।
যে গন্ধে মেশা দুজনের আঙ্গুল, ঘষতে থাকে একে ওকে।
মাঝে মাঝে।
বারে বারে।
নষ্টালজিয়ার দীর্ঘ কাটা ফিল্মের সেই দীর্ঘশ্বাসময় ইতিহাস
আর দুটোদিন পরেই রচিত হয়েছিল।
সেই ইতিহাস ছিলো কয়েকটি বিকেল,
কয়েকটি সন্ধ্যা।
মগপুকুরের রাতের নির্জন পাড়।
যে রাতে আমিও একাত্মতায় মিশে ছিলাম ফের কিছু কথা বলা ব্যস্ত লোকগুলোর সাথে।
ওপার থেকে ভেসে এসেছিল কিছু রুদ্ধশ্বাস,
হাঁপানি রোগের টান, জড়িয়ে থাকে ভালোবাসা, অন্ধ নেশা, ছায়াজলের বিদিশা।
অকস্মাৎ পুকুরে আন্দোলন, ফিল্মের কাটা পড়া দেহ, প্রেমপত্রের সাহিত্য-
জেগে থাকে দুদিনের তরে, স্মৃতিতে নিরলস
যে দুদিন পরেই রচিত হয়েছিলো একটি দীর্ঘশ্বাসের ইতিহাস!
তুমি ভালো আছ?
ভালো আছে তোমার ইতিহাস?
ঋতুরাগ -বিবেক রঞ্জন বসু
মাথার ওপর সূর্য ঝরায় লোহিত অভিমান,
তোমার প্রখর রূপের ছটায় সেও বুঝি আজ ম্লান।
আগুন-রাঙ্গা আলতা পায়ে দাঁড়ালে আলসেতে,
এসেছিলাম অনেকটা পথ তোমার দেখা পেতে।
চুপ পাখিরা ক্লান্ত পাখায় এঁকেছে রোদ্দুর,
শুকনো ঘাসে সুর তুলে যায় খেয়ালী নুপুর।
ইচ্ছে-নদীর বাতাসে তাই দারুন উচাটন,
সেদিন তোমার নুপুরেতেই হারিয়েছিলাম মন।
তুমি আমি আজ মুখোমুখি- তানজিলা ইয়াসমিন
তখনো ভোরের আলো আকাশের বুক চিড়ে পৃথিবীর বুকে উঁকি দেয়নি:
সূর্য তার ভালোবাসা নিয়ে মেঘের বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে,
প্রকৃতি হয়তো কিছু ঘটার অপেক্ষায় সমীরণের ঘনঘটা দিয়ে যাচ্ছে:
এমন আলো আঁধারির মিষ্টি আলোয় দুই তৃষ্ণার্ত-
হৃদয়ের ভোরের বুকে চুপিচুপি পাশাপাশি হেঁটে চলা,
সাদা বলাকার দল দেখো কি ভালোবাসার ছোঁয়ায় উড়ে চলেছে,
শেষ কবে দুজন এভাবে পাশাপাশি হেঁটে গিয়েছে
এখন আর স্মৃতিতে তা ছায়া হয়ে আসে না!
ভালোবাসার তীব্রতা বুঝি এতটাও মাতাল হয় :
এই ভোর না হওয়া মিষ্টি আলোতে সন্তর্পনে
দুজনের কি আবেগী মুহূর্তের নীরব প্রকাশ,
ও চোখ! আজ তুমি আলোতে হারাবে না:
আজ আমি দেখবো তাকে
কতদিন কতরাত কত বছরের অপেক্ষার ক্ষণ আজ বাস্তব!
তুমি আমি আজ মুখোমুখি- দেখো এই আলো আঁধারি আজ
আমাদের তার হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে বরণ করেছে:
ভালোবাসা চলনা আজ আমরা দুজন এই আলো আঁধারির মাঝে-
আমাদের তৃষিত ভালোবাসা সমর্পন করে আবার নতুন আলোর পথে হেঁটে যাই,
আমার খোলা চুলের ঘ্রাণের মাঝে তোমার সুপ্ত সুখ গুলো তুমি খুঁজে নেবে!
ভাবনার সুখ দুয়ার গুলো দেখো পুবের আলোর সাথে সাথে কেমন উজ্জ্বল হয়ে গেছে ,
তোমার নীরব হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে একটি কথা বলা-
বলো কখনো এ হাত ছেড়ে যাবে না ওই দূর নীলিমার মায়ার মতো,
বলো যাবেনা- তোমাতে ওই আলো আঁধারির মাঝে নিজেকে সমর্পন !
Bangla Love Poem for Girlfriend
বিবাহিতাকে – জয় গোস্বামী
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি আমার সামনে দাড়ালেই আমি
তোমার ভিতরে একটা বুনো ঝোপ দেখতে পাই।
ওই ঝোপে একটা মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া আছে।
অনেকদিন ধরে আছে। কিন্তু আশ্চর্য যে
এই মৃতদেহ জল, বাতাস, রৌদ্র ও সকলপ্রকার
কীট-বীজাণুকে প্রতিরোধ করতে পারে। এরপচন নেই।
বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না।
রাতে আলো বেরোয় এর গা থেকে।
আমি জানি, মৃতদেহটা আমার।
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, এই জারিজুরি এবার ফাঁস হওয়া প্রয়োজন।
আর তা হবেও, যেদিন চার পায়ে গুঁড়ি মেরেগিয়ে
পা কামড়ে ধরে, ওটাকে, ঝোপ থেকে
টেনে বার করব আমি।
কথা আছে -সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
বহুক্ষণ মুখোমুখি চুপচাপ, একবার চোখ তুলে সেতু
আবার আলাদা দৃষ্টি, টেবিলে রয়েছে শুয়ে
পুরোনো পত্রিকা
প্যান্টের নিচে চটি, ওপাশে শাড়ির পাড়ে
দুটি পা-ই ঢাকা
এপাশে বোতাম খোলা বুক, একদিন না-কামানো দাড়ি
ওপাশে এলো খোঁপা, ব্লাউজের নীচে কিছু
মসৃণ নগ্নতা
বাইরে পায়ের শব্দ, দূরে কাছে কারা যায়
কারা ফিরে আসে
বাতাস আসেনি আজ, রোদ গেছে বিদেশ ভ্রমণে।
আপাতত প্রকৃতির অনুকারী ওরা দুই মানুষ-মানুষী
দুখানি চেয়ারে স্তব্ধ, একজন জ্বলে সিগারেট
অন্যজন ঠোঁটে থেকে হাসিটুকু মুছেও মোছে না
আঙুলে চিকচিকে আংটি, চুলের কিনারে একটু ঘুম
ফের চোখ তুলে কিছু স্তব্ধতার বিনিময়,
সময় ভিখারী হয়ে ঘোরে
অথচ সময়ই জানে, কথা আছে, ঢের কথা আছে।
হঠাৎ দেখা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন।
আগে ওকে বারবার দেখেছি
লালরঙের শাড়িতে
দালিম ফুলের মতো রাঙা:
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে।
মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব সর্ষেখেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা:
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।
হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার।
সমাজবিধির পথ গেল খুলে,
আলাপ করলেম শুরু —
কেমন আছ, কেমন চলছে সংসার ইত্যাদি।
সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের দিনের ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,
কোনোটা বা দিলেই না।
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় —
কেন এ-সব কথা,
এর চেয়ে অনেক ভালো চুপ করে থাকা।
আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে।
এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে।
মনে হল কম সাহস নয়:
বসলুম ওর এক-বেঞ্চিতে।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে,
*কিছু মনে কোরো না,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার।
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই:
দূরে যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই।
তাই যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে।
সত্য করে বলবে তো?
আমি বললেম, বলব।
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
*আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে,
কিছুই কি নেই বাকি।*
একটুকু রইলেম চুপ করে:
তারপর বললেম,
*রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।*
খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম না কি।
ও বললে, থাক্, এখন যাও ও দিকে।
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে:
আমি চললেম একা।
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে – রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।
তেমনি তোমার নিবিঢ় চলা, মরমের মূল পথ ধরে।
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক , খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ।
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া, ভিতরের নীল বন্দরে।
ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।
দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটারে।
আমার ভিতরে বাহিরে………
প্রেমিক – জয় গোস্বামী
তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে গেছে।
আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতেদিচ্ছে না।
তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে সারাদিন।
এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …
অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!
তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।
এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …
অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!
ছন্দরীতি– মহাদেব সাহা
তোমাদের কথায় কথায় এতো ব্যকরণ
তোমাদের উঠতে বসতে এতো অভিধান,
কিন্তু চঞ্চল ঝর্ণার কোনো ব্যাকরণ নেই
আকাশের কোনো অভিধান নেই, সমুদ্রের নেই।
ভালোবাসা ব্যাকরণ মানে না কখনো
হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনো সংবিধান নেই
হৃদয় যা পারে তা জাতিসঙ্ঘ পারে না
গোলাপ ফোটে না কোনো ব্যাকরণ বুঝে।
প্রেমিক কি ছন্দ পড়ে সম্বোধন করে?
নদী চিরছন্দময়, কিন্তু সে কি ছন্দ কিছু জানে,
পাখি গান করে কোন ব্যাকরণ মেনে?
তোমারাই বলো শুধু ব্যাকরণ, শুধু অভিধান!
বলো প্রেমের কি শুদ্ধ বই, শুদ্ধ ব্যাকরণ
কেউ কি কখনো সঠিক বানান খোঁজে প্রেমের চিঠিতে
কেউ কি জানতে চায় প্রেমালাপ স্বরে না মাত্রায়?
নীরব চুম্বনই জানি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ছন্দরীতি।
Best Bengali Love Poem
প্রেমিক জনের চিঠি – শ্রীজাত
ওই কথা কি এভাবে কেউ বলতে পারে?
হঠাৎ করে, সিড়ির বাঁকে, অন্ধকারে
নিশ্বাস নাক গন্ধ পোহায়, চনমিয়া…
ঘুপচি মতাে মুঠোর ভেতর একলা টিয়া
ছটফটাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। চাই না উড়ান?
ঠাকুর ঘরের চাল থেকে পাহাড়চূড়া?
ঠোটের উপর ঘাম মুছে নাও। ডাকছে নীচে।
নখের ঘরে কেটেছে হাত, ওষুধ মিছে।
বুকটুকুনির ওঠানামায় ধুকপুকুনি
জড়িয়ে নেওয়ার মন হলে কে ছাড়ত শুনি?
কিন্তু এখন সবটা ইচ্ছে করছে না যে
হয়তো হঠাৎ উড়ে টিয়া, ভিড়ের মাঝে…
এইটুকু তো অতৃপ্তি দাও প্রেমিক জনে,
একটা চুমু না-খাওয়া থাক, এই জীবনে!
কটি মেয়ের জন্য – রুদ্র গোস্বামী
একা ফুটপাথ
আলো ককটেল
ভিজে নাগরিক রাত পদ্য।
তুই হেঁটে যাস
কাঁচ কুয়াশায়
জল ভ্রূণ ভাঙা চাঁদ সদ্য।
আমি প্রশ্ন
তুই বিস্ময়
চোখ চশমার নীচে বন্ধ।
ঠোঁট নির্বাক
চাওয়া বন্য
আমি ভুলে যাই দ্বিধা দ্বন্দ্ব।
জাগা রাত্রি
ঘুম পস্তায়
মোড়া রূপকথা পিচ রাস্তা
পোষা স্বপ্ন
ছিঁড়ে ছারখার
প্রিয় রিংটোন লাগে সস্তা।
তুই সত্যি
আরও সত্যি
তুই শিশিরের কুঁড়ি পদ্ম।
বাকি মিথ্যে
সব মিথ্যে
চেনা চার দেয়ালের গদ্য।
গোপন প্রিয়া – কাজী নজরুল ইসলাম
পাইনি বলে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রাণি,
মধ্যে সাগর, এ-পার ও-পার করছি কানাকানি!
আমি এ-পার, তুমি ও-পার,
মধ্যে কাঁদে বাধার পাথার
ও-পার হতে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্ছানি,
আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁওয়াখানি।
নাম-শোনা দুই বন্ধু মোরা, হয়নি পরিচয়!
আমার বুকে কাঁদছে আশা, তোমার বুকে ভয়!
এই-পারী ঢেউ বাদল-বায়ে
আছড়ে পড়ে তোমার পায়ে,
আমার ঢেউ-এর দোলায় তোমার করলো না কূল ক্ষয়,
কূল ভেঙেছে আমার ধারে-তোমার ধারে নয়!
চেনার বন্ধু, পেলাম না ক জানার অবসর।
গানের পাখী বসেছিলাম দুদিন শাখার পর।
গান ফুরালো যাব যবে
গানের কথাই মনে রবে,
পাখী তখন থাকবো না ক-থাকবে পাখীর ঘর,
উড়ব আমি,-কাঁদবে তুমি ব্যথার বালুচর!
তোমার পারে বাজল কখন আমার পারের ঢেউ,
অজানিতা! কেউ জানে না, জানবে না ক কেউ।
উড়তে গিয়ে পাখা হতে
একটি পালক পড়লে পথে
ভুলে প্রিয় তুলে যেন খোঁপায় গুঁজে নেও!
ভয় কি সখি? আপনি তুমি ফেলবে খুলে এ-ও!
বর্ষা-ঝরা এমনি প্রাতে আমার মত কি
ঝুরবে তুমি একলা মনে, বনের কেতকী?
মনের মনে নিশীথ-রাতে
চুমু দেবে কি কল্পনাতে?
স্বপ্ন দেখে উঠবে জেগে, ভাববে কত কি!
মেঘের সাথে কাঁদবে তুমি, আমার চাতকী!
দূরের প্রিয়া! পাইনি তোমায় তাই এ কাঁদন-রোল!
কূল মেলে না,-তাই দরিয়ায় উঠতেছে ঢেউ-দোল!
তোমায় পেলে থামত বাঁশী,
আসত মরণ সর্বনাশী।
পাইনি ক তাই ভরে আছে আমার বুকের কোল।
বেণুর হিয়া শূন্য বলে উঠবে বাঁশীর বোল।
বন্ধু, তুমি হাতের-কাছের সাথের-সাথী নও,
দূরে যত রও এ হিয়ার তত নিকট হও।
থাকবে তুমি ছায়ার সাথে
মায়ার মত চাঁদনী রাতে!
যত গোপন তত মধুর-নাই বা কথা কও!
শয়ন-সাথে রও না তুমি নয়ন-পাতে রও!
ওগো আমার আড়াল-থাকা ওগো স্বপন-চোর!
তুমি আছ আমি আছি এই তো খুশি মোর।
কোথায় আছ কেমনে রাণি
কাজ কি খোঁজে, নাই বা জানি!
ভালোবাসি এই আনন্দে আপনি আছি ভোর!
চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর!
রাত্রে যখন এক্লা শোব-চাইবে তোমার বুক,
নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ,
দুখের সুরায় মস্ত্ হয়ে
থাকবে এ-প্রাণ তোমায় লয়ে,
কল্পনাতে আঁকব তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ!
ঘুমে জাগায় জড়িয়ে রবে, সেই তো চরম সুখ!
গাইব আমি, দূরের থেকে শুনবে তুমি গান।
থামবে আমি-গান গাওয়াবে তোমার অভিমান!
শিল্পী আমি, আমি কবি,
তুমি আমার আঁকা ছবি,
আমার লেখা কাব্য তুমি, আমার রচা গান।
চাইব না ক, পরান ভরে করে যাব দান।
তোমার বুকে স্থান কোথা গো এ দূর-বিরহীর,
কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির।
গোপন তুমি আসলে নেমে
কাব্যে আমার, আমার প্রেমে,
এই-সে সুখে থাকবে বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর?
দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না-ই বাঁধিলাম নীড়!
বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান,
মনে আমায় করবে না ক-সেই তো মনে স্থান!
যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে
করবে মনে, সে-দিন প্রিয়ে
ভোলার মাঝে উঠবে বেঁচে, সেই তো আমার প্রাণ!
নাই বা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেলে গেলাম গান!
হৃদয়ের ঋণ – হেলাল হাফিজ
আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,
খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলে
বেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর
বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাত
গচ্ছিত রেখে লাজুক দুহাতে আমি
কাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাত
অযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী,
একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদি
অমার্জনীয় অপরাধ হয় হোক,
ইতিহাস দেবে অমরতা নিরবধি
আয় মেয়ে গড়ি চারু আনন্দলোক।
দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
আয় না পাষাণী একবার পথ ভুলে
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ।
তুই কি আমার দুঃখ হবি – আনিসুল হক
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।
তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?