শাড়ি নিয়ে কবিতা গুলো লিখেছেন আমাদের খুব আপন একজন বোন, উনার নাম হলো সাকিসেফ উম্মে…
গান্ধারীকে চিঠি – প্রদীপ বালা
শ্রীচরণেষু,
আমাকে আপনি চিনবেন না । হয়তো বা চিনবেন ।
আপনার অনেক পরে আমার জন্ম । তবু
আরও দশজনের মতো আমিও আপনার কথা জানি
জানি আপনার দুঃসাহসিক পতিব্রতা স্ত্রী হয়ে ওঠার কথা
আপনার গুণধর ছেলেদের কথা… আরও যা যা
জানা প্রয়োজন মোটামুটি সবই জানি
একসময় আপনার কথা পড়তে পড়তে অভিভূত হয়ে গেছি
সে অনেককাল আগেকার কথা তারপর
ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে
অনেক ঝড় বয়ে গেছে আমার শরীর বেয়েও
আর আজ যে শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আছি
এই শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মেয়েদের
দুরবস্থার জন্য আপনাকেই দায়ী করতে ইচ্ছে করছে
সেদিন আপনার অন্ধ স্বামী দেখে নিজেও
চোখে কাপড় বেঁধে অন্ধ সেজে বসলেন
খুবই মহত্ততার পরিচয় দিয়েছেন আপনি
কিন্তু যে ভুলটা করেছেন তার মাশুল যে
সমস্ত ভাবীকাল জুড়ে আমাকে বইতে হচ্ছে
তার জবাব কে দেবে ?
আপনার একশো সন্তান । একটাকেও
মানুষ তৈরি করেননি, তাঁদের কোন অন্যায়ের
প্রতিবাদ করেননি মা হয়ে । দ্যুত সভায়
সর্বসমক্ষে দ্রৌপদীর বিবস্ত্রা হবার কথা
শুনেও কিছু বলেননি । আপনার স্বামী
অন্যায়ের পথে চলেছে জেনেও তাঁকে সেই পথ থেকে
নিরস্ত করেননি—
কীসের মহীয়সী আপনি ?
একজন নারী হয়েও নারীর সন্মান রক্ষা করলেন না
আমি বলব সে সন্মানহানি আপনারও হয়েছে !
আজ আপনার সেই ছেলেরা
সেই একশো ছেলে এখন
একশো কোটি ছাড়িয়ে গেছে
যেখানে সেখানে তাঁরা বোমাবাজি করছে
গুলি ছুঁড়ছে (আপনাদের সময়ের তীর ধনুকের আধুনিক সংস্করণ)
রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে, দিনে-দুপুরে
রাতের আঁধারে শত শত দ্রৌপদীর বলাৎকার করছে
আর এই এতো কিছুর মাঝেও
আজও আপনি চোখে কাপড় বেঁধে থাকবেন ?
আপনি নয় রাজমাতা ছিলেন
বিপদের আঁচড় পাননি কোনদিনও
তাই সব কিছু সইতে পেরেছেন
মহান পতিব্রতা হতে পেরেছেন
কিন্তু আমি ? আমার মেয়েরা ? কতকাল
কতকাল সইতে হবে ?
কতকাল কাপড় বেঁধে থাকবো চোখে
আর অন্ধের অভিনয় করে যাবো ?
গান্ধারী দেবী
আপনার নামে আজও মেয়েরা
মাথায় হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করে
আপনার আদর্শ নিয়ে বাঁচতে গিয়ে
পতিব্রতা হতে গিয়ে হাজার হাজার মেয়ে বৌ
বলি হয়ে গেছে যাদের হাতে
তাঁরা আর কেউ নয়
আপনারই নির্লজ্জ সন্তান
জানিনা সেই সময় আপনার অনুশোচনা
হত কিনা । রাত্রে কাঁদতেন কিনা ।
চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ত কিনা বেদনায়
জানি না তাও…
কিন্তু আমি কাঁদি
কাঁদতে তো আপনারাই শিখিয়েছেন
শিখিয়েছেন মুখ বুজে সহ্য করতেও
কিন্তু সব সহ্যের সীমা যেদিন ছাড়িয়ে যাবে
সেদিন প্রতিবাদের পথ একটাই খোলা থাকবে
কড়িকাঠ থেকে ঝুলে পড়ার প্রতিবাদ
গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরানোর প্রতিবাদ
গলায় কলসী বেঁধে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রতিবাদ…
তাও তো আপনারাই শিখিয়ে আসছেন
. যুগ যুগ ধরে…
জানি না এ চিঠি আপনার কাছে পৌঁছবে কিনা
নাকি মাঝপথে দুর্যোধন দুঃশাসনের মতো
লোকের হাতে পড়ে বিবস্ত্রা হয়ে যাবে কিনা অথবা
আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে কিনা
জানি না তাও ।
তবু লিখলাম কারণ প্রয়োজন পড়ে গেল
সেইসব মেয়েগুলোর কথা ভেবে যারা
আমার মতন আপনাকে আজও বিশ্বাস করে
যাইহোক ভালো থাকবেন ।
চিঠি পেলে অন্তত একবার পড়ে দেখবেন ।
ইতি—
ভারতবর্ষ